নিউজ ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুরফুরা শরিফে যাওয়াকে কেন্দ্র করে যে দিন রাজনৈতিক তরজার পারদ চড়ল, ঘটনাচক্রে সে দিনই বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে আবার বাংলায় ফেরানোর দাবি জানালেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
বাংলাদেশের লেখিকাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবিতে সোমবার রাজ্যসভার জ়িরো আওয়ারে শমীক বলেছেন, “তসলিমার কাছে কলকাতা প্রাণের শহর। তিনি কলকাতায় ফিরতে, বাংলায় কথা বলতে ও বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান। ছদ্ম-প্রগতিশীলতার আড়ালে চূড়ান্ত তোষণ, মৌলবাদের কাছে অত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক! তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মৌলবাদীদের হুমকির মুখে পড়ে ২০০৪ সালে প্রাণ বাঁচিয়ে ভারতে আসেন ‘লজ্জা’ থেকে শুরু করে ‘দ্বিখণ্ডিত’র মতো বহু চর্চিত উপন্যাসের লেখিকা। এর তিন বছর বাদে ২০০৭ সালে তাঁকে কলকাতাও ছাড়তে হয়। এখন ভারতের অন্যত্র আছেন তিনি। সে সময় আচমকাই তাঁকে ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে। শেষমেশ নীরবে তিনি কলকাতা ছাড়েন। তারপর থেকে আর প্রিয় শহরে ফেরা হয়নি লেখিকার।
সে সময়, ২০০৭-এর নভেম্বরে তসলিমার ভিসা বাতিলের দাবিতে একটি সংগঠনের বিক্ষোভ, শহরে সেনা নামার মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ে তাঁকে কলকাতা থেকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তৎকালীন বিজেপি-শাসিত রাজস্থানের জয়পুরের একটি বেসরকারি অতিথিশালায়। যদিও ২০০৭-এ ঘটনাবলির সময়ে শমীক-সহ বিজেপি নেতারা কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ‘ধর্মের রাজনীতি’র অভিযোগ করে কল্যাণের আরও বক্তব্য, “এখন হিন্দু-মুসলিমের ঝগড়া লাগাতে আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের হাতে। রাজ্য ঠিক করবে, কাকে আসতে দেবে আর দেবে না। আগে আইন-শৃঙ্খলা। বিজেপির এই লোকগুলো ভেকধারী হিন্দু!” একই মত কংগ্রেসেরও। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “তসলিমাকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে বাংলার রাজনীতিকে উত্তপ্ত করা বা পরিবেশ নষ্ট করা ঠিক নয়। যে তসলিমাকে সামনে রেখে সমাজমাধ্যমে দ্বন্দ্ব হয়, সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিষয়টি উপেক্ষা করা দরকার।” সিপিএম যদিও তসলিমার প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াগত বিষয়টির উপরে জোর দিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তকে উস্কে দেওয়া হয়েছিল, সেটা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জানেন। তসলিমার তখনও কলকাতায় থাকতে অসুবিধা ছিল না! অসুবিধাটা তৈরি করা হয়েছিল। এখন বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রকে।”
এদিন, তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় শমীকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তসলিমা ফেসবুকে লেখেন, “রাজ্যসভার সাংসদ কমিউনিস্ট পার্টির গুরুদাস দাশগুপ্ত ২০০৭ সালে আমাকে নিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন ভারতের সংসদে। আমি তখন সবে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার দ্বারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত। বাংলার টানে, প্রাণের টানে যে শহরে বসবাস শুরু করেছিলাম, সেই শহর থেকে কখনও যে বিতাড়িত হবে হবে, কল্পনাও করিনি। শ্রদ্ধেয় গুরুদাস দাশগুপ্ত প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি দাবি জানিয়েছিলেন, আমাকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ বছর কোনও রাজনীতিক আমার কলকাতায় ফেরা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। আজ, ১৮ বছর পর রাজ্যসভার সাংসদ ভারতীয় জনতা পার্টির শমীক ভট্টাচার্য আমাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবি জানালেন সংসদে। জানি না, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না, তবে তিনি যে আমার কথা মনে করেছেন, মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত আমি, বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তিনি উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।”