নিউজ ডেস্ক: গরম গরম মোমো কে না ভালোবাসে? কিন্তু যদি শোনেন ওই মোমোতে ব্যবহার করা হয়েছে কুকুরের মাংস! তাহলে? যে কারওই পেটের ভাত উঠে আসার জোগাড় হবে। হ্যাঁ, সম্প্রতি পাঞ্জাবের মোহালিতে এক মোমো এবং স্প্রিং রোল তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে হতবাক হয়ে যান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা। অভিযানের সময় কারখানার ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হয় কুকুরের কাটা মুণ্ড। সম্প্রতি এখানকার একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় মোমো তৈরির জন্য নোংরা জল এবং পচা সবজি ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই ভিডিও নিয়ে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। এরপর স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পৌর কর্পোরেশনের মেডিক্যাল টিম অভিযান চালালে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। সন্দেহ করা হচ্ছে, ওই কারখানায় মোমো তৈরিতে অবৈধভাবে কুকুরের মাংস ব্যবহার করা হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।
এখানেই শেষ নয়, অভিযানের সময় তদন্তকারীরা পান গাদা খানেক পচা মুরগির মাংসও। তবে, প্রতিনিধরা যে পশুর মাথা পেয়েছেন, তা কুকুরই কিনা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ঘটনার পর, চণ্ডীগড়, পঞ্চকুলা, মোহালিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এই কারখানা থেকেই এই তিন শহরে মোমো এবং স্প্রিং রোল সরবরাহ করা হত। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা স্মৃতি ফেরাচ্ছে ভাগাড়ের মাংস কাণ্ডের।
“ভাগাড়ের মাংস কাণ্ড”-
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে, “ভাগাড়ের মাংস কাণ্ড” নামে একটি ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে মৃত পশুর মাংসকে বিভিন্ন হিমঘরে রেখে তা বাজারে বিক্রি করা হতো, সেই সময় এই ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
তদন্তে জানা গিয়েছিল,
.মৃত পশুর মাংস কেটে তা রাখা হতো এ শহর এবং রাজ্যের বেশ কিছু হিমঘরে।
.তারপর এই মাংস বিভিন্ন দোকানে, বাজারে এবং রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করা হত।
.বাক্সের ওপরের দিকে থাকত চিংড়ি বা ইলিশ মাছ। আর তার তলাতেই ভাগাড়ের মাংস।
এ ভাবেই পাক্কা ১০ বছর ধরে রমরমা ব্যবসা চলছিল ভাগাড়ের মাংসের। খবর সামনে আসতেই তদন্তে নেমে এই চক্রের মূল পান্ডা বিশ্বনাথ ঘড়াই ওরফে বিশুকে গ্রেফতার করা হয়।
কলকাতা-
সে সময় ধর্মতলা চত্বরে একাধিক স্ট্রিট ফুডের দোকান থেকে মাংসের স্যাম্পেল সংগ্রহ করেন পুরসভার আধিকারিকরা। পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাইপাস সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ধাবাতেও অভিযান চালিয়েছিলেন পুরসভার আধিকারিকরা। সেখান থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে খাবারের নমুনা। তবে শুধু মাংসই নয়, সেই সঙ্গে সস-মশলাতেও ভেজাল মেশানো হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখেন পুরসভার অফিসাররা। ভাগাড় কাণ্ডে মেয়র পারিষদ জানিয়েছিলেন, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও অনেক খাবারের দোকানের মালিকই খাবার নষ্ট হয়ে গেলেও ফেলেন না। তাই বাধ্য হয়ে পুরসভাকে কড়া পদক্ষেপ করতে হল।
উত্তর ২৪ পরগনা-
জানা গিয়েছিল, বজবজের ভাগাড় থেকে মাংস বিশু নিজের লোক দিয়েই আনাত। তার অন্যতম মাংস সরবরাহকারী ছিল শরাফত— যে কাঁকিনাড়া, জগদ্দল এবং উত্তর ২৪ পরগনার আরও কয়েকটি ভাগাড় থেকে মাংস আনত রাজাবাজারে।
দিল্লি, পুণে, মুম্বই-
এছাড়াও দিল্লি, পুণে, মুম্বই-এর মতো বড় শহরে নিয়মিত মাছের আড়ালে মাংস পাচার করত বিশু। এমনকি দেশের পাশাপাশি নেপাল এবং ভূটানেও সে এই মাংস সরবরাহ করা শুরু করেছিল।
পাঞ্জাব-
পাঞ্জাবের এই ঘটনায় মোহালির সহকারী খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনার ডঃ অমৃত ওয়ারিং জানিয়েছেন, অভিযানের সময় মোমো কারখানার ফ্রিজ থেকে পচা মাংস ও কুকুরের মাথার মতো দেখতে কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। সন্দেহজনক মাংসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পশুচিকিৎসা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, কারখানায় উৎপাদিত মোমো, স্প্রিং রোল এবং চাটনির নমুনাও পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
মোহালির সিভিল সার্জন ডঃ সঙ্গীতা জৈনা জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর এবং তদন্ত চলছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, যেসব কারখানা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে ও যেখানে খাদ্য নিরাপত্তার নিয়ম মানা হচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে-
স্থানীয়দের আশঙ্কা, দীর্ঘদিন ধরেই ওই কারখানায় অবৈধভাবে কুকুরের মাংস ব্যবহার করে মোমো ও অন্যান্য খাবার তৈরি করা হতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় বিপদের ইঙ্গিত। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযুক্ত কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই ধরনের ঘটনা রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।
জরিমানা-
ইতিমধ্যেই কারখানাটির মালিকের উপর একাধিক জরিমানা আরোপ করেছে মোহালি পুরসভা। অবৈধ ভাবে পশু জবাইয়ের জন্য তাকে ১২,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ ছাড়া কারখানাটিতে বিপুল পরিমাণে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ রাখার জন্য ১০,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। পুরসভার কমিশনার পরমিন্দর পাল সিং জানিয়েছেন, শুধু এই কারখানাটিতে নয়, মোহালি অঞ্চল জুড়ে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও গোটা ঘটনায় কারখানার শ্রমিকদের বক্তব্য, এই মাংস কোনওভাবেই গ্রাহকদের খাদ্যে ব্যবহার করা হয়নি। কারখানায় কর্মরত নেপালি কর্মীদের খাবার হিসেবে রাখা হয়েছিল।