নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৬ সালের এসএসসি’র প্যানেল বাতিল (SSC scam) করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য তার পৃথকীকরণ সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তার জেরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চাকরিহারারা।
তবে এই দুর্নীতির (SSC scam) শুরু কোথা থেকে হয়েছিল? ব়্যাঙ্ক জাম্পিং। থেকে সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়ে চাকরি। ২০১৬ সালের এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এরূপ একের পর এক তথ্য সামনে এসেছে। দুর্নীতিতে কোথাও কোনও ফাঁক না থাকে, তার জন্যও কি ফন্দি আঁটা হয়েছিল? প্যানেলের বাইরে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা কীভাবে চাকরি পাবেন, সেই পথ সুগম করতে কি ‘হাইপাওয়ার’ কমিটি গঠন করা হয়েছিল? তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি করা কমিটিই কি সেই কাজ করত? সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর এই নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে।
কী এই ‘হাইপাওয়ার’ কমিটি? কেন এই কমিটি গঠন করেছিলেন পার্থ?
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) তৈরি করা কমিটির কথা প্রথম জানা যায় বাগ কমিটির রিপোর্টে। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর অনুমোদনে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছিল। সেই কমিটির কাজ ছিল, ২০১৬ সালের এসএসসি-র বাকি থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সেন্ট্রাল কমিশনকে গাইড করা, তদারকি করা এবং তার ওপর নজরদারি চালানো। কিন্তু, আইনের চোখে ওই কমিটির গঠন করা যায় না।
এসএসসি-র নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই কমিটিতে নিজের ঘনিষ্ঠদের রেখেছিলেন তিনি। যদিও পরে সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ইডি ও সিবিআই নিয়োগ মামলায় তদন্ত শুরু করে। এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ ওই কমিটির কয়েকজন গ্রেফতার হন।
সিবিআই তদন্তে জানা গিয়েছে, পার্থর আপ্ত সহায়কের ঘরেই এই ‘হাইপাওয়ার’ কমিটির বৈঠক হত। এই কমিটির কারসাজিতে শূন্যপদের চেয়েও অতিরিক্ত পদ তৈরি করে নিয়োগ হয়েছে। ক্লাস নবম ও দশম শ্রেণিতে অতিরিক্ত শিক্ষক পদ তৈরি করা হয়েছে ১০৭১টি। ক্লাস ইলেভেন ও টুয়েলভে অতিরিক্ত শিক্ষক পদ তৈরি করা হয়েছে ১৯৯টি। আর গ্রুপ সির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৪১৬টি পদ তৈরি করা হয়েছে। আর গ্রুপ ডির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৬৬৯টি পদ তৈরি করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, একটা প্যারালাল নিয়োগ চলত। যা নিয়ন্ত্রণ করত এই কমিটি।
ওই কমিটির সদস্যদের বেশিরভাগই সেন্ট্রাল কমিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কমিটিতে ছিলেন সেন্ট্রাল কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা। পার্থর অনুমোদনে দুর্নীতির মাথায় ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। এমনকি, চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে ডেটা স্ক্যানটেকের কাছ থেকে ওএমআর শিটের (OMR Sheet) ডিজিটাল কপি আনার ক্ষেত্রেও মূল মাথা ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। পার্থর পাশাপাশি তিনিও গ্রেফতার হন। তদন্তকারীরা বলছেন, দুর্নীতির উপর নজরদারির জন্যই এই কমিটি গড়েছিলেন পার্থ। আর এই মাথায় রেখেছিলেন শান্তিপ্রসাদকে। এছাড়াও ওই কমটিতে ছিলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সেন্ট্রাল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, সৌমিত্র সরকার, অশোককুমার সাহা-সহ কয়েকজন।