নিউজ ডেস্ক: এ তো কেঁচো খুড়তে কেউটে! দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার সরকারি বাংলো থেকে ১৫ কোটি টাকা নগদ উদ্ধারের ঘটনায় প্রবল শোরগোল পড়েছে দেশ জুড়ে। এই আবহেই ফের সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্কের প্রায় ৯৮ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে ২০১৮ সালে সিবিআই এবং ইডি যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করেছিল।
টাকা তছরুপের অভিযোগে নাম জড়িয়েছিল বিচারপতি ভার্মার-
সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের সাম্ভাউলি চিনিকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওই পরিমাণ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল। কৃষকদের টাকা মেটাতে ওই টাকা ব্যাঙ্কের থেকে ধার করেছিলেন চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই টাকা নয়ছয় বলে ব্যাঙ্ক অভিযোগ জানায়। সিবিআই-এর এফআইআরে নাম ছিল যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে। সিবিআই জানায়, ২০১২ সালে যখন তছরুপের অভিযোগ ওঠে, সেই সময় যশবন্ত ওই চিনিকলের নন-এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন। এফআইআরে ১০ নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে নাম ছিল ভার্মার। এলাহাবাদ হাইকোর্ট তছরুপের অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট গত বছর এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দেয়। ফলে মামলাও ধামাচাপা পড়ে।
বিচারপতির সরকারি বাংলো থেকে উদ্ধার বিপুল পরিমান নগদ টাকা-
জানা গিয়েছে, ১৪ মার্চ হোলির সময় বিচারপতি ভার্মার বাড়িতে আগুন লাগলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা দমকলে ফোন করেন। বিচারপতি সেইসময় শহরের বাইরে ছিলেন বলেই জানা যাচ্ছে। এরপর দমকল আগুন নেভাতে এসে বাংলোর একটি ঘরে থরে থরে সাজানো বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করে। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের মারফত সেই খবর পৌঁছায় শীর্ষ আদলতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার কাছে। এরপরেই তাঁর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ৫ সদস্যের কলেজিয়াম সিদ্ধান্ত নেয় বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদে বদলি করার।
বিচারপতি যশবন্ত ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও সেখানেও দেখা দিয়েছে সমস্যা৷ এলাহাবাদ হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন এই সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা করে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ‘আস্তাকুঁড়’ নন৷ সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পরেই এলাহাবাদ হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি যশবন্ত ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের অবাক করেছে৷ আমরা ট্র্যাশ বিন নই৷’
তবে শেষ অব্দি পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে৷ কেন্দ্র তাতে সিলমোহর দিলেই বিচারপতি ভার্মার বদলি প্রস্তাব কার্যকর হবে৷
কে এই বিচারপতি ভার্মা?
দিল্লি হাইকোর্টের ওয়েবসাইট অনুসারে, ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন যশবন্ত৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হংসরাজ কলেজে বিকম (অনার্স) পাশ করে পরে মধ্যপ্রদেশের রেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। বিচারপতি ভার্মা ১৯৯২ সালের ৮ অগাস্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করেছিলেন।
হাইকোর্টের ওয়েবসাইট অনুসারে, তিনি সংবিধান এবং শ্রম বিরোধ সম্পর্কিত বিষয়গুলি পরিচালনা করতেন, সেইসাথে শিল্প ও কর্পোরেশন এবং কর নিয়ন্ত্রণকারী আইন বিষয়ক কাজও তাঁর কাজের অংশ ছিল। ২০০৬ সাল থেকে তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিশেষ আইনজীবী ছিলেন। পরবর্তীকালে, তিনি সেখানকারই প্রধান স্থায়ী আইনজীবী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীকালে বিচারপতি ভার্মা ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর এলাহাবাদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। দিল্লি হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিচারপতি ভার্মা ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷ এরপর ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন।
বিচারপতি ভার্মার পদত্যাগ দাবি-
যদিও এই বিপুল পরিমান টাকা উদ্ধারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ভার্মার এই বদলিকে তাঁর অপরাধের লঘু দন্ড হিসাবেই মনে করছেন বিচার বিভাগের বহু মানুষ। তাঁরা বিচারপতি ভার্মার পদত্যাগ দাবি করছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমান ঘুষের টাকা বাড়িতে রেখেছিলেন তিনি। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিচারপতি ভার্মার কোনও মন্তব্য মেলেনি।