নিউজ ডেস্ক: লন্ডনে শিল্প বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার তিনি ভারতীয় দূতাবাসে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানকার বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বাংলার বেকারত্ব (unemployment)হ্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরলেন। বললেন, সব জায়গায় বেকারত্ব বাড়ছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাংলার বেকারত্ব কমেছে ৪৬ শতাংশ। এটা বড় সাফল্য নয়? ২০১৭-২০১৮ থেকে ২০২৩-২০২৪ সালের মধ্যে আমরা আমাদের বেকারত্ব ৪৬ শতাংশে কমিয়ে এনেছি।বিরোধীরা বলছে, এর থেকে পরিহাসের কথা আর কী হতে পারে। রাজ্যে যেখানে দশকের পর দশক চাকরি নেই, সেখানে বেকারত্ব প্রসঙ্গে মুখ খুলছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শিল্প বৈঠক থেকে কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)?
এদিন বৈঠকের শুরুটাই হয় ভারতীয় দূতাবাসে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে। বিষয় লন্ডন-কলকাতা সরাসরি বিমান। বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই উড়ান ফের চালু করার জন্য ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে আর্জি করলেন মমতা। তার পরপরই বাংলার রেখা মানচিত্র এঁকে বুঝিয়ে দিলেন, কেন ব্রিটেন বাংলাকেই বিনিয়োগের জন্য বেছে নেবে! বললেন বাংলা এমনই, যেখানে কোনও রকম চিন্তা নেই, ক্লান্তি নেই। যেখানে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৩৭ শতাংশ, বাংলায় সেটাই ৬.৮০ শতাংশে। যাবতীয় জায়গায় যখন বেকারত্বের জ্বালা বাড়ছে, সেখানে বাংলাই ৪৬ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছে।
এক এক করে পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) দাবি, “বাংলায় ৯৪টি সামাজিক প্রকল্প রয়েছে। আগে বিপিএল বা দারিদ্রসীমার নীচে ছিলেন ৫৭ শতাংশ মানুষ। এখন তা কমে ৮ শতাংশ হয়েছে। বেকারত্বের যে কথা বলছিলাম তার রেশ টেনে বললেন, “বলতে হবে দেউচা পাচামির কথা। যা বাংলায় সবচেয়ে বড় কয়লা খনি। দেউচার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজ শেষ হলে আগামী ১০০ বছর বিদ্যুৎ নিয়ে কোনও চিন্তা থাকবে না। বাংলায় আগে খুব কারেন্ট চলে যেত। এখন সেই ঘাটতি মিটেছে। বরং দেউচা হলে বিদ্যুতের দাম আরও কমে যাবে।”
অতীতের বাম সরকারের কথা তুলে মমতা আরও বলেন, “ম্যানুফ্যাকচার এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আমরা এগিয়ে থেকেও পরে গরিমা হারাই। যা আমাদের সরকার আবার ফিরিয়ে এনেছে। আবার আমরা শীর্ষে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আমরা শীর্ষে। একাধিক ইন্ডাস্ট্রি পার্ক, মহিলা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও বাংলা প্রাধান্য দেয়।”
এদিন মমতার বক্তৃতায় উঠে আসে মহিলাদের ক্ষমতায়নের খতিয়ানও। তাঁর কথায়, “মহিলা ক্ষমতায়নে দেশে আমরা এক নম্বরে রয়েছি। অন্যেরা মুখে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষিত জনপ্রতিনিধির কথা বললেও আমার দলে ৩৯ শতাংশ নির্বাচিত সাংসদ মহিলা। আমি নিজে সাত বারের সাংসদ, তিন বারের বিধায়ক। ২০০৪ সালে বিরোধীদের থেকে যখন কেউ জিততে পারেনি, তখনও আমিই জিতেছিলাম। একমাত্র আমি।”
সর্বাধিক বেকারত্ব হারের নিরিখে দেশের মধ্যে নবম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ-
একদিকে যখন লন্ডনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় বেকারত্ব হ্রাস প্রসঙ্গে মন্তব্য করছে, ঠিক সেই সময়ই রাজ্যের দিকে তাকালে উঠে আসছে অন্য তথ্য। যুবপ্রজন্মের মধ্যে সর্বাধিক বেকারত্ব হারের নিরিখে দেশের প্রথম দশে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস’-র তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের যুবপ্রজন্মের (১৫ বছর থেকে ২৯ বছর) মধ্যে বেকারত্বের হার হল ৯ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ৮.৫ শতাংশে ঠেকেছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার কিছুটা বেশি – ১০ শতাংশ। সার্বিকভাবে সর্বাধিক বেকারত্ব হারের নিরিখে দেশের মধ্যে নবম স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ।
পশ্চিমবঙ্গের যুবপ্রজন্মের বেকারত্বের হারের চিত্র-
১) গ্রামাঞ্চল: বেকারত্বের হার ৮.৫ শতাংশ। পুরুষদের বেকারত্বের হার ৮.৫ শতাংশ। মহিলাদের বেকারত্বের হার ৮.৬ শতাংশ।
২) শহরাঞ্চল: মোট বেকারত্বের হার ১০.৩ শতাংশ। পুরুষদের বেকারত্বের হার ৮.৫ শতাংশ। মহিলাদের বেকারত্বের হার ১৩.৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: আবার উত্তপ্ত জগদ্দল, বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের বাড়ির সামনে চলল গুলি, পড়ল বোমা
সুকান্ত মজুমদার-
প্রসঙ্গত এ রাজ্যের বেকারত্বের সমস্যা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, বেকারত্বের সমস্যা পশ্চিমবঙ্গে ক্রনিক রোগে পরিণত হয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা আজ দিশা হারা, কাজের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হালও তথৈবচ, দূর্নীতি বাসা বেঁধেছে সর্বক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন-
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যাবে ১৯৪৭ সালে গোটা দেশে ২৪ শতাংশ শিল্প ছিল পশ্চিমবঙ্গের। যা এখন ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তথ্য বলছে, গত কুড়ি বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু রোজগারের হার (WB Economy) দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক পিছনে রয়েছে। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে পিএম আবাস যোজনা থেকে শুরু করে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির প্রসঙ্গে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman)। ইতিহাসের পাতা থেকে তুলনা টেনে বাংলার শিল্পের বেহাল দশাও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের অবদান ৫.৮ শতাংশ। বাংলা এখন অবদানের নিরিখে দেশের নবম রাজ্য।