নিউজ ডেস্ক: পাম্বান রেল সেতুর সঙ্গে পরোক্ষে রামায়নেরও যোগ রয়েছে। একথা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই।মান্নান উপসাগরের উপর নির্মিত ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু পাম্বান। আর এই রামেশ্বরমেই লুকিয়ে রয়েছে রাম-লক্ষণ ও সীতার যোগ। কীভাবে?
রামেশ্বরম দ্বীপটি সেই স্থান হিসেবে বিখ্যাত যেখানে রামের সেনাবাহিনী শ্রীলঙ্কায় পৌঁছানোর জন্য এবং সীতাকে উদ্ধার করার জন্য সমুদ্রের উপর সেতু নির্মাণ করেছিল। রামায়ণ অনুযায়ী, রামেশ্বরমের কাছে অবস্থিত ধনুষকোড়ি থেকে রামসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। আর সেই রামেশ্বরমকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে ১৯১৪ সালে পাম্বান ব্রিজ তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। তাই রামেশ্বরম মন্দিরটি হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
তবে রামনবমীর দিন যে পাম্বান সেতুর উদ্বোধন হল প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে। সেই পাম্বান সেতু কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন।
১৯৬৪ সালের রামেশ্বরম ঘূর্ণিঝড়ে, সেতুটির ক্ষতি হয় এবং মেরামতির প্রয়োজন হয়েছিল।২০১৩ সালে নৌবাহিনীর বার্জের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ফলে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১৮ সালে সেতুর একটি স্প্যানে ফাটল তৈরি হয়, যার ফলে নিরাপত্তার কারণে সেতুটিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে ফের ক্ষয়ের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই সেতু।
পুরনো এই ব্রিজ দীর্ঘদিন ধরে রামেশ্বরম ও মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করে এলেও ক্রমশ তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। এহেন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই পুরনো ব্রিজের পাশেই নয়া পাম্বান সেতু তৈরি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে নয়া ব্রিজ তৈরির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।অবশেষে সেই সেতুবন্ধনের কাজই শুরু হল।
তবে নির্মাণকাজটা মোটেও সহজ ছিল না। পক প্রণালীর উত্তাল সমুদ্র, উত্তাল হাওয়া, আবহাওয়ার আচমকা পরিবর্তনের মতো প্রতিকূলতা সামলেই নয়া পাম্বান সেতু এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে জং না ধরে যায় এবং সমুদ্রের কঠোর পরিবেশের মোকাবিলা করতে পারবে। ওই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিকম্পের যে আশঙ্কা থাকে, সেটার কথা মাথায় রেখেই নয়া পাম্বান সেতু তৈরি করা হয়েছে।
রামেশ্বরমের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখন্ডকে পুণরায় জুড়তেই কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রয়াস। তবে এই সেতুর বিশেষত্ব হল,
পূর্বের সেতুটি প্রায় ২.০৫ কি.মি লম্বা হলেও এটার দৈর্ঘ্য ২.০৮ কি.মি
পুরনো সেতুর তুলনায় নয়া সেতুটি ৩ মিটার উঁচু
ছোট জাহাজগুলি সরাসরি এই সেতুর নিচ দিয়ে পালন করতে পারবে
৫ মিনিটের মধ্যেই ট্রেনগুলি এই সেতু পারাপার করতে পারবে
পুরনো সেতুতে ট্রেনের গতিবেগ ঘন্টায় ১০কি.মি/ ঘন্টা হলেও নয়া সেতুতে ৯৮ কিমি/ঘণ্টা গতিতে চলাচল করবে ট্রেনগুলু
সেতুর মাঝের অংশটি ২২ মিটার (৭২ ফুট) উঁচু যাতে বড় জাহাজগুলিও পক প্রণালীর মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে পারে
আর রামনবমীর দিনেই এই সেতুর উদ্বোধন হল প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে। আর তারপর থেকে পুরনো পাম্বান সেতু শুধুমাত্র স্মৃতি হয়েই থাকবে। নেবে ‘বিশ্রাম’। আর বড় দায়িত্বটা কাঁধে তুলবে নয়া প্রজন্ম – নয়া পাম্বান সেতু।