নিউজ ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ। শিবসেনার কর্মী-সমর্থকদের রোষের মুখে পড়লেন কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরা। সম্প্রতি একটি স্ট্যান্ড-আপ শো চলাকালীন মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে দল পরিবর্তনের জন্য কমেডিয়ান কুণাল কামরার করা কটাক্ষ নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে মস্করা করায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্র। ক্ষিপ্ত শিবসেনা। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে গ্রেফতারের অভিযোগও দায়ের হয়েছে।
কে এই কুনাল কামরা?
কুনাল কামরা ভারতের একজন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। কামরার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মুম্বাইতে। তিনি জয় হিন্দ কলেজে বাণিজ্য বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রসূন পান্ডের বিজ্ঞাপন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা করকোয়েস ফিল্মসে প্রযোজনা সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন, যেখানে তিনি এগারো বছর কাজ করেন। এরপর ২০১৩ সালে মুম্বাইয়ের ক্যানভাস লাফ ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি একজন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান হিসেবে অভিনয় শুরু করেন।
কমেডিয়ানের ছদ্মবেশে কোন রূপ কুণাল কামরার ?
তবে এই দেশের বেশিরভাগ তরুণ মনে করে যে কুনাল কেবল একজন কৌতুকাভিনেতা। কিন্তু তার এই পরিচয়ের পেছনে রয়েছে আরেক মানুষ। উমর খালিদ এবং দিল্লি দাঙ্গার মূল পরিকল্পনাকারীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুনাল। সিএএ বিরোধী বিক্ষোভের সময় তারা একটি দল হিসেবে কাজ করছিল। নাদিম খান এবং কুণাল কামরা মোহাম্মদ জুবায়ের এবং প্রতীক সিনহার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাই তিনি গতকাল থেকে এই পরিকল্পিত প্রচারণায় সক্রিয়। তার সর্বশেষ রাজনৈতিক প্রচারণামূলক ভিডিওতে, ভিডিওর শেষে তিনি উগ্র ইসলামপন্থী এবং দিল্লি দাঙ্গার মূল পরিকল্পনাকারী উমর খালিদের একটি ছবি দেখিয়েছেন। আসলে শো এর টিআরপির জন্য বরাবরই নানান বিষয়ে বিতর্কের মধ্যে থাকতে ভালোবাসেন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান কুণাল কামরা। এবারও তার অন্যথা হল না। তবে ‘কমেডি’ করতে গিয়েই এবার বেজায় বিপাকে কুণাল কামরা।
ঠিক কী ঘটেছিল?
সম্প্রতি ‘নয়া ভারত’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন কুণাল কামরা। সেই সময় দল ভেঙে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধার জন্য শিন্ডেকে কটাক্ষ করেন এবং তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যাও দেন কুণাল কামরা। কামরা নিজেই যে অনুষ্ঠানটি শেয়ার করেছেন তার একটি ক্লিপে তাকে ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ গানটি গাইতে দেখা যায়। যেখানে তিনি “থানের একজন নেতা” উল্লেখ করে শিন্ডের শারীরিক চেহারা এবং মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে তার সমীকরণ সম্পর্কে বেশ কিছু মন্তব্যও করেন। এক জায়গায় শিন্ডেকে ‘গদ্দার’ বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে, ক্লিপটিতে স্পষ্টভাবে শিন্ডের নাম উল্লেখ করেননি কৌতুকাভিনেতা।
শিবসেনার অভিযোগ-
এ ঘটনায় শিবসেনার অভিযোগ, শিন্ডের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই কাজ করেছেন কুণাল। তিনি ছাড়াও শিবসেনা (ইউবিটি) দলের প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, সঞ্জয় রাউত এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় নিরুপম সোমবার সকাল ১১টায় মারধর করার হুমকি দিয়েছেন। শিবসেনার সাংসদ নরেশ মাসকে হুমকির সুরে জানিয়েছেন, কুণাল যাতে দেশের কোথাও স্বাধীন ভাবে যাতাযাত করতে না-পারেন তা সুনিশ্চিত করবেন তাঁরা।
কুণাল কামরার গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ-
কমেডিয়ান কুণাল কামরার এমন মন্তব্যের পরেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কুণালের বিরুদ্ধে সরব হন শিন্দেসেনার কর্মী-সমর্থকেরা। ক্ষুব্ধ শিবসেনার কর্মীরা প্রথমে স্টুডিয়ো এবং পরে কুণাল কামরা যে হোটেলে থাকছেন, সেই হোটেলে ভাঙচুর করে। কুণাল কামরার গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। ইতিমধ্যেই খার পুলিশ স্টেশনে কুণাল কামরার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শিবসেনা নেতা রাহুল কানালের অভিযোগ-
এ ঘটনার প্রসঙ্গে শিবসেনা নেতা রাহুল কানালের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে যে এটি একটি “পূর্ব পরিকল্পিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। শিন্ডের সুনাম, ভাবমূর্তি এবং সদিচ্ছা নষ্ট করার জন্য একটি প্রচার। জনসাধারণের অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বক্তব্য দেওয়া, অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করা এবং একনাথ শিন্ডেকে লক্ষ্য করে মানহানিকর ইঙ্গিত ও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য কুণাল কামরার কাজগুলি কেবল আপত্তিকরই নয়, বেআইনিও”। এই অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তিনি।
কুণাল কামরার সমর্থনে পোস্ট আদিত্য ঠাকরের-
অন্যদিকে এই শোরগোলের মধ্যেই কুণাল কামরার সমর্থনে একটি পোস্ট করেছেন আদিত্য ঠাকরে। তিনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে কুণালের প্যারোডিকেও সমর্থন করেছেন। তাঁর মতে কুণাল যা বলেছেন, তা ১০০ শতাংশ ঠিক।
স্টুডিও কর্তৃপক্ষের বিবৃতি-
এ ঘটনা প্রসঙ্গে স্টুডিও কর্তৃপক্ষ তাদের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তারা “চিন্তিত এবং বিধ্বস্ত”। তারা আরও জানায়, “আমরা এখন ভাবছি, কীভাবে মুক্ত মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম দেওয়া যায় এবং তার পর কীভাবে নিজেদের এবং নিজেদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”
আর যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক আর হইচই, সেই কুণাল হাতে সংবিধান ধরে নিজের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, ‘সামনে এগোনোর একমাত্র পথ’। এই ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেই তিনি সমালোচকদের জবাব দিতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।