কলকাতা: এবার থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বা গুরুত্বপূর্ণ কাউকে নিয়ে সেমিনার, মিটিং করা যাবে না। বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতের (Calcutta High Court) নির্দেশ-
সম্প্রতি ওয়েবকুপার বৈঠককে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়। যাদবপুরে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। সেখানেই তিনি বিক্ষোভের সম্মুখীন হন। তাঁর গাড়ি আটকে ছাত্রভোটের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ, ব্রাত্যের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়েছিল। তাতে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির কাচ ভেঙেছে এবং তিনি জখম হয়েছেন। বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের পাল্টা অভিযোগ ছিল, ব্রাত্যের গাড়ির ধাক্কায় কয়েক জন ছাত্র জখম হয়েছেন। পরবর্তীতে সেই ঘটনার জল গড়ায় আদালতে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।
সেখানেই আদালত জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে কোনও সেমিনার বা মিটিং করা যাবে না। আদালতের নির্দেশ, পড়াশোনার বিষয় ছাড়া অন্য এমন কোনও অনুষ্ঠান বা সেমিনারের আয়োজন করা যাবে না বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়েও কর্তৃপক্ষের কাছে হলফনামা চেয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে জানান, বারবার নানা কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারপরেও কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেন না। বারবার বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন পুলিশের সহযোগিতা চান না? প্রশ্ন তুলেছে আদালত। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, গত কয়েক বছরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার পরেও ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশি সহযোগিতা চেয়ে রাজ্যের কাছে আবেদন করেননি। কেন করেননি, তা বোধগম্য নয়। পরবর্তী শুনানির দিন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।
প্রধান বিচারপতির মন্তব্য-
বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর নাম না করেও আদালত তাঁর বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রেখেছে। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, যাদবপুরের পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক ছিল না। সেটা জানার পরও রাজনৈতিক নেতারা সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ কেন করলেন। এর বিরাট প্রভাব পড়তে পারে জেনেও তিনি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন ?” বিষয়টি স্পষ্ট নয় আদালতের কাছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি। তিন সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুনে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তো আলাদা কোনও দ্বীপরাষ্ট্র নয়। এমন কোনও মানুষ আছে, যিনি অরাজনৈতিক? এর পর তো বলা হবে, ছাত্রেরাও থাকতে পারবে না! মাস্টারমশাইরা থাকতে পারবেন না। আমার ধারণা, আদালত বলতে চেয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না, যে ভাবে ব্রাত্য বসু গিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ ভাবে মানুষ মাত্রেই রাজনৈতিক। ব্রাত্য মন্ত্রী হয়ে যাননি, তৃণমূলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন গন্ডগোল পাকানোর জন্য। ওঁকে যেতে দেওয়া উচিত নয়।’’
তবে উল্লেখ্য, এর আগে, এই মামলাটির দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘এখানে আদালতের কী করার আছে। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ডাকতেই পারে, পুলিশ ব্যবস্থা নেবে’। আর এদিন সেই মামলাতেই এমনই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে বামপন্থী ছাত্রদের বিক্ষোভ ও তার পরবর্তী অস্থিরতার প্রতিবাদে পথে নেমেছিল বিজেপি। কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে রবিবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার নবীনা সিনেমা হলের সামনে থেকে যাদবপুর থানার ১০০ মিটার আগে পর্যন্ত মিছিল করেন বিজেপি নেতা কর্মীরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। মিছিল থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সেকু – মাকু’দের উৎপাটনের ডাক দেন তিনি।