নিউজ ডেস্ক: আজ রামনবমী (Ram Nabami)। শহর থেকে শহরতলি, আজ দিনভর সমস্ত জায়গায় মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকগুলি মিছিল শুরুও হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করছেন রাম ভক্তরা। রাম নবমী হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র উৎসব, যা ভগবান রামের জন্মতিথি হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে রাজা দশরথ ও রানী কৌশল্যার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন রাম। ভগবান রাম হলেন ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। এই উৎসবটি প্রতিবছর চৈত্র মাসের নবম দিনে পালিত হয়, যা সাধারণত মার্চ বা এপ্রিল মাসের মধ্যে পড়ে। সারা দেশের পাশাপাশি রামলালার জন্মদিন উদযাপনে কিন্তু পিছিয়ে এই বাংলাও। এই দিন গোটা রাজ্য জুড়েই শোভাযাত্রা করেন রাম ভক্তরা। পুজো দেন রামমন্দিরে গিয়ে।
বাংলায় রাম নবমীর ইতিহাস-
বাংলায় রাম নবমীর ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়, রামায়ণের কাহিনী প্রসারের ফলে এই উৎসবের তাৎপর্য আরও বৃদ্ধি পায়। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ভক্তি আন্দোলনের সময় থেকেই বাংলায় রাম নবমী উদযাপন বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী পালন নতুন কোনো ঘটনা নয়। বরং এটি বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ। বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরম্পরায় রামের স্থান চিরন্তন।
রামরাজাতলা রাম মন্দির-
হাওড়ার (Howrah) এক অতি জনপ্রিয় স্থান রামরাজাতলা। প্রাচীন এই স্থানেই রয়েছে রামমন্দির। হাওড়ার রামরাজাতলার পুজো প্রায় ৩০০ বছর পুরনো, যা বাংলার রামনবমীর একটি ঐতিহ্যবাহী উদাহরণ। অযোধ্যারাম চৌধুরী নামে এক স্থানীয় জমিদার ছিলেন বিরাট রামভক্ত। শোনা যায়, তিনিই স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দির। রামের মূর্তির পাশেই এখানে দেখতে পাবেন সীতা, কৃষ্ণ এবং শিবের মূর্তিও। তবে রামরাজাতলার রামমন্দিরের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। শোনা যায়, রামভক্ত তুলসী দাসের রামচরিত মানস পড়ে প্রভাবিত হন ভক্ত রামদাস। তিনিই নাকি এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।
কলকাতার রাম মন্দির-
কলকাতার (Kolkata) বুকে মধ্য কলকাতায় আছে রামলালার আরেক বাড়ি। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরেই অবস্থিত রামমন্দির। চার তলা কমলা রঙের বাড়ি দেখলে দূর থেকেই চেনা যায়। অনেকটা রাজস্থানের কেল্লার ধাঁচে বানানো এই মন্দির।
নিউটাউন রাম মন্দির-
কলকাতার বুকে আরও এক রামমন্দির রয়েছে নিউটাউনে (Newtown)। মন্দিরের সামনে দ্বাররক্ষক হিসাবে দাঁড়িয়ে ১৫১ ফুটের বজরংবলী। মন্দিরের অন্দরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন রাম-সীতা-হনুমান।
আজ কলকাতায় ছোটবড় মিলিয়ে ৮০টির বেশি রামনবমীর অনুষ্ঠান-
কলকাতায় ছোট বড় মিলিয়ে ৮০টির বেশি রামনবমীর অনুষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫টি বড় মিছিল। যার মধ্যে শোভাযাত্রা কাশীপুর ব্রিজ থেকে কাশীপুর রোড, কাশীপুর উদ্যানবাটি, বরানগর বাজার, সিঁথির মোড়, বিটি রোড, খগেন চ্যাটার্জি রোড পর্যন্ত যাবে। অন্যদিকে, ক্যানিং স্ট্রিট থেকে রবীন্দ্র সরণি, কলুটোলা হয়ে বড়বাজার পর্যন্ত রামনবমীর আরেকটি শোভাযাত্রা হবে। বন্দর এলাকায় হেস্টিংস থেকে বেরোবে আরেকটি শোভাযাত্রা। খিদিরপুর হনুমান মন্দির হয়ে সেটি যাবে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত। রামনবমীর পঞ্চম শোভাযাত্রা এন্টালি থেকে বেরিয়ে রামলীলা ময়দান হয়ে ক্রিস্টোফার রোড পর্যন্ত যাবে।
জেলায় জেলায় রামনবমীর মিছিল-
রামনবমী উপলক্ষ্যে হাওড়ায় জোড়া র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। শিবপুরের কাজিপাড়ার নরসিংহ মন্দির থেকে সকালে অঞ্জনিপুত্র সেনার মেগা র্যালি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। মিছিল কাজিপাড়া থেকে শুরু হয়ে জিটি রোড ধরে শিবপুর সন্ধ্যাবাজার হয়ে যাবে হাওড়া ময়দানে। দুপুর ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত মিছিলের অনুমতি পেয়েছে বিশ্বহিন্দু পরিষদও। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরেও রয়েছে রামনবমীর মিছিল। রামনবমী উদ্যাপন সমিতি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ইসলামপুর শহরজুড়ে ৬ কিলোমিটার র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। অন্যদিকে, মালদায় রামনবমী উপলক্ষে বিশ্বহিন্দু পরিষদের কর্মসূচি রয়েছে। একইসঙ্গে রামের মূর্তি নিয়ে রামনবমীর মিছিল রয়েছে হুগলির সিঙ্গুরেও।
তবে বাংলায় রামনবমী (Ram Nabami) উদযাপনকে কেন্দ্র করে অন্তত ৪৩ জায়গায় হামলার আশঙ্কা করছে রামনবমী উদযাপন সমিতি। তবে রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে যাতে কোথাও অশান্তি না হয় সেকারণে যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা থাকবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা আগেই জানিয়েছিলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার রামনবনীকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনো রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না বলেও আগেই জানিয়েছিল পুলিশ।