নিউজ ডেস্ক: টানা ৯ মাসের টানটান অপেক্ষা । প্রায় ১৭ ঘণ্টার যাত্রা শেষে ফ্লোরিডা উপকূলে অবতরণ করল স্পেস এক্স-এর ড্রাগন মহাকাশযান। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১ টা ৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয় স্পেসএক্স এর ফ্রিডম মহাকাশযান। বিকেল ৫টা ৫১ মিনিট নাগাদ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। প্রথম দফায় প্যারাশ্যুট খুলে যায় বিকেল ৫ টা ৫৩ মিনিটে। এক মিনিট পরেই দ্বিতীয় দফায় প্যারাশ্যুট খুলে যায়। তারপর ধীরগতিতে আটলান্টিকের বুকে নেমে আসে ড্রাগন। ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ফেরেন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। তবে মহাকাশে দীর্ঘ দিন কাটানো নভশ্চরদের তালিকায় সুনীতা, বুচ প্রথম নন। অতীতে ফিরে তাকালে দেখা যাবে অনেকেই দিনের পর দিন থেকেছেন মহাকাশ স্টেশনে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক দীর্ঘদিন মহাকাশে কাটানো নভশ্চরদের তালিকা –
সেরগেই ক্রিকালেভ –
১৯৯১ সালের ১৮ মে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বাসিন্দা সেরগেই ক্রিকালেভ মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও দুই মহাকাশচারী। তিনজনের পরিকল্পনা ছিল মহাকাশ স্টেশন ‘মির’ (এমআইআর)-এ ৪ মাস থাকার। ‘মির’ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিচালিত প্রথম আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মহাকাশ স্টেশন।
কিন্তু সেই বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সোভিয়েতের ভাঁড়ারে টান পড়ে। বাকি ২ নভশ্চরকে ফিরিয়ে আনলেও সেরগেইকে ওখানেই থাকতে বলা হয়। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে একাধিক দেশের জন্ম হলে সেরগেইকে ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয় মস্কো। ৩১৩ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ পৃথিবীতে ফিরে আসেন তিনি।
কেন বোয়েরসোক্স, ডোনাল্ড পেট্টিট এবং নিকোলাই বুদারিন
সাল ২০০৩। বোয়েরসোক্স, ডোনাল্ড পেট্টিট এবং নিকোলাই বুদারিন নামে ৩ মহাকাশচারীকে তিন মাসের জন্য পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। কিন্তু ২০০৩ সালে আমেরিকার মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’ পৃথিবীতে ফেরার পথে মহাশূন্যে ধ্বংস হয়। মৃত্যু হয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার মহাকাশচারী কল্পনা চাওলাও সহ সাত মহাকাশচারীরই। ঘটনাটির সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন কেন, ডোনাল্ডেরা। এই বিপর্যয়’-এর পর নাসা নতুন করে মহাকাশে কোনও যান পাঠাতে রাজি ছিল না। ফলে ৫ মাস মহাকাশে কাটান বোয়েরসোক্স, ডোনাল্ড পেট্টিট এবং নিকোলাই বুদারিন । শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালের মে মাসে রুশ ক্যাপসুল তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে।
ফ্র্যাঙ্ক রুবিও –
২০২২ সালে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন নাসার এক মহাকাশচারী ফ্র্যাঙ্ক রুবিও। তাঁর সঙ্গী ছিলেন আরও দুই রাশিয়ান মহাকাশচারী— সেরগেই প্রোকোপেভ এবং দিমিত্রি পেতেলিন। তাঁদের ফেরাতে যখন নাসা পাঠায় সোয়ুজ ক্যাপসুলকে। কিন্তু সেখানে ঘটে বিপর্যয়। মহাকাশে ভেসে থাকা ‘স্পেস জাঙ্ক’ বা মহাকাশ জঞ্জালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায় সেই ক্যাপসুল। অবশেষে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৭১ দিন মহাকাশে থেকে রেকর্ড গড়ে নাসার পাঠানো দ্বিতীয় ক্যাপসুলে চেপে পৃথিবীতে ফেরেন তিন মহাকাশচারী।