নিউজ ডেস্ক: কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের গুণমান পরীক্ষায় গত তিন মাসে ডাহা ‘ফেল’ করেছে অন্তত ৪০০ টি ওষুধ। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সংস্থার তৈরি ওষুধও, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। সমস্যা হল এইসব ওষুধের বেশিরভাগই মানুষের শরীরে চলে গিয়েছে। কেন আরও আগে পদক্ষেপ করল না সেন্ট্রাল ড্রাগ রিসার্চ ল্যাবরেটরি, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেন্ট্রাল ড্রাগ রিসার্চ ল্যাবরেটরি মঙ্গলবার ১৪৪ টি ওষুধ, ইঞ্জেকশনের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাতিল করে। সেই ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আরও ১৩৪ টি ওষুধ, ইঞ্জেকশন এবং স্যালাইনের গুণগত মান সঠিক নয় বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। জানিয়ে দেওয়া হল, বাজারচলতি নামি সংস্থার, নামি ব্র্যান্ডের এই ১৩৪টি ওষুধ, ইঞ্জেকশন এবং স্যালাইনকে ব্যবহারের অযোগ্য বলে ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ বা CDSCO। ঘটনা হল এই ১৩৪টি ওষুধের মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন ওষুধের দোকান অথবা উৎপাদক সংস্থার ডাহা ফেল করা ওষুধ রয়েছে ২৩ টি।
দেখা গিয়েছে, এই ওষুধগুলির কোনওটিতে ওষুধ কম, জল বেশি। কোনওটায় প্যাকেটে নাম এক, ভিতরে ওষুধ আরেক। কোনও ট্যাবলেট আবার শরীরে দ্রবীভূত হচ্ছে না। কোনও ওষুধের গায়ে যে ডোজ লেখা আছে, আসলে তার চেয়ে অনেক কম। পরীক্ষায় এমনও দেখা গেছে যে, একই স্ট্রিপে থাকা কিছু ট্যাবলেট এক রঙের, কিছু ট্যাবলেট অন্য রঙের। তাই সেই সব ফেল করা ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করতে এবার ১২ দফা নির্দেশিকা জারি করল স্বাস্থ্য দফতর। সেখানে বলা হয়েছে –
গুণমান পরীক্ষায় ফেল করা ব্যাচের ওষুধ থাকলে তা অবিলম্বে সরাতে হবে। এই মর্মে সরকারি হাসপাতাল, ওষুধের পাইকারি বিক্রেতা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের নির্দেশিকা দিতে হবে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে।
সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর, যেখান থেকে সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করা হয়, সেখান থেকেও সরিয়ে ফেলতে হবে এই সব ওষুধ।
সব জেলা, মহকুমা ও ব্লকের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এই ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দিতে হবে। খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট ব্যাচের ওষুধ কেনাবেচা ও ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিতে হবে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলকে।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল থেকে শুরু করে দোকানেও সর্বসমক্ষে ঝোলাতে হবে ‘ফেল করা’ ওষুধের তালিকা। এছাড়া এই তালিকা রাখতে হবে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটেও।
কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের গুণমান পরীক্ষায় এই সব লালকালির দাগ পাওয়া ওষুধ খেলে প্রভাব হতে পারে ভয়ঙ্কর। তাই এসব ফেল করা ওষুধ যাতে ব্যবহার না হয়, তারউপর নজরদারি চালাতে, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দোকানে দোকানে সারপ্রাইজ ভিজিট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের ডিরেক্টরকে। কোথাও বাতিল ওষুধের বিক্রি, ব্যবহার হলে, বা ফেল করা ওষুধের তালিকা না ঝোলানো হলে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এমনকী বাতিল করা হতে পারে লাইসেন্সও।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে বাজার থেকে এই ওষুধগুলি নিজেদের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায় সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগ। সেই রিপোর্ট ফেব্রুয়ারি মাসে সামনে এনেছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসব ওষুধ যাঁদের দেওয়া হয়েছে তাঁদের শরীরে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। তাই গুনমান পরীক্ষায় ফেল করা ওষুধের বিক্রি যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে তৎপর স্বাস্থ্য দফতর।