মুম্বই: কমেডিয়ান কুণাল কামরাকে (Kunal Kamra) তলব করল মুম্বই পুলিশ। মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে ‘গদ্দার’ কটাক্ষ করা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। কমেডিয়ানের বিরুদ্ধে শিবসেনার তরফে পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। সেই মর্মেই মঙ্গলবার কমেডিয়ানকে সমন পাঠাল মুম্বই পুলিশ। এ দিনই তাঁকে তদন্তকারী অফিসারের সামনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।
কুনাল কামরার (Kunal Kamra) বিতর্কিত মন্তব্য-
সম্প্রতি নিজের একটি শোয়ের ভিডিও ইউটিউবে শেয়ার করেন কুণাল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তাতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেন তিনি। কিন্তু সেই ভিডিও মনঃপুত হয়নি অনেকেরই। কুণালের কিছু মন্তব্যে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা। ভিডিও আপলোড করার পর থেকেই বিতর্ক, হুমকি, ভাঙচুর। কিন্তু নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন না তিনি। পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন কৌতুকশিল্পী কুণাল কামরা। কুণাল জানিয়েছেন, যা বলেছেন, তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তিনি উন্মত্ত ভিড়কে ভয় পান না। ভয় পেয়ে খাটের নীচে লুকিয়েও থাকবেন না তিনি। বিতর্ক থিতিয়ে যাওয়া পর্যন্ত গা ঢাকা দেওয়ার কোনও অভিসন্ধিও নেই তাঁর।
তবে কুনাল কামড়ার (Kunal Kamra) এই ঘটনা স্মৃতি ফেরাচ্ছে বাংলায় নুপূর শর্মার সেই বিতর্কিত মন্তব্যের। ২০২২ সালে তাঁর একটি মন্তব্যে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য থেকে দেশ। সে সময় বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র ছিলেন নুপূর শর্মা। যদিও বিতর্কিত মন্তব্যের পর ক্ষমা চাইলেও সেই পদ হারিয়েছেন তিনি।
নূপুর শর্মার (Nupur Sharma) বিতর্কিত মন্তব্য-
একটি টেলিভিশন ডিবেট শো-তে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্র। সেই মন্তব্যের জেরে ক্ষোভ ছড়ায় সারা দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরাও ওই মন্তব্যের নিন্দা করেছিল। সে সময় জুবেইর জ্ঞানবাপী মসজিদের মামলার উপর একটি টিভি ডিবেট শো থেকে ৮৬ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ টুইট করেন নুপূর শর্মা। সেখানেই নবি মহম্মদের (Prophet Muhammad) বিয়ে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় নূপুরকে। আর নূপুরের সেই মন্তব্যের পরই কানপুরে শুরু হয়ে যায় উত্তেজনা। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বহু মানুষ। এমনকি নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিসও জারি করেছিল কলকাতা পুলিশ (Kolkata police)। তার এই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে ধমকও দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, নূপুরের মন্তব্য মানুষের আবেগ উস্কে দেওয়ার মতো। নূপুর টিভিতে গিয়ে সারা দেশের কাছে ক্ষমা চান। অবিবেচকের মতো মন্তব্য করায় হিংসায় উস্কানি দিয়েছেন তিনি। নূপুরের মন্তব্যে সারা দেশে আগুন জ্বলেছে। এর জন্য দায়ী একমাত্র তিনি। একটি জাতীয় দলের মুখপাত্র হওয়ার অর্থ এই নয় যে তিনি যা খুশি বলতে পারেন।
নিজের অবস্থানে অনড় কুণাল কামরা (Kunal Kamra)-
এবার কথা হচ্ছে সে সময় নূপুর শর্মার এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে যদি তার এমন পরিণতি হয় তবে কুনাল কামরা এই মন্তব্য করে কেন পার পেয়ে যাবেন? প্রসঙ্গত এ প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশও। তিনি কুণাল কামরাকে তীব্র ভর্ৎসনা করে জানান, কমেডি করার অর্থ কাউকে অসম্মান করা হয়। একনাথ শিন্ডের কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানান। যদিও নিজের অবস্থানে অনড় কুণাল কামরা। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষমা চাইবেন না। তবে আইনি নির্দেশ মেনে চলবেন। তাঁর মতে, ভারতীয় সংবিধানের বাক স্বাধীনতার অধিকার অনুযায়ী, কোনও রাজনীতিবিদকে নিয়ে রসিকতা করা আইনত অপরাধ নয়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বাক স্বাধীনতার অধিকারের অজুহাত দিয়ে কৌতুকের আড়ালে একনাথ শিন্ডেকে কটাক্ষ করে যেভাবে কুনাল নিজের পিঠ বাঁচাতে চাইছে তা কি আদেও ঠিক? শেষমেশ কী পরিনতি হবে কুনাল কামড়ার? গোটা দেশ এখন তারই অপেক্ষায়।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি প্রতিরোধে নকশা তৈরি কলকাতা পুরসভার, ৬৮টি ওয়ার্ডকে ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত
কুনাল কামড়াকে সমর্থন বিরোধী শিবিরের-
কুনাল কামড়ার এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধী দলের অনেক রাজনীতিবিদরাই। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা উদ্ধবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে সহ অনেকেই কুনালকে সমর্থন করেছেন। গতকাল কুণাল কামরার সমর্থনে একটি পোস্ট করেছেন আদিত্য ঠাকরে। সেই পোস্টে তিনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে কুণালের প্যারোডিকেও সমর্থন করেছেন। তাঁর মতে কুণাল যা বলেছেন, তা ১০০ শতাংশ ঠিক। কুনালের এই মন্তব্যের পর তার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চনও। তিনি এদিন কুনালের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছেন এবং মুম্বইয়ের যে ভেন্যুতে তার শো-টি চিত্রায়িত হয়েছিল, সেখানে ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তবে উল্লেখ্য বিষয় হল যারা আজ কুনালের এহেন মন্তব্যের পর তার সমর্থনে তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন একদিন সেই বিরোধী দলের নেতারাই নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কেন্দ্রের শাসক দলকে বিতর্কের মাঝে ঠেলে দিয়েছিল। এমনকি বিজেপি-র জাতীয় মুখপাত্রকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। রাজ্য থেকে দেশ উত্তাল হয়েছিল। কুণাল আর নূপুরের বিরুদ্ধে কেন এই দ্বিচারিতা ইন্ডি জোটের? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।