নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী বাঁকুড়ার “ষাঁড়েশ্বর” এবং “শৈলেশ্বর” মন্দির বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে ডিহর গ্রামে পাশাপাশি অবস্থিত বহু শতাব্দী প্রাচীন দুই মন্দির ষাঁড়েশ্বর ও শৈলেশ্বর। দুই মন্দিরেরই দেবতা শিব। ডিহর গ্রামের নামটিই হয়েছে ‘দ্বিহর’ থেকে, অর্থাৎ দুটি শিব ষাঁড়েশ্বর ও শৈলেশ্বরের উপর ভিত্তি করে। দ্বারকেশ্বর ঘেঁষা সেই অতি প্রাচীন মন্দির দু’টি ঘিরে রয়েছে এলাকাবাসীর আবেগ।
ল্যাটেরাইট পাথরের তৈরি এই মন্দির রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরাকীর্তি। মন্দির নির্মাণ করেন তৎকালীন মল্লরাজা পৃথ্বীমল্ল। সংস্কারের জন্য আপাতত ষাঁড়েশ্বর মন্দিরের নিত্যপুজো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পাশের শৈলেশ্বর মন্দিরে পুজো চালু রয়েছে। দুটি মন্দিরের চূড়াই ধ্বংস হয়ে গেছে বহুদিন আগে। কবে মন্দির দুটি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে নানা মত আছে। তবে আর্কিওলজি বিভাগের স্পুনার সাহেবের মতে মন্দিরে নাকি প্রাচীন প্রতিষ্ঠালিপি ছিল, পরে তা অপসৃত হয়েছে। তাঁর মতে, মল্লরাজ পৃথ্বী মল্ল চতুর্দশ শতাব্দীতে এই মন্দিরদুটি নির্মাণ করিয়েছিলেন।
দুটি মন্দিরেই বেশকিছু ভাস্কর্য লক্ষ করা যায়। শৈলেশ্বর মন্দিরে একটি বংশীবাদনরত কৃষ্ণের মূর্তি আছে, যা চতুর্দশ শতকে এই অঞ্চলের ধর্মীয় চেতনাকে তুলে ধরে। ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করে বাবা ষাঁড়েশ্বর এবং শৈলেশ্বর হয়ে উঠেছেন এলাকার ত্রাতা।প্রতি সোমবার বাবাকে পুজো দিতে ঢল নামে ভক্তদের। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জানান,বাবা ষাড়েশ্বর ও শৈলেশ্বরের রয়েছে অপার করুণা। তিনি নাকি খালি হাতে ফেরার না। যে যা মন থেকে চায় সে তা নিয়ে ফিরে যায়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অলৌকিক ইতিহাসও।
সোমবারের পাশাপাশি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিনে যেমন শ্রাবন মাস থেকে শুরু করে শিবরাত্রিতে এই মন্দিরে নামে ভক্তদের ঢ্ল। পুরাণ অনুযায়ী, শিবরাত্রির দিন ভগবান শিব-পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। এইদিন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সারা দিন উপোস থেকে ভোলেবাবার পুজো করেন।তাই এই অঞ্চলের পাশাপাশি দূর দূরান্ত থেকে শিবরাত্রির দিন বাবা ষাঁড়েশ্বর এর মাথায় ডাব,দুধ গঙ্গা জল ঢেলে পুজো দিয়ে শিবরাত্রি ব্রত শেষ করেন ভক্তরা। বর্তমানে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খায়ের উদ্যোগে ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় মন্দিরটিকে পুনরায় নির্মাণ কার্য চালানো হচ্ছে। অবশ্য এই দুটি শিবমন্দিরই নয়, ডিহর গ্রামটিই একটি প্রত্নক্ষেত্র। মন্দির সংলগ্ন ও গ্রামের বেশকিছু জায়গায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খননকাজ হয়েছে। তা থেকে বহুপ্রাচীন এক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানান এবং লাইক করুন, সাবস্ক্রাইব করুন বেঙ্গল ফ্যাক্টস।