নিউজ ডেস্ক: একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা! শিবের পুজোয় বাধা! সম্প্রতি এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠেছিল নদিয়ার বৈরামপুরে। বিষয় এতোই ঘোরতর যে, শেষ পর্যন্ত জল গড়ায় হাইকোর্টে। তবে শেষমেশ হাইকোর্টের নির্দেশে ইতি টানা হল দীর্ঘ সময়ের রীতিতে। প্রায় সাত পুরুষ পর উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে শিব মন্দিরে পা রাখলেন তফশিলি জাতি তথা দাস সম্প্রদায়ের লোকজন।
পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গিধগ্রামের ঘটনা-
সম্প্রতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গিধগ্রামের ৩০০ বছরের পুরনো শিব মন্দিরে প্রবেশ এবং পুজোর অধিকার পেয়েছেন তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষজন। জানা যায় এ মন্দিরের দেবতা গিধেশ্বর। অভিযোগ ছিল, মন্দিরে প্রথম থেকে চর্মকার বা চামার সম্প্রদায়ের মানুষের ঢোকার অধিকার ছিল না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে সেই অধিকার ছিনিয়ে নেন তাঁরা। সেই ঘটনা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা রাজ্যে। আর এবার গিধগ্রামের পর নদিয়ার কালীগঞ্জ। সেখানেও একইভাবে তফশিলি জাতিভুক্তদের শিব মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে দাস সম্প্রদায়ের লোকজনেদের নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের পালিতবেঘিয়ার বৈরামপুর গ্রামের শিব মন্দিরে ঢুকতে বাধা দিতেন সেবায়েতরা। সেই নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের দরবারে মাথা ঠুকেও কোনও লাভ হয়নি। পুজো করার অধিকার থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। পরে দাস সম্প্রদায়ের লোকজন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের বিচারপতি নির্দেশ দেন পুলিশ যাতে সহযোগিতা করে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
বিচারপতির মন্তব্য-
মামলা চলাকালীন বিচারপতি বলেন, “কী করে এটা হয় ? পুলিশের ভূমিকা কী ? একটা মানুষ তার অধিকার পাবে না ! এটা তো বাংলায় ছিল না । এমন সমস্যা এখনও বাংলায় নেই বলে বিশ্বাস করি । কেন তারা উৎসবে যোগ দিতে পারবে না ! কীসের ইগো ? তাহলে পুলিশ কী করছে ? আবার বলছি এই সমস্যা বাংলায় ছিল না । তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি এটা পুলিশের অক্ষমতা । ওসি নয়, কোনও সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব নিতে হবে । পিছনে যদি অন্য কোনও কারণ থাকেও সেটাও খুঁজে দেখা পুলিশের কাজ । অফিসে বসে বসে রিপোর্ট তৈরি করলে হবে না । আবার বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে হবে ।” একইসঙ্গে তিনি জানান, ভারতীয় সংবিধান ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, অস্পৃশ্যতা একটি নিষিদ্ধ বিষয়। ১৯৫৬ সালে দেশে তৈরি হয়েছিল অস্পৃশ্যতা বিরোধী আইন। তা সত্ত্বেও সমাজে যে অসুখ রয়ে গেছে, সেটা বেরিয়ে আসে গীধগ্রাম বা কালীগঞ্জের ঘটনায়।
মামলাকারীর বক্তব্য-
জানা গিয়েছে, নদিয়ার বৈরামপুরে কালীগঞ্জ থানা এলাকায় প্রাচীন একটি শিব মন্দির রয়েছে। তা সাধারণের ব্যবহারেরই মন্দির বলে নথিতেও রয়েছে। অথচ, এখানকার রজক বা ধোপা সম্প্রদায়ের মানুষকে গাজনে অংশ নিতে দেওয়া হয় না বলে আদালতে জানান মামলাকারী। এ প্রসঙ্গে বৈরামপুরের বাসিন্দা যতন দাস বলেন, আমাদের দাস পরিবারের সদস্যদের মন্দিরে পূজা দেওয়ার অনুমতি নেই। আমরা সন্ন্যাসী হতে পারি না। এই অভিযোগ জানিয়ে আমরা সব জায়গায় দরবার করেছি। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। স্থানীয় বিডিও ও থানাতেও বিষয়টি বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা সুরাহা হয়নি বলে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করি।
এরপর শেষমেশ দীর্ঘ দিনের আইনি জট কাটিয়ে বুধবার জেলা পুলিশ ও স্থানীয় পুলিশ ওই গ্রামের দুই পক্ষের (অভিযোগকারী ও সেবায়েতরা) সঙ্গে আলোচনায় বসে। ওই আলোচনা সদর্থক হয় বলেও জানা গিয়েছে। তারপরই বৃহস্পতিবার পুলিশের নিরাপত্তায় দাস সম্প্রদায়ের লোকজনেরা পুজো দিতে পারলেন।