তামিলনাড়ু: সম্প্রতি তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) তিরুপাত্তুরের (Tirupattur) কাছে তালপাতার উপর খোদাই করা বাল্মীকি রামায়ণের (Valmiki Ramayana) প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো একটি তামিল অনুবাদ আবিষ্কৃত হয়েছে। জানা যায়, এই রাজ্যের কবি, কবি কাম্বার ঋষি বাল্মীকির লেখা মহাকাব্যটি মূলত ছয় খণ্ডে- তামিল ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন এবং চোল শাসনামলে শ্রীরঙ্গম মন্দিরে এটি প্রকাশ করেছিলেন। এই আবিষ্কারের ফলে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে এই পাণ্ডুলিপি তামিলনাড়ুতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাঠ করা হত। আর সবচেয়ে কাকতালীয় বিষয় হল রাম নবমীর মাত্র এক সপ্তাহ আগেই এই পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার হল।
তিরুপাত্তুর সার্কেল ইন্সপেক্টর নরসিংহমূর্তি (Tirupattur Circle Inspector Narasimhamoorthy) কালহস্তীশ্বর মন্দিরের সংস্কারের সময় পাঁচটি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। এরপর তালপাতার বান্ডিলগুলি খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি হিন্দু ধর্মীয় ও দাতব্য দান বিভাগ (Hindu Religious and Charitable Endowments Department) কে জানানো হয়। খবর পেয়ে স্ক্রোল প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী যুগ্ম কমিশনার হরিপ্রিয়া, সেগুলি পরীক্ষার জন্য একটি দল নিযুক্ত করেন।
স্ক্রোল প্রকল্পের সমন্বয়কারী থামারাই পান্ডিয়ান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ওই পাঁচটি বান্ডিলে ২,০৭৫টি তালপাতার পাণ্ডুলিপি রয়েছে। বান্ডিলগুলির মধ্যে রয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের (Valmiki Ramayana) বালকাণ্ড, অযোধ্যা কাণ্ড, অরণ্য কাণ্ড, কিষ্কিন্ধা কাণ্ড এবং সুন্দর কাণ্ড। তবে, যুদ্ধ কাণ্ডর কোনও পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, সম্ভবত উইপোকা বা ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে তা নষ্ট হয়ে গেছে। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে বাল্মীকি রামায়ণ তামিলনাড়ুতে কম্ব রামায়ণের মতোই জনপ্রিয় ছিল এবং প্রতি বাড়িতে এই মহাকাব্য পড়ার চল ছিল।
এই পান্ডুলিপির শৈলীগত উপাদান বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গ্রাফোলজিস্টরা জানান, এই গ্রন্থগুলি প্রায় ১২৫ বছর আগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। তবে, মূল উৎসটি প্রায় ৩০০ বছর আগের বলে অনুমান করা হয়। আসলে সংস্কৃতে খুব বেশি দক্ষতা ছাড়াই যাতে তামিলনাড়ুর স্থানীয় বাসিন্দারা সহজেই রামায়ণের কাহিনী জানতে পারে তাই জন্যই রামায়ণের এই তামিল সংস্করণ অনুবাদ করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বহুযুগ ধরে উইপোকা ও ছত্রাকের সংক্রমনের ফলে এই পান্ডুলিপির বহু অংশই নষ্ট হয়ে গেছে, তবে রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাওয়া পৃষ্ঠাগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: কলকাতা হাইকোর্টে আজ ফের আর জি কর মামলার শুনানি
উল্লেখ্য, এর আগেও গত নভেম্বরে, তামিলনাড়ুর ভানিয়ামবাড়ির (Vaniyambadi) কাছে ২৫০ বছরের পুরনো প্রাচীন রামায়ণ পাণ্ডুলিপির আরেকটি বিরল এবং উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ঘটে। ৪১৯টি তালপাতা দিয়ে তৈরি ওই পাণ্ডুলিপিতে পদ্যের আকারে রামায়ণ লেখা ছিল।
ভারতে রামায়ণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভাষা ছাড়াও তামিল, হিন্দি, কন্নড়, ওড়িয়া, তেলেগু, বাংলা সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। আসলে তামিলনাড়ু নিজেই রামায়ণের সাথে সম্পর্কিত বহু স্থানের সাক্ষী। যার মধ্যে রয়েছে রামেশ্বরম, মারিউর, ভ্যালিনোক্কাম, জামভবন ওদাই, থাদাগাই মালাই, ভিলুইকেরি, বিজয়পাথি, গুগানপারাই, থিরুমলাই, কুন্থলুর, ভালংগাইমান, পোইমাঙ্করাডু, ভানাভাসি, থাগুদাইকুপ্পেরি সহ আরও বহু স্থান।
অনেকেই রামায়ণ কে কল্পকাহিনী বলে উড়িয়ে দেন, অনেকেই বলেন রাম দেবতা নন কেবল একটি পৌরাণিক চরিত্র মাত্র। কিন্তু এই ধরনের বিভিন্ন পান্ডুলিপি বারবার প্রমাণ করেছে শ্রী রামের অস্তিত্ব সম্পর্কে। জানা যায় কেরালার প্রতিটি বাড়িতে রামায়ণ পাঠের জন্য একটি সম্পূর্ণ মাস পালন করা হয়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মত ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে রামায়ণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। রামায়ণ শুধু এ দেশেই নয় বরং এশিয়ার বাইরে আজও অনেক দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়েছে।