নিউজ ডেস্ক: ৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তবে এবার এক ধাক্কায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। সূত্র বলছে, গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার কম পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে। জানা গিয়েছে, মাত্র ৫ লক্ষ ৯ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী এবার উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে। এক বছর আগেই যে সংখ্যাটা ছিল ৭ লক্ষ ৯০ হাজারের মতো। কিন্তু কী কারনে দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা?
শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী পেশা মুখী পড়াশুনোর দিকে ঝুঁকছে, কেউ নার্সিং কিংবা পলিটেকনিক কেউবা অন্য ট্রেনিং কোর্সের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী তো মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়েই দিয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়াতে কন্যাশ্রী ও রূপশ্রীর মতো বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। পড়াশোনার সুবিধার জন্য ট্যাব কিনতে একাদশ ও দ্বাদশের ছাত্রছাত্রীদের ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। তারপরেও কেন এই অনুপস্থিতি? এ প্রসঙ্গে আসানসোলের মহিলা কল্যাণ গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার মতে এর পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। এক পরীক্ষা না–দিলেও এই সময়ের মধ্যে ছাত্রীরা কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছে। অনেকে হয়তো বিয়েও করে ফেলেছে। দুই, এখন ছাত্রছাত্রীরা সহজেই এত কিছু পেয়ে যাচ্ছে, যে তাদের পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না।’
এই অনুমানের পাশাপাশি বাংলা বোর্ডে পড়ার আগ্রহ কমছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। উচ্চ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, একাদশে রেজিস্ট্রেশনের সময় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝে অনেকেই চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ে। স্কুলছুটও হয় অনেকে। এ প্রসঙ্গে, দুর্গাপুর মহকুমার পরীক্ষার জয়েন্ট কনভেনার কলিমুল হকের বক্তব্য, ‘প্রতি বছর জেলায় গড়ে ৭০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। এ বার সংখ্যাটা অনেক বেশি। লকডাউনের সময় থেকে স্কুলে ড্রপ আউটের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে।’ গ্রামের ক্ষেত্রেও ছাত্রীদের অনুপস্থিতির হার বাড়ছে। শিক্ষক নেতা অর্ধেন্দু রায় জানান, সালানপুর ব্লকের আছড়া হাইস্কুলে এ দিন ১২ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিতে আসেনি। একই অবস্থা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে। রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার করে ট্যাবের টাকা পাওয়ার পরেও পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় দু’হাজার পরীক্ষার্থী আসেনি। জেলায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০,১৬৪। কিন্তু ট্যাব কেনার টাকা পেয়েছে ৩২,২৪৮ জন পরীক্ষার্থী।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক সংগঠনের নেতা চন্দন মাইতি বলেন, “ক্রমাগত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বন্ধ। পড়ুয়ারা দেখতে পাচ্ছে, তাদের বাড়িতে দাদা-দিদিরা বসে রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ড্রপ আউট বাড়ছে। নাবালিকার বিয়ে বাড়ছে। নিয়োগ না হলে আগামিদিনে বহু স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতি বছরের দুর্গাপুজোর মতোই নিয়োগ করতে হবে। না হলে বেসরকারি স্কুলের রমরমা বাড়বে। সবুজসাথীর সাইকেল, কন্যাশ্রী, ট্যাব দিয়েও ছাত্রদের স্কুলমুখো করা যাবে না।”
উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নতুন সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হতে চলেছে। এর ফলে বছরে মাত্র দু’বার পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। তাই এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে পুরনো নিয়ম অনুযায়ী শেষবারের মতো পরীক্ষা।