নিউজ ডেস্ক: রামনবমী উপলক্ষ্যে গেরুয়া রঙে সেজে উঠেছে গোটা বাংলা। তবে বিজেপির পাশাপাশি এবছর রামনবমী (Ram Nabami) পালনের দৌড়ে পিছিয়ে নেই শাসকদল তৃণমূলও। একদিকে যেমন অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমে বাহুবল প্রদর্শনে উদগ্রীব গেরুয়া শিবিরের নেতারা, উলটোদিকে শাসকদলের নেতানেত্রীরা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করেছেন। বার্তা দিয়েছেন সম্প্রীতির। উত্তর থেকে দক্ষিণ, রামনবমীর মিছিলে পা মিলিয়েছেন শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা। আর তৃণমূলের এই ভোলবদলকে তুমুল কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই রাম নবমীতে তৃণমূলের এই যোগদান।
হিংসা নয় রামনবমীতে মালদায় দেখা গেল সম্প্রীতির ছবি
রাম নবমীতে (Ram Nabami) রাজ্য জুড়ে দেখা গেল সম্প্রীতির ছবি। এদিন মালদায় রাম নবমীর মিছিলে পুষ্পবৃষ্টি করেন সংখ্যালঘুরা। একইসঙ্গে তাঁবু খাটিয়ে বিলি করেছেন শরবৎ, মিষ্টিও। একাধিক জায়গায় স্বাস্থ্য শিবিরেরও আয়োজন করেছিল মালদহের আটকোশী আঞ্জুমান আকবারিয়া ইসলামিয়া শহর মুসলিম কমিটি।
বীরভূমের শোভাযাত্রায় একযোগে তৃণমূল-বিজেপি
একই ছবি দেখা গেল বীরভূমের রামপুরহাটেও। রামপুরহাটের সংখ্যালঘু যুবকরা রাম নবমীর শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জল, মিষ্টি ও লাড্ডুর আয়োজন করেছিল। এদিন রামপুরহাটে বগটুই যুবকবৃন্দের পক্ষ থেকে এই আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে, রাজনৈতিকভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও দুবরাজপুরে রামনবমী মিছিলে পা মেলান তৃণমূল-বিজেপি নেতৃত্ব।
অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে ফেরার পর থেকেই সেখানে জোড়াফুল শিবিরের সমীকরণে নয়া রং লেগেছে। রামনবমীর দিন জেলায় জেলায় রামনবমী (Ram Nabami) উৎসব পালনের মধ্যেও নজর কাড়ল বীরভূম। অন্যান্য জেলার তুলনায় এই জেলায় তৃণমূলের নেতৃত্বে রামনবমী পালনের উৎসাহ দেখা গেল সবথেকে বেশি। এই প্রথম রামনবমীর মিছিল বার করলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সবাইকে রামনবমীর বিশেষ শুভেচ্ছা বার্তাও দেন তিনি।
এছাড়াও বীরভূমে (Birbhum) সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে রাম নবমীর মিছিলে পা মেলান জেলা তৃণমূল নেতৃত্বরা। শিলিগুড়িতে রামপুজোয় অংশ নিলেন মেয়র গৌতম দেব। হুগলির চুঁচুড়ায় কীর্তনের দলের সঙ্গে মিছিল করলেন বিধায়ক অসিত মজুমদার। অন্যদিকে, কলকাতায় (Kolkata) রামমন্দিরে পুজো দেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। কলকাতা লাগোয়া ভাঙড়ে আবার রামনবমীর মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায় তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লাকে। এছাড়াও কলকাতার ঠনঠনিয়ায় পাশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে রামনবমীর মিছিলে হাঁটলেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ”এই বাংলা সবসময় উৎসবের পক্ষে। যে যার ধর্ম পালন করবে, কিন্তু উৎসব সবার জন্য। আমরা তাই সবাইকে নিয়ে আজ মিছিলে নেমেছে। এটাই বাংলার আসল ছবি।” একইসঙ্গে রামনবমীর (Ram Nabami) দিন সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অর্থাৎ ছাব্বিশের ভোটের আগে রামনবমীর মতো উৎসব বেশ ভালোভাবেই উদযাপন করল শাসক শিবির।
সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ
তৃণমূলের (TMC) রামনবমী পালনকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘রামায়নে রাবন একবারই গেরুয়া পরেছিলেন। সীতাকে অপহরণের সময়। তৃণমূলের লক্ষ্য বিজেপির ৫% হিন্দু ভোট অপহরণ করা। তাই তাঁরা গেরুয়া পরে সাধু সেজেছে। কাজ মিটলেই আবার রাবণের রূপ ধারণ করবে।’ একইসঙ্গে এদিন তিনি আরও বলেন, ”জানেন, কারা রামনবমীকে আগে বহিরাগত কালচার বলত? এখন তারা নিজেরাই রামনবমী করছে। ঠ্যালায় না পড়লে বিড়াল গাছে চড়ে না। এখন গাছে চড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে এতদিন করেননি কেন? এতদিন রামকে বহিরাগত বলেছেন কেন? মানুষ জানান দিচ্ছে যে, আগামী দিনে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ‘কালীঘাট চলো’ কর্মসূচিকে ঘিরে এক্সাইড মোড়ে ধুন্ধুমার, আটক লকেট
অর্থাৎ ২০২৬ এ হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের জন্য শাসক শিবিরকে নিজেদের ভোল বদল করে রামনবমী (Ram Nabami) পালন করতে হচ্ছে বলেই কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। ঠিক যেমন ভাবে ইদ- মহরম পালন হয় রাজ্যে সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে, ঠিক সেভাবেই ২০২৬ এর বিধানসভা ভোটের আগে হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই এবছর বিজেপির (BJP) পাশাপাশি সমান তালে তাল মিলিয়ে রাম নবমী পালন করতে দেখা গেল শাসক দল তৃণমূলকে।