নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে (Bangladesh) হিন্দুদের উপর ক্রমাগত হামলা, নিপীড়ন এবং খুন-ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বিগ্ন আরএসএস। এবার তাঁদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সভা অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভায় বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। প্রসঙ্গত সম্প্রতি অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার ৩ দিনের বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। আরএসএস-এর (RSS)মুখপাত্র সুশীল অম্বেকর সাংবাদিকদের জানান আসন্ন বৈঠকে দুটি প্রস্তাবের উপর আলোচনার পর মতামত নেওয়া হবে। প্রথম প্রস্তাবে থাকছে বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা, নির্যাতন নিয়ে বিশদে আলোচনা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবে থাকছে আরআসএস-এর শতবর্ষ পালন কী করে হবে তা নিয়ে আলোচনা।
অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় সম্প্রতি মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের (Awami League)নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। ২১ মার্চ, শুক্রবার রাতে ইফতারির পর ২৫-৩০ জনের একটি দল মিছিলটি নিয়ে মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে ধাওয়া দিয়ে তিনজনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তাদের মারধরের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেনার বৈঠক ফাঁস, ফিরছে আওয়ামী লীগ (Awami League)?
সম্প্রতি ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান। বৈঠকের তথ্য ফাঁসে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় বাংলাদেশ জুড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজপথে নামে সেনাবাহিনী। জটিল এই পরিস্থিতিতে বড় কিছু হতে চলেছে বাংলাদেশে মত বিশেষজ্ঞদের।
১১ ই মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উর জামান বৈঠকে বসেন। ছাত্রনেতাদের তরফে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলাম। এই বৈঠকের তথ্য সুইডেন ভিত্তিকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বৈঠকের পরে অবশ্য হাসনাতও সোশ্যাল মিডিয়া একটি পোস্ট করেছিলেন। তারপরেই বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে বিক্ষোভ।
হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তার জন্য সেনার তরফে রাজনৈতিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। হাসনাত এই প্রস্তাব নাকচ করে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপ চলবে না, দাবি তুলেছেন।
এই ঘটনার পর কয়েকটি ছাত্র সংগঠন এবং জামাত-ই ইসলামীসহ কয়েকটি দল মিছিল করেছে। অন্যদিকে নতুন ছাত্র নেতাদের পার্টির ভেতরে ভাঙনের ইঙ্গিত মিলেছে। এত বড় বৈঠক কেন প্রকাশ্যে আনা হয়নি সেই দাবিও তুলেছেন কিছু এনসিপি নেতা। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার কারণে ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে কড়া সেনা নজরদারি চলছে। পরিস্থিতি দেখে কী সেনাবাহিনী বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে? প্রশ্নটা তুলছেন সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্দরে যখন এই ঘটনা তখন মোদীর সাথে বৈঠক করতে মরিয়া বাংলাদেশ। খুব তাড়াতাড়ি মোদী এবং ইউনূসের বৈঠক নিয়ে জল্পনা চলছে। বিমসটেক সম্মেলনে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন মোদী এবং ইউনুস। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর বার্তায় এইরকমই আভাস মিলেছে।
আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারীর হেনস্থার প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ বিজেপির
আভাস মত যদি মোদী-ইউনূস মুখোমুখি বসেন, তাহলে উঠতে পারে হাসিনার প্রসঙ্গ। হাসিনা বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে কথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠবে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে কী নতুন রূপে ফিরে আসবে আওয়ামী লীগ? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে স্মৃতি ওসকাচ্ছে অতীতে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়নের নানান ঘটনা।
বাংলাদেশে (Bangladesh) হিন্দুদের উপর নিপীড়নের নানান ঘটনা-
বেছে বেছে হামলা হচ্ছে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে। তছনচ করে দেওয়া হচ্ছে মন্দির। দেখুন বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়নের ঘটনার এক ঝলক।
.সিলেট শহরে একটি হিন্দু বাড়িতে হামলা
.চট্টগ্রামে ধর্মান্তরণের হুমকি
.মৌলভীবাজারের মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর
.লক্ষ্মীপুরে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মেরে দেওয়ার হুমকি
বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দু এক পরিবার-
অভিযোগ, সিলেট শহরে একটি হিন্দু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয় সম্প্রতি। শুধু তাই নয়, সেই পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই আবহে শিলেট এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এক বিএনপি নেত্রীর নামে। অভিযোগকারী অসীম কুমার দাসের দাবি, সিলেট মহানগর মহিলা দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক তথা ৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভাপতি জেসমিন বেগম ও তার ভাই কামাল আহমেদ তাদের বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়িতে ইট ছোড়া হয়। হকিস্ট্রিক ও কাঠের স্কেল দিয়ে অসীমবাবুর মা-বাবাকে মারধর করা হয়। বাড়ি খালি করতে হুমকি দেওয়া হয়।
ধর্মান্তরণের হুমকি-
একসময় বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন অমরনাথ দত্ত। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে এখন কলকাতায় থাকলেও, আত্মীয়-স্বজন সবাই এখন বাংলাদেশেই থাকেন। তাদের মুখেই যা শুনছেন তাতে আতঙ্কে ঘুম উড়েছে গোটা পরিবারের। তিনি বলেন,’মহিলারা শাখা সিঁদুর পরে বেরোতে পারছে না। হিন্দু বুঝে গেলে সমস্যা। প্রচুর মেয়ে নিখোঁজ। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মৌলবাদীরা বাড়ি বাড়ি হামলা করছে। রাত্রিবেলা অত্যাচার করছে। চাকরি করলে ছাড়তে হবে। নাহলে ধর্মান্তরণ করতে হবে। তালিবানি কায়দায় করা হচ্ছে। ‘
বেছে বেছে হামলা হচ্ছে হিন্দুদের ঘরবাড়িতে-
একই অভিজ্ঞতা সঞ্জয় দে-রও। কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় দে বলেন, ‘বাড়িঘর ভাঙচুর। ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। কোন কোন জেলায় হিংসা হচ্ছে, সেই নাম বলছে। জমি নিয়ে নিচ্ছে। বাড়ি ঘিরে রয়েছে।’
হিন্দু মন্দিরেও লুটপাট-
হিন্দুদের বাড়ি ঘর হামলার পাশাপাশি হিন্দু মন্দিরেও লুটপাটের ঘটনা রয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সেবাশ্রম মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এরই সঙ্গে লুটপাটও চালানো হয়। এমনকি প্রণামী বাক্স ভেঙে সেখান থেকে টাকাও নিয়ে নেয়।
সংখ্যালঘু হিন্দুদের মেরে দেওয়ার হুমকি-
বাংলাদেশে আক্রান্ত হিন্দুরা। গুড়িয়ে দেওয়া হল লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের জাগ্রত একটি মন্দির। এমনকী প্রতিমাতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের মেরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি।
এইরকম আরও অনেক ঘটনার সাক্ষী বাংলাদেশের (Bangladesh) সংখ্যালঘু হিন্দুরা। তাই এবার বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ক্রমাগত হামলা, নিপীড়নের ঘটনায় নড়েচড়ে বসছে আরএসএস (RSS)। এ প্রসঙ্গে আরএসএস-এর মুখপাত্র সুশীল অম্বেকর জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার, হামলা, হুমকি, নিপীড়ন বন্ধ করতে আমাদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে বিশদে আলোচনার পর প্রস্তাব অনুমোদিত হলে কোর কমিটির কাছে তা পেশ করা হবে’।