কাশ্মীর: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, কাশ্মীর উপত্যকা রেলপথের (Kashmir rail) মাধ্যমে যুক্ত হতে চলেছে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৯ এপ্রিল, ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) কাটরা (Katra) থেকে শ্রীনগর (Srinagar) পর্যন্ত রেলপথের উদ্বোধন করবেন, এবং এদিন বিশেষ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস প্রথমবারের মতো এই রুটে চলবে। কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) উন্নয়নে এটা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
কাশ্মীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির আরও এক ধাপ-
প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে, কাশ্মীরের (Kashmir rail) যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বহু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, এই রেলপথের কাজও সেই উদ্যোগেরই অংশ। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল দিল্লি (Delhi) থেকে সরাসরি শ্রীনগর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে, তবে গোয়েন্দা রিপোর্টের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন কাটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত রেল পরিষেবা চালু করা হচ্ছে, যা রেলপথের মাধ্যমে কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের অন্য অংশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে। রেলপথের মাধ্যমে কাশ্মীরের প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, কারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এটি একটি দ্রুত ও সাশ্রয়ী মাধ্যম হয়ে উঠবে। এটি কাশ্মীরের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা হবে। কাটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত রেলপথের সূচনা কেবল একটি রেল প্রকল্পের উদ্বোধন নয়, বরং কাশ্মীরের একটি নতুন যুগের সূচনা।
গত দশ বছরে মোদী (PM Modi) জমানায় কাশ্মীরের উন্নয়ন-
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্যাকেজ-২০১৫-এর আওতায় গত ১০ বছরে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ১৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ৫৮,৪৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন-
জম্মু ও কাশ্মীরের যোগ্য কৃষকদের কাছে পিএম কিষাণ (PM Kisan) বিতরণ করা হয়েছে। ১২.৫৫ লক্ষ যোগ্য কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ২,৫১৭.০৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। কেসিসির (KCC) আওতায় ১২.৮৩ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ২৯০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ঘনত্বের চাষ করা হয়েছে যার মধ্যে ৩২০ হেক্টর আপেল (Apple) এবং ২৪০০ হেক্টর উপ-ক্রান্তীয় ফলের চাষ রয়েছে যা উপযুক্ত বাজার সরবরাহের পাশাপাশি আপেল চাষীদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
জেড-মোড় সুড়ঙ্গের উদ্বোধন-
সম্প্রতি শ্রীনগর ও লাদাখের মধ্যে সংযোগকারী জেড-মোড় সুড়ঙ্গের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রীনগর (Srinagar) থেকে লাদাখের (Ladakh) দূরত্ব কমাতে এই সুড়ঙ্গের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার এই সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য মোট ১২ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৮ হাজার ফুটেরও বেশি। কাশ্মীরে প্রতি মুহূর্তে বদলাতে থাকা আবহাওয়ার জেরে হামেশাই শ্রীনগর থেকে কার্গিল কিংবা লাদাখের পথে যেতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়তে হয় সেনা-জওয়ানদের। এই সুড়ঙ্গের হাত ধরে সেই বাধা বিপত্তি কমবে বলেই জানা গিয়েছে। এছাড়াও, পর্যটনেও বাড়তি গতি আনবে জেড-মোড় সুড়ঙ্গ (Kashmir Tunnel)।
শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন-
কাশ্মীরকে (Kashmir) উত্তর ভারতের একটি প্রধান শিক্ষাকেন্দ্রে রূপান্তরিত করার জন্য একটি বহুমুখী পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা স্কুল-কলেজ উন্নতির পাশাপাশি, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। আইআইটি এবং আইআইএম-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি ইতিমধ্যেই কার্যকর। অন্যদিকে বর্তমানে কাশ্মীরে ২২ টিরও বেশি কলেজ এবং দুটি নতুন সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র স্তরে, ছাত্রদের আরও ভালো স্কলারশিপ স্কিম দেওয়া হচ্ছে, যা সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি সমাজের দরিদ্রদেরও সাহায্য করে। ৭টি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু করা হয়েছে। ২৮টি বি.এসসি. নার্সিং কলেজ এবং ১৯টি বি.এসসি. প্যারামেডিক কলেজ যুক্ত করা হয়েছে। আরও ৮০০টি এমবিবিএস আসন যুক্ত করে মোট আসন সংখ্যা ১৩০০ করা হয়েছে। বর্তমানে ৬৬৪টি পিজি মেডিকেল আসন রয়েছে যার মধ্যে ২০১৯ সালের পরে ২৯৭টি পিজি আসন যুক্ত করা হয়েছে। নার্সিং কলেজগুলিতে ১৮৭০টি বি.এসসি. নার্সিং আসন এবং ১২৫টি এম.এসসি. নার্সিং আসন যুক্ত করা হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তায় মোদী সরকারের সাফল্য-
জাতীয় নিরাপত্তায় মোদী সরকারের সাফল্য নিয়ে অমিত শাহ বলেন, “গত দশ বছরে মোদী সরকার দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এনেছে। জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বামপন্থী উগ্রবাদী এলাকাগুলিতে সন্ত্রাসবাদ কমেছে”।
৩৭০ ধারা বাতিল ও কাশ্মীরের উন্নয়ন-
৫ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Modi) নেতৃত্বে ভারত সরকার রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা, ৩৭০ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৩৭০ ধারা বাতিল ও কাশ্মীরের উন্নয়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কাশ্মীরের সিনেমা হলগুলি সন্ধ্যায় খোলা থাকে, মহরমের মিছিল হয়, জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে”।
ভূ-স্বর্গে সন্ত্রাসবাদে মৃত্যু ৭০ শতাংশ কমেছে-
এ প্রসঙ্গে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যার ফলে সন্ত্রাসী হামলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাতেই সন্ত্রাসবাদ পিছু হটছে বলে দাবু আমিত শাহ-র।
হস্তশিল্পের উন্নয়ন-
কাশ্মীর সারা বিশ্বে তার হস্তশিল্পের জন্য পরিচিত। এর কার্পেট, সিল্ক, শাল, ঝুড়ি, মৃৎপাত্র, তামা ও রৌপ্যপাত্র, এবং আখরোট কাঠের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে কাশ্মীরের এই কুটির হস্তশিল্প শিল্প প্রায় ৩,৪০,০০০ কারিগরদের সরাসরি এবং লাভজনক কর্মসংস্থান প্রদান করে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে কাশ্মীরের এই শিল্পকে আরও বৃহত্তর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাশ্মীরি হস্তশিল্পের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক জার্মানির সাথে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা চালু করা হয়েছে।
বিমান চলাচল দ্বিগুণ-
২০১৯ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে বিমান চলাচল দ্বিগুণ করা হয়েছে। জম্মু ও শ্রীনগরে রাতের বেলায় অবতরণের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
জল জীবন মিশন-
জল জীবন মিশনের অধীনে, মিশন শুরু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ আগস্ট ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ১৩.৫৪ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারকে নলের জলের সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০১৯ সালের আগে ৫.৭৫ লক্ষ পরিবার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পর্যটনক্ষেত্রে উন্নয়ন-
জি-২০ এর তৃতীয় পর্যটন কার্যনির্বাহী সভা জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরেছে এবং জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটনের অগ্রগতি ও উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে। সাম্প্রতিক অতীতে, জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu-Kashmir) পর্যটন খাত ব্যতিক্রমীভাবে ভালো করেছে এবং ২০২২ সালে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ১.৮৮ কোটিরও বেশি পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। চলতি ক্যালেন্ডার বছরেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে কারণ ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১.৮৫ কোটি পর্যটকের আগমন লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও গত ১০ বছরে মোদী জমানায় আরও একাধিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে এগিয়েছে কাশ্মীর।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ধীরে ধীরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে কাশ্মীর (Jamm and Kashmir) বাসী। এলাকায় শান্তি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বদলে এসেছে জীবন ধারায়। পর্যটনে গতি ফিরে আসায় মানুষের হাতে টাকা আসছে। মুখে হাসি ফিরছে উপত্যকাবাসীর।