নিউজ ডেস্ক: ‘আপনি যতই বহু মাইল দূরে থাকুন, আমাদের হৃদয়ের খুব কাছেই থাকবেন। এদেশের অন্যতম বর্ণময় কন্যাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারলে তা এদেশের জন্য গৌরবের হবে।’চিঠি লিখে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অবশেষে ঘরে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন এই দুই মহাকাশচারী। দীর্ঘ ন’মাস পর ঘরে ফিরছেন সুনীতা উইলিয়ামসরা। তাঁদের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা বিশ্ব।
নাসা আগেই ঘোষণা করেছিল, ১৮ মার্চ অর্থাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই মহাকাশচারীই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৫৭ মিনিটে আমেরিকার ফ্লোরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতা-সহ চার মহাকাশচারী। ভারতের সময় অনুযায়ী তখন বুধবার ভোর সাড়ে ৩টে।
২০২৪ সালে জুন মাসে আট দিনের অভিযানে মহাকাশে রওনা দিয়েছিলেন সুনীতা এবং বুচ। কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে অভিযান পিছিয়ে যায়।অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাস প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঘরে ফিরতে চলেছেন দুই মহাকাশচারী। যদিও দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার কারণে পৃথিবীতে ফেরার পরেও বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবেন তাঁরা।
কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তাঁদের?
• পেশী ও হাড়ের ক্ষয়:
মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণের অভাবে পেশী ও হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, ফলে হাড়ের ক্ষয় হয়। মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য ২ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা থাকে
• দৃষ্টিশক্তির সমস্যা:
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে চোখের লেন্সের আকার পরিবর্তন হতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
• ভারসাম্য রক্ষার সমস্যা:
মহাকাশে শরীরের তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলো পরিবর্তিত হয়, যা পৃথিবীতে ফিরে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে পৃথিবীতে ফিরলেই এখন শুইয়ে রাখা হবে সুনীতাদের।
• রক্তচাপের সমস্যা:
মহাকাশে শরীরের রক্তচাপের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলো পরিবর্তিত হতে পারে, যা পৃথিবীতে ফিরে হঠাৎ করে রক্তচাপের ওঠানামার কারণ হতে পারে।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস:
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
• হাঁটাচলার সমস্যা:
পেশী ও হাড়ের দুর্বলতা এবং ভারসাম্য রক্ষার সমস্যার কারণে হাঁটাচলায় অসুবিধা হতে পারে।
• কষ্টদায়ক অনুভূতি:
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে শরীর ও মনে বিভিন্ন ধরনের চাপ তৈরি হয়, যা পৃথিবীতে ফিরে মানসিক ও শারীরিক কষ্টের কারণ হতে পারে।
• রেডিয়েশনের প্রভাব:
মহাকাশে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে ক্যানসার পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
• কোয়ারেন্টাইন:
পৃথিবীতে ফিরে আসার পর, মহাকাশচারীদেরকে কিছুদিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হতে পারে, যাতে তারা মহাকাশ থেকে কোনো রোগ বা সংক্রমণ নিয়ে না আসে।
তবে সুনীতা উইলিয়ামস ফিরে আসার পর নাসা তার স্বাস্থ্যের উপর দৃঢ়ভাবে নজর রাখবে, যাতে মহাকাশ ভ্রমণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি অধ্যয়ন করা যায়। এই গবেষণা কেবল ভবিষ্যতে নভোচারীদের সাহায্যই করবে না, পৃথিবীতে মানব চিকিৎসা পদ্ধতিকেও উন্নত করবে বলেই মত নাসার।