নিউজ ডেস্ক: ‘ছাবা’ (Chhaava), যে সিনেমা কিনা মুক্তির পর থেকেই নানা কারণে চর্চার শিরোনামে এবার সেই ছবিই প্রদর্শিত হবে সংসদে। বৃহস্পতিবার এই ছবির স্পেশাল স্ক্রিনিং-র মন্ত্রীদের সঙ্গে সম্ভাজির গৌরবগাথা দেখবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। এর আগে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বিক্রান্ত মাসের ‘সবরমতী এক্সপ্রেস’ ছবিটি দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি দেখে বেরিয়ে তাঁর এক্স প্রোফাইলে ছবির প্রশংসাও করেছিলেন। আর এবার ভিকি কৌশলের বক্স অফিস কাঁপানো ছবি ‘ছাবা’ দেখবেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, ছবিটির নির্মাতারা থেকে শুরু করে নায়ক ভিকি কৌশল-সহ বাকি অভিনেতারাও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে খবর।
সংসদে ‘ছাবা’ ঝড়-
বরাবরই নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) দেশের সংস্কৃতি, শিল্পকলাকে প্রাধান্য দেন। তাঁর বক্তৃতায় সব সময়ই ফুটে ওঠে দেশের শিল্পের কথা। গোটা বিশ্বে ভারতকে উজ্জ্বল করতে, আমাদের দেশের শিল্প-সংস্কৃতির যে সক্রিয় প্রভাব রয়েছে, সে কথা বরাবরই তাঁর বক্তব্যে ফুটে ওঠে। আর সেই কারণেই ছাবা ছবিতে যেভাবে মারাঠা রাজত্বের ইতিহাসকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেই ইতিহাসকে সাক্ষী করতেই এই ছবি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্বভাবতই এই খবরে খুশি ভিকি কৌশল ও ছবির গোটা টিম।
ছাবার (Chhaava) গল্প-
ছত্রপতি শিবাজীর মৃত্যুর পর যখন মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব সবে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছেন তখনই তাঁর ঘুম ওড়ায় ‘ছাবা’ সম্ভাজি। বুরহানপুর দখল করে বুঝিয়ে দেয় সিংহ মরে গেলেও তার ‘ছাবা’ ঘুরে বেড়াচ্ছে। একদিকে বাবার স্বরাজ গঠন পূরণ করার স্বপ্ন, আরেকদিকে ঔরঙ্গজেব, সঙ্গে রয়েছে নিজের পরিবারের বিশ্বাসঘাতকেরা। সবের সঙ্গে যুঝে কীভাবে লড়াই চালিয়ে যান সম্ভাজি, তাঁর জীবনে শেষ লড়াইয়ে কী কী ঘটে, কোন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তাঁকে মারা হয় সেটাই দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
ছাবা বিতর্ক (Chhaava controversy)-
প্রসঙ্গত, এই সিনেমা প্রকাশের পর থেকেই মারাঠা আবেগে শান দিয়ে দর্শকদের মনস্তত্ত্বেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। এই সিনেমার দৌলতেই মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের (Aurangzeb) কবর সরানোর দাবি নিয়ে বর্তমানে উত্তাল মহারাষ্ট্র। আর সেই বিতর্কের মাঝেই এবার সেই সিনেমার পার্লামেন্ট যাত্রা। আসলে এই ছবিতে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের চরিত্রটিকে নিয়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ভিকি কৌশলের ছাবা। যদিও ছবির সাফল্যের প্রশংসা আগেই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিতর্ক প্রসঙ্গে ফড়নবিশ (Devendra Fadnavis)-
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বিধানসভায় নাগপুর হিংসা নিয়ে বলতে উঠে ছাবা বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। তবে ফড়নবিশ অবশ্য নাগপুরের হিংসাত্মক ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে বর্ণনা করেন। তিনি সকলের কাছে রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান।
আরও পড়ুন: ফালাকাটায় খাঁচাবন্দি চিতাবাঘ, স্বস্তি চা শ্রমিকদের
নাগপুরে কী হয়েছিল?
জানা যায়, ঔরঙ্গজেবের কবর অপসারণের দাবিতে একটি সংগঠন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল নাগপুরে। সেই সময় মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র গ্রন্থ পোড়ানো হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজবের খবর বাংলাদেশ থেকে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছিল বলে জানা গেছে। এরপর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পরে হিংসা থামাতে গিয়ে ২৫ জন পুলিশকর্মী জখম হন। সঙ্গে জখম হন ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরাও।
ছাবা বিতর্কে একনাথ শিন্ডে-
অন্যদিকে উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে (Eknath Shinde) এ বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, যাঁরা ঔরঙ্গজেবের সমর্থক, তাঁরা যেন ইতিহাসটা পড়ে নেন এবং ছাবা সিনেমাটি একবার দেখে নেন। তাঁর দাবি, দেশের কোনও সাচ্চা মুসলিমও ঔরঙ্গজেবকে সমর্থন করেন না।
তবে এত বিতর্কের মাঝেও ছবি মুক্তির পর পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। ষষ্ঠ সপ্তাহে এসে কিছুটা হলেও শ্লথ হয়েছে ভিকি কৌশল অভিনীত ছাবা (Chhaava) ছবিটির বক্স অফিস কালেকশন। প্রায় ৬০০ কোটির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে এখন এই ছবিটি। আর যে কথা না বললেই নয়, যে ছবি নিয়ে দেশ জুড়ে রাজ্য রাজনীতিতে এত বিতর্ক আজ সেই ছবিই শত বাধা পেরিয়ে পৌঁছল সংসদে। এবার শুধু অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের।