নিউজ ডেস্ক: বিহারের বিধানসভা ভোটের আগে বৃহস্পতিতে সেরাজ্যে পা রাখছেন মোহন ভাগবত। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, দিল্লির পরে এ বার বিহারের বিধানসভা নজর আরএসএস-এর। সঙ্ঘের তরফে জানানো হয়েছে সুপৌল জেলায় সরস্বতী বিদ্যামন্দিরের নতুন ভবনের উদ্বোধনের পাশাপাশি আরও কয়েকটি কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। মোহন ভাগবতের বিহার সফরের ঘোষণায় নতুন করে জল্পনা শুরু।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। তাঁর আগে বিজেপির শক্তি এবং প্রভাব বৃদ্ধি করতে ভাগবতের এই সফর বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির তরফে জানা যাচ্ছে, আরএসএস নির্বাচন প্রস্তুতির জন্য তিনটি মূল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রথমত— অনিচ্ছুক ভোটারদের চিহ্নিত করা। দ্বিতীয়ত— কোন বিষয়গুলি ভোটের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেগুলি চিহ্নিত করা। তৃতীয়ত— এমন ঘটনা বা বিষয় খুঁজে বার করা, যেগুলি বিজেপির পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও অতীতে দেখা গিয়েছে আরএসএস-এর সহযোগিতায় ভোটযুদ্ধের বৈতরণী পার করেছে বিজেপি। গত বছর, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড বিধানসভা এবং উত্তরপ্রদেশের নটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে রীতিমতো সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল আরএসএসের চালিকাশক্তি সংঘপ্রধান ড. মোহন ভাগবতকে। সেবার আরএসএস-র লক্ষ্য ছিল যাতে ১০০ শতাংশ ভোট পড়ে। যাঁরা মাহারাষ্ট্রের ভোটদাতা অথচ বাইরে রয়েছেন, তাঁদের মহারাষ্ট্রে এনে ভোটদানের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল সংঘের তরফে। ভোট দিতে আসার জন্য বহু সংখ্যক বাস, হায়দরাবাদ, পুনে, বেঙ্গালুরু থেকে আয়োজনও করা হয়েছিল।
মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে সংঘের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গিয়ে প্রচার চালানোর পাশাপাশি একধিক ভোটের কাজ সহায়তা করেছে। বজরং দল সহ সংঘের অনুমোদিত ৩৭ টি সংগঠন বিজেপির হয়ে প্রচারে নেমেছিল। আরএসএস-এর সক্রিয়তায় হাতে নাতে ফল পায় বিজেপি। মহারাষ্ট্রের ভোটে বিপুল সমর্থন পায় বিজেপি।
শুধু মহারাষ্ট্র নয় হরিয়াণা এবং ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে বিজেপির সাফল্যে আরএসএসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আরএসএসের সরাসরি রাজনৈতিক ভূমিকা না থাকলেও তাদের সাংগঠনিক শক্তি, আদর্শগত প্রভাব এবং ভোটারদের সংগঠিত করার ক্ষমতা বিজেপির জয়ের পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। হরিয়াণা প্রধানত কৃষি-নির্ভর রাজ্য। আরএসএস তাদের সহযোগী সংগঠন, যেমন ভারতীয় কিষাণ সংঘ, এর মাধ্যমে কৃষকদের ইস্যুগুলোতে সংযোগ স্থাপন করে। যার ফল স্বরুপ হরিয়ানাতে সফলতা পেয়েছিল বিজেপি।
অন্যদিকে ছত্তিশগড়ে আদিবাসী ভোটারদের একটি বড় অংশ রয়েছে। আরএসএস তাদের সামাজিক সংগঠন, যেমন বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, এর মাধ্যমে আদিবাসীদের কাছে পৌঁছেছে এবং বিজেপির প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছিল। ছত্তিশগড় মাওবাদ প্রভাবিত অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত। আরএসএস মাওবাদ বিরোধী আদর্শ প্রচার করে বিজেপির অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল। এর ফলে রাজ্যের একটি বড় অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে।
বিজেপির বিজয়রথ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরএসএসের ভূমিকা অনস্বীকার্য তা আরও একবার প্রমাণ হয়েছে চলতি বছর দিল্লির নির্বাচনে। এবারের গুরুত্বপূর্ণ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বুথ স্তরে আরএসএস ত্রিদেব মিশন শুরু করেছিল। এই মিশনে একজন পুরুষ, একজন মহিলা এবং একজন যুবকসহ একটি দলে কমপক্ষে দশজন কাজ করতো। এই দল নিজ নিজ এলাকায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং তাদের সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা করত। যার ফল স্বরূপ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভোটে জয়ী হয় বিজেপি। ২৭ বছর পর দিল্লিতে ফের ক্ষমতা দখল করে বিজেপি।