নিউজ ডেস্ক: ৯৩ বছরে এই প্রথমবার। একটি শহরে আন্তর্জাতিক উড়ান নামছে। একদিনে বিমান যাতায়াত করছে ২৩৬টি। মাত্র একদিনে বিমান যাত্রীর সংখ্যা ছাড়াচ্ছে ২৪,৫০০। তখন যে শহর সাক্ষী থেকেছিল বিমান চলাচলের প্রথম যুগের, স্বাধীনতার আগে থেকে যে বিমানবন্দর থেকে বিমান উড়ে যেত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, সেখানে আজ শূন্যতার ঘনঘটা। আন্তর্জাতিক উড়ানের দিন শেষ সেখানে।
বুঝতে পারছেন, কোন দুই বিমানবন্দরের কথা বলছি আমরা? কোন দুই বিমানবন্দরের কথা বলা হচ্ছে এখানে?
প্রথমটি প্রয়াগরাজ। স্বপ্নের উড়ান কুম্ভে। উত্তরপ্রদেশের যে শহরে এবার মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানেই এবার সর্বকালের নজির সৃষ্টি হয়েছে। আর যোগী রাজ্যে যখন এই রেকর্ড তৈরি হয়েছে, তখন মমতা রাজ্যে নাভিশ্বাস উঠছে। দুঃস্বপ্নের ডানা যেন কলকাতা বিমানবন্দরে। আমরা আসব কলকাতার কথায়। তবে তার আগে তুলে ধরব প্রয়াগ রাজের প্রসঙ্গ। মহাকুম্ভের কথা।
আমরা সবাই জানি, এবার মহাকুম্ভে প্রায় অর্ধেক ভারত হাজির হয়েছিল। মেলা শুরু হয়েছিল ১৩ জানুয়ারি। শেষ হল শিবরাত্রির দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি। দেড় মাস ধরে অমৃত স্নান করেছেন ৬৬ কোটির বেশি মানুষ। যা আমেরিকার জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এই সময়ই প্রয়াগরাজে বিমান চলাচল করেছে দৈনিক ৭০টি। গড়ে আগে এখানে ৪০টি বিমান ওঠানামা করত। স্বাভাবিক সংখ্যায় যা দ্বিগুণ। এরমধ্যে ২১শে ফেব্রুয়ারি সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ওইদিন ২৩৬টি বিমান ওঠানামা করেছে এই বিমানবন্দরে।যাত্রী সংখ্যা ২৪ হাজার ৫১২।
এই কদিনে অমৃত স্নান করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তো এসেইছেন, এসেছেন দেশের বিশিষ্টি শিল্পপতিরা। পুণ্যস্নান করতে জড়ো হয়েছেন বলিউডের বিশিষ্ট নায়ক নায়িকারা।
প্রয়াগরাজ বিমানবন্দরে আর একটি ইতিহাস তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দরের ৯৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এখানে কোনও আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণ করেছে। এই বিমানে হাজির হয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের লরেন্স পাওয়াল জব, স্টিভ জোবসের স্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা। সকলেই কুম্ভের এই ব্যবস্থাপনায় মুগ্ধ। সবমিলিয়ে দুনিয়া জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে এই তীর্থক্ষেত্র। সরকারি হিসেব বলছে, কুম্ভ মেলা আয়োজন করে সরকারের লাভ হয়েছে ৪ লক্ষ কোটি টাকা।
ভাবা যায়! অথচ এই মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গালমন্দ করতে ব্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ বছর হয়ে গেলো তিনি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছেন। অথচ কি বেহাল দশা কলকাতা বিমানবন্দরের। একসময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিমান ছুঁয়ে যেত এই কলকাতা বিমানবন্দর। কেন্দ্রের কল্যাণে সেই এয়ারপোর্টের ভোল বদলেছে। কিন্তু রাজ্যের আর্থিক দুরবস্থার জন্য নেই কোনও সরাসরি আন্তর্জাতক উড়ান। আন্তর্জাতিক উড়ান চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি জানাতে হচ্ছে টাটা গ্রুপের কর্ণধারের কাছে। যাদের সংস্থাকে সিঙ্গুর থেকে তাড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর্জি জানালেও এখনও চিঁড়ে ভেজেনি।
ফলে বলাই যায়, সনাতন ধর্মের ধারাকে বজায় রেখে মহাকুম্ভের আয়োজন করে একটা শহর যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সারা বিশ্বের নজর কেড়ে নিচ্ছে, তখন নেতিবাচক রাজনীতিতে আবদ্ধ থেকে কলকাতাকে পিছিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। ত্রিবেণী সঙ্গমে অর্ধেক দেশকে জড়ো করে হাসছে প্রয়াগরাজ বিমানবন্দর। আর গঙ্গার তীরে বসে ভাঙনের দিন গুণছে কলকাতা বিমানবন্দর।