নিউজ ডেস্ক: মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই অস্বস্তিকর আবহাওয়া বাংলাজুড়ে। এরইমধ্যে জল সঙ্কটে সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের একাধিক জেলার বাসিন্দারা।
হাওড়া
সম্প্রতি হাওড়া পুরসভার আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ লাইনে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যার জেরে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিপর্যস্ত জল সরবরাহ। এর ফলে গরম পড়তেই জল সঙ্কটে পড়েছেন উত্তর হাওড়া এবং শিবপুর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দারা। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, জলের উচ্চচাপ এবং এলাকায় ধস নামার কারণেই এই বিপত্তি।
যদিও পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাইপ লাইন মেরামতির কাজ চলছে। তবে কাজ কত সময়ে শেষ হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন বাসিন্দাদের পানীয় জল সঙ্কট মেটাতে এলাকাগুলিতে জলের গাড়ি পাঠানো হবে। এর জন্য কলকাতা পুরসভা থেকেও গাড়ি আনানো হবে। তবে বাসিন্দারা জানিয়েছেন জল না পেয়ে তারা সমস্যায় ভুগছেন।
ঝাড়গ্রাম
হাওড়ার পাশাপাশি জল সঙ্কটে ভুগছে ঝাড়গ্রামও। ঝাড়গ্রামের বিনপুরে কল আছে কিন্তু জল নেই, গরমে খাবার জল পেতে জেরবার গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ দু’বছরেও চালু হয়নি জলের কল। পঞ্চায়েত অফিসেও জানিয়ে কাজ হয়নি। তাই ভরসা পাড়ার ক্লাবের পাম্পের জল।অভিযোগ সেটাও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে যায়। গরমে খাবার জল পেতে জেরবার গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার।
বাঁকুড়া
জলকষ্ট থেকে বাদ পড়েনি বাঁকুড়াও। পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছেন বাঁকুড়ার রানিবাঁধ এলাকার মানুষ। রানিবাঁধের রাউতাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আমডাঙা এলাকার ১১টি পরিবার এই সমস্যায় ভুগছেন। অন্তত অভিযোগ এমনই। গ্রামের বাসিন্দারা খালের পাশে ‘চুয়া’ তৈরি করে পানীয় জল সংগ্রহ করে দিনযাপন করছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতারা জলের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে তা পূরণ হয় না।
তাঁরা আরও জানিয়েছেন, এখানে বসতি শুরু হওয়ার পর থেকেই পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। গ্রামের কোনও বাড়িতেই পানীয় জল সরবরাহ হয় না। গ্রামে টিউবওয়েল থাকলেও সেই জলে আয়রন থাকায় তা ব্যবহার যোগ্য নয়। অগত্যা ভরসা গ্রাম থেকে খানিক দূরে খালের পাশের ‘চুয়া’-র জল।
বিশেষজ্ঞদের মতামত-
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল হাওড়া পুরসভার যে অঞ্চলে আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ লাইনে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে তার অবস্থান নবান্নর কাছেই। ফলে মুখ রক্ষা করতে শহর থেকে বাড়তি জলের ব্যবস্থা করে হাওড়াবাসীদের পাশে থাকলেও, গোটা রাজ্য জুড়ে যে এই বিপুল অঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে জল সঙ্কট রয়ে যাচ্ছে সেদিকে কোনও নজরই করছেন না মুখ্যমন্ত্রী। পানীয় জল সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প যদি রূপায়ণ করতে এগিয়ে আসতো রাজ্য, তাহলে হয়তো এই সমস্যা এড়ানো যেত। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে শহরে পরিস্রুত পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তৈরি হয়েছিল একের পর এক বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও শহরে পানীয় জলের চাহিদা মিটছে না। গরম পড়তে শুরু করতে না করতেই শহরের সংযুক্ত এলাকায় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। টালিগঞ্জ, কসবা, বাঁশদ্রোণী, যাদবপুর এলাকার পুরপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, তাঁদের ওয়ার্ডে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জল মিলছে না। ফলে জলকষ্ট থেকেই যাচ্ছে।
তবে শুধু এ রাজ্যই নয়, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি জলকষ্টের শিকার বেঙ্গালুরু, মুম্বই সহ ভারতের বহু রাজ্য। নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে জল সংকটের পরিমাণ বেড়েছে। তাই পানীয় জলের অভাবে হিমশিম খাচ্ছে বেঙ্গালুর, দিল্লি, মুম্বই-এর মত রাজ্য গুলি।
বেঙ্গালুরু
বেঙ্গালুরুতে গত দেড় মাস ধরে জলের সংকট চলছে। ভূগর্ভস্থ জল হ্রাস, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের অভাব এবং জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে বেঙ্গালুরু জল সংকট দেখা দিয়েছে।
মুম্বই
মুম্বই শহরেও জলের চাহিদা মারাত্মক আকার নিয়েছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং জলের উৎসগুলির ক্ষতির কারণে মুম্বই মেট্রোপলিটন অঞ্চলে জলের সংকট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
জয়পুর
রাজস্থানের রাজধানী এবং দেশের তথাকথিত গোলাপি শহর জয়পুরও জল সংকটের মুখোমুখি। এখানেও জলের চাহিদা বেশি। পর্যটন এবং ঐতিহ্যবাহী শহর জয়পুরের জন্য জল সরবরাহের উৎসগুলি পৃথক হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন নতুন জলের উৎসের দিকে মনোনিবেশ করছে। বর্তমানে, জয়পুর জলের জন্য রামগড় জলাধারের উপর নির্ভর করে।
দিল্লি
তবে ভারতের রাজধানী দিল্লির অবস্থা বাকি রাজ্য গুলোর তুলনায় ভালো। জলের সমস্যা থাকলেও তা আগের থেকে অনেক হ্রাস পেয়েছে।