নিউজ ডেস্ক: বিচারপতিদের নিয়োগ করবেন বিচারপতিরাই— এই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে ২০১৪ সালেই মোদী সরকার জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন এনেছিল। সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে সেই বিল পাশও হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আইনকে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয়। সম্প্রতি দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার (Justice Yashwant Varma) বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের পরে মোদী সরকারের অন্দরমহলে ফের আলোচনায় উঠে এল সেই বিচারপতি নিয়োগ আইন।
প্রসঙ্গত, দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে নগদ উদ্ধারের পরে নতুন করে বিচারপতি নিয়োগের বর্তমান ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তার পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে মোদী সরকার কী ভাবছে, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা।
বিকল্প বিচারপতি আইন কী?
বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইনে বলা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন তৈরি হবে। সেখানে আরও দুই প্রবীণ বিচারপতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী ও দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকবেন। দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাছাই করবে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতার প্যানেল। এই কমিশন সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের প্রাথমিক বাছাই করবে। রাষ্ট্রপতি তাঁদের নিয়োগ করবেন। ২০১৪ সালে এই বিল এনে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল।
বিকল্প বিচারপতি আইনের মূল উদ্দেশ্য?
বিচারপতি নিয়োগ কমিশন ফিরিয়ে আনা হলে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
এই আইনের সুবিধা, অসুবিধা-
বিচারপতি বর্মার (Justice Yashwant Varma) বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের পরে চেয়ারম্যানই প্রথম বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ওই আইন থাকলে বিচারবিভাগের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যেত। তবে বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোদী সরকার বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
আরও পড়ুন: আবার উত্তপ্ত জগদ্দল, বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের বাড়ির সামনে চলল গুলি, পড়ল বোমা
এই আইনের বিরুদ্ধে কিছু উদ্বেগ-
প্রায় সব বিরোধী দলই বিচারপতি নিয়োগে বর্তমান কলেজিয়াম ব্যবস্থায় বদলের পক্ষে। আজ উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় রাজ্যসভার দলনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তার আগে তিনি রাজ্যসভায় জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “২০১৫ সালে সংসদে সর্বসম্মতিতে আইন তৈরি হয়েছিল। অর্ধেক রাজ্য সিলমোহর দিয়েছিল। এখন ফের সেই ঐতিহাসিক পথে হাঁটার উপযুক্ত সময়।” কিন্তু সেই বৈঠকে তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি সভাপতি তথা রাজ্যসভার নেতা জে পি নড্ডার কাছে— সুপ্রিম কোর্ট সেই বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিয়েছিল। তা হলে এখন শাসক পক্ষ কোন পথে এগোতে চাইছে? ফের কি একই রকম আইন পাশ করা হবে? সুপ্রিম কোর্ট ফের তা খারিজ করে দিলে তার ফল কী হবে? এ বিষয়ে সরকার কি কোনও প্রস্তাব আনছে? সরকার কি কোনও আইন আনবে? না কি দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতিকে পদ থেকে সরানো বা ইমপিচমেন্ট-এর প্রক্রিয়া শুরু হবে?
আইনটি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ-
আজকের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, বিচারপতি নিয়োগ ব্যবস্থায় রদবদল নিয়ে তাঁরা আলোচনায় রাজি। তবে আগে সরকার প্রস্তাব আনুক। বিচারপতি নিয়োগে যেমন স্বচ্ছতা প্রয়োজন, তেমনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও জরুরি। এরপর এ প্রসঙ্গে জেপি নড্ডা (JP Nadda) জানান, তিনি এনডিএ শরিকদের সঙ্গে কথা বলে ফের বিরোধীদের সঙ্গে বসবেন।
গত ১০ বছরে ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন করা হয়েছে?
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের আমলে বিগত ১০ বছরে ভারতের বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৮,০০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বিগত ২৫ বছরে বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে তার ৭৫% ২০১৪-২৪ সালে খরচ করা হয়েছে। জেলা ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ৭,৫০০ কোর্ট হল তৈরী করা হয়েছে। জেলা ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার জন্য ১১,০০০ আবাসিক ইউনিট তৈরী করা হয়েছে।