নিউজ ডেস্ক: বলাহয় কুম্ভ চলাকালীন মানুষ এখানে অমৃতের সমান লাভ পেয়ে থাকে। আসলে ধরা হয় অমৃত এমন একটি তরল যা পান করলে মানুষ মৃত্যুকে জয় করে অর্থাৎ শারীরিক ভাবে সমস্ত রোগ থেকে মুক্ত হয়।
কিন্তু কুম্ভ শুধু শারীরিকই নয় তার সঙ্গে সঙ্গে আত্মিক উন্নতিও ঘটায় ।
জোতিষশাত্র অনুসারে যখন কুম্ভ মেলা হয় তখন গ্রহ নক্ষত্রের এমন একটি অবস্থানে থাকে যা কুম্ভকে আরো বিশেষ করে তোলে ।
ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান অর্থাৎ গঙ্গা, যমুনা, স্বরসতী-র মিলন স্থলে স্নান । যোগীরা বলেন আমাদের শরীরের মধ্যেও ঠিক এমনি তিনটি নারী আছে
ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না যা এই তিনটি নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয় । স্বরসতী নদী যেমন অদৃশ্য থাকে তেমনি সুষুমা নাড়িও ।
এছাড়া গঙ্গার তো আলাদা মহিমা আছেই, যখন হিমালয় থেকে নেমে আসে তখন বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু,গাছের শেকড় ও রত্নর উপর দিয়ে এই জল প্রবাহিত হয়, গঙ্গার মধ্যে এমন কিছু শৈবাল জন্মায় ও কিছু যোগীরা গঙ্গার নিচে এক ধরণের কুম্ভক করে এই সমস্ত কিছুর উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে গঙ্গার জলে পোকা ধরে না ।
আর প্রয়াগে তো তিনটি নদী ফলে এর গুরুত্ব ও মহিমা অনেক গুন বেড়ে যায় । এই তিন নদীর জলে স্নান করলে আমাদের শরীরের তিনটি নারীর শোধন হয় ।
কুম্ভে এমনও যোগী মহাপুরুষ গণ আসেন যারা বহু বছর মানুষ চোঁখের আড়ালে থেকে সাধনা করেন । ফলে তাদের যে পজেটিভ উর্জা তা এই স্থানের মাহাত্ব্য আরো বাড়িয়ে দেয় । চারিদিকে মন্ত্র উচ্চারণ, যজ্ঞ এতে এক অদ্ভুত স্বর্গীয় বাতাবরণ সৃষ্টি করে ।
ফলে শারীরিকের সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক উন্নতিও ঘটে ।
কুম্ভে সবথেকে বেশী পুণ্য হয় স্নান ও দানে : প্রথমত একদিকে যেমন বাহ্যিক স্নানে দেহ পরিষ্কার হয় তেমনি আত্মিক স্নানে আত্মার উপরে যে ময়লা জমে থাকে তা পরিষ্কার হয় ।
দ্বিতীয়ত দানকে এই স্থানে বিশেষ মাহাত্ব্য দেওয়া হয়, ফলে একাংশের ধনী ব্যক্তিরা এখানে আসে তাদের উপার্জিত অর্থ দান করতে ।
হাজারে হাজারে গ্রহীতা বসে থাকে দান নেবার জন্য। এই দানের ও আবার নীতি আছে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অংশ আছে ফলে
গ্রহিতা দান গ্রহণ করে দানি ব্যাক্তি কে কৃতার্থ করছে । তাই দান করে তাকে ঈশ্বর রূপে প্রণাম করা হয় ।
ফলে একদিকে যেমন সাধু মহাত্মা গণ তাদের কঠর তস্যা অর্জিত ফল সাধারণ মানুষের কল্যানে নির্দ্বিধায় দান করে অন্য দিকে ধনী আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরাও নির্ধায় তাদের অর্থ দান করে ফলে এক অদ্ভুত মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় কুম্ভ মেলা |
মহাকুম্ভকে কেন্দ্র করে যে অস্থায়ী নগর গড়ে উঠেছিল যেখানে প্রায় ৬৫ কোটি মানুষ উপস্থিত হয়েছে প্রশাসনে কাছে সবথেকে বড় চ্যালেজ ছিল এই মানুষ গুলোর জন্য শুদ্ধ পানীয় জল ও তাদের বর্জ্য পরিষ্কার করে পরিবেশকে পরিষ্কার রাখা। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা , থাকার জায়গা ও জরুরি ডাক্তারি পরিষেবা ও খাবারের ব্যবস্থা । কিছু অপ্রীতিক ঘটনা ছাড়া যোগী প্রশাসন খুব সুন্দর ও সুষ্ঠ ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছে ।
জনসমাগম ও অর্থনীতি
* প্রায় ৬৫ কোটি+ তীর্থযাত্রী ও বিশাল বাজার তৈরি।
* ৩৭,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় ও ৩ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব।
সরকারি বাজেট ও পরিকাঠামো
* ৬,৯৯০ কোটি টাকা বাজেট ও ৫৪৯টি অবকাঠামো প্রকল্প।
* ১.৬ লক্ষ তাঁবু, ২১৮টি হোটেল, ২০৪টি অতিথিশালা, ৯০টি ধর্মশালা তৈরি।
বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক খাত
পূজার সামগ্রী – ৫,০০০ কোটি টাকা আয়।
দুগ্ধজাত পণ্য – ৪,০০০ কোটি টাকা আয়।
ফুল ও প্রসাধনী – ৮০০ কোটি টাকা আয়।
আতিথেয়তা – বিলাসবহুল হোটেল থেকে ৬,০০০ কোটি টাকা আয়।
খাদ্য ও পানীয় – প্রধান ব্র্যান্ড ও ফুড কোর্ট ১০০-২০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ফুড কোর্ট ও চেইন রেস্তোরাঁ ১২-১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
১. প্রয়াগরাজ ছাড়াও অযোধ্যা, বারাণসী ও সংলগ্ন শহরগুলিতে ব্যবসা বেড়েছে।
২. পরিকাঠামো উন্নয়ন: উত্তরপ্রদেশ সরকার কুম্ভ উপলক্ষে সড়ক, সেতু, পানীয় জলসহ পরিকাঠামো উন্নয়নে ৭৫০০ কোটি টাকা খরচ করেছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র প্রয়াগরাজেই ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
মহাকুম্ভ শুধুমাত্র ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি আত্মিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের এক বিশাল ক্ষেত্র।
•আধ্যাত্মিক উন্নতি ও দানের মাধ্যমে এটি মানবিক ঐক্যের এক মহা মিলনক্ষেত্র।