নিউজ ডেস্ক: বিগত বেশ কিছু দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিপুল পরিমাণে জাল ওষুধ (Fake Drug Racket) উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে৷ সেই ঘটনার সূত্র ধরেই এবার খবর ভিন রাজ্যের সীমানা পার করে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঢুকছে জাল ওষুধ। সেখান থেকে রাতের বাসে তা পৌঁছচ্ছে কলকাতায়। কিন্তু সেই খবর থাকার পরেও গোড়াতেই আটকানো যাচ্ছে না কেন? আমতার ঘটনার পরে জাল ওষুধ ধরতে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে সাফল্য পেলেও প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে কয়েক কোটি টাকার যে জাল ওষুধ ছড়িয়ে পড়েছে, তা ধরার মতো পরিকাঠামো কি আদৌ রয়েছে এরাজ্যে?
জাল ওষুধ শহরে নিয়ে আসতে দূরপাল্লার বাসের সাহায্য নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা-
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিপুল এই জাল ওষুধ এসেছে উত্তরপ্রদেশ থেকে। তা ছাড়াও বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড হয়েও জাল ওষুধ (Fake Drug Racket) ঢুকেছে বাংলায়। তদন্তে নেমে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, জাল ওষুধ শহরে নিয়ে আসতে দূরপাল্লার বাসের (Fake medicine transported to kolkata via bus) সাহায্য নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিমানে অথবা ট্রেনে কড়া পাহারায় ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিপুল। বাসে সে ভয় নেই। ভিনরাজ্য থেকে বাসে ওষুধ চলে আসছে ধর্মতলায়। সেখান থেকেই কুলি-মুটেরা তা মাথায় করে পৌঁছে দিচ্ছে এজরা স্ট্রিটে গিরিয়া ট্রেড সেন্টার, চিৎপুরের মেহতা বিল্ডিং, বড়বাজারের বাগরি মার্কেটে। বাক্সের ওষুধ আসল না নকল তা জানা সম্ভব নয় বাস মালিকের পক্ষে। শহর কলকাতার (kolkata) দূরপাল্লার বাস গুমটির কর্মীরা জানিয়েছেন, ভিনরাজ্য থেকে মাল আনার সময় কাগজ মিলিয়ে দেখে শুধু নেওয়া হয় কী রয়েছে কতটা পরিমাণে রয়েছে।
তবে শুধু ওষুধই নয়, মুনাফার লোভে ওষুধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ আর্থিক লেনদেনও চলছে বলে খবর৷ এমনকী রেবিসের মতো মারাত্মক রোগের নকল টিকা সরবরাহের খবরও সামনে এসেছে৷ ভেজাল ওষুধের (Fake Medicine) কারবার নিয়ে কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যে একাধিক রাজ্যকে সতর্ক করেছে৷ তবে প্রকাশ্যে এ বিষয়ে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে, ওষুধের ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, “ব্যাপারটা অনেকটাই ‘ইচ্ছা থাকলেও হাত-পা বাঁধা, তাই উপায় নেই’-র মতো অবস্থা।
তরোয়ালবিহীন নিধিরাম সর্দারের মতো করেই চলছে পুরো ব্যবস্থা-
■ রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলে ইনস্পেক্টর এবং সিনিয়র ইনস্পেক্টর মিলিয়ে ৫২টি পদ খালি।
■ চার বছর ধরে পূর্ণ সময়ের জন্য কোনও অধিকর্তা নেই।
■ নজরদারির জন্য তেমন গাড়ি নেই।
■ জেলাগুলিতে অভিযান করতে হলে গাড়ি ভাড়া করতে হয়।
■ প্রায় ৪০ শতাংশ শূন্য পদ, অথচ ২০১৮-র পরে নতুন নিয়োগও হয়নি।
■ ‘সিডিএসসিও’-র পূর্বাঞ্চলীয় শাখায় ইনস্পেক্টর মাত্র চার।
পরিকাঠামোর বিরাট খামতি-
তবে শুধু রাজ্য নয়, পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ (CDSCO)-র পূর্বাঞ্চলীয় শাখাতেও। একই সঙ্গে এ বিষয়ে মামলার বিচারের জন্য এ রাজ্যে নির্দিষ্ট আদালত বা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট নেই। ওই মামলার জন্য নির্দিষ্ট সরকারি কৌঁসুলিও নেই। ফলে দীর্ঘসূত্রিতার জন্য জাল ওষুধের কারবারে অভিযুক্ত ধরা পড়লেও, একটা সময়ের পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। আর, মামলা চলতে থাকছে বছরের পর বছর ধরে।
এ প্রসঙ্গে ড্রাগ কন্ট্রোলের প্রাক্তন কর্তাদের অনেকের দাবি, অবসর নেওয়ার পরেও বিচারাধীন তাঁদের সময়ের মামলা। কোনও ক্ষেত্রে ৮-১০ বছর ধরে বিচার চললেও, অভিযুক্তই মারা গিয়েছে। পরিকাঠামোর বিরাট খামতি রয়েছে রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরিতেও (state drugs control & research laboratory)।
ইতিমধ্যেই বাজারে ছড়িয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ-
সম্প্রতি পাইকারি বাজারে হানা দিয়ে কুড়ি লক্ষ টাকার জাল ওষুধ (Fake Medicine) ধরেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড। জানা গিয়েছে, এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ইতিমধ্যেই বাজারে ছড়িয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ। এজরা স্ট্রিটে গিরিয়া ট্রেড সেন্টার, চিৎপুরের মেহতা বিল্ডিং, বড়বাজারের বাগরি মার্কেটে সম্প্রতি ছ’টি টিমে ভাগ হয়ে হানা দিয়েছিল রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডের উনিশ ইন্সপেক্টর। প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এখান থেকে।
কোন লোভে জাল ওষুধ কিনছে পাইকারি বিক্রেতারা?
জানা গিয়েছে, জাল ওষুধ (Fake Medicine) যারা তৈরি করছে তারা বিপুল লাভের লোভ দেখাচ্ছে বিক্রেতাদের। খাঁটি ওষুধ বিক্রি করলে যে লাভ মেলে তার দ্বিগুণ লাভের লোভ দেখিয়ে বাজারে চলে আসছে এই জাল ওষুধ। পাইকারি বাজার থেকে তা ছড়াচ্ছে খুচরো বাজারে। নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ নির্মাতা সংস্থাকে ইন্টিগ্রেটেড ফার্মাসিউটিক্যাল ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে নিজের নাম রেজিস্টার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যারা জাল ওষুধ তৈরি করছে তাদের নাম আদৌ রেজিস্টার রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ড।