নিউজ ডেস্ক: আবারও সংবাদ শিরোনামে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। সিএএ পাশ হওয়ার পর বেলাগাম হিংসার স্মৃতি ফিরল মুর্শিদাবাদে। ওয়াকফ বিল পাশের প্রতিবাদের নামে মঙ্গলবার জেলার রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকার উমরপুরে বেলাগাম তাণ্ডব চালায় উন্মত্ত জনতা। ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ২ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। তবে বারবার যে কোনও ইস্যুতে মুর্শিদাবাদই কেন রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে?
আবারও অশান্ত মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)
ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে আবারও অশান্ত মুর্শিদাবাদ। ওয়াকফ প্রত্যাহারের দাবিতে গত দুদিন থেকে উত্তেজনায় ফুটছিল জঙ্গিপুর। সুতি, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছিল। কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছিল পুলিশ।
তবে গতকাল তেতে উঠল সুতি থানার আহিরণ ব্রিজ এলাকা। এদিন আহিরণে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলেছে অবরোধ। জানা গিয়েছে, ১৪৪ ধারা জারি ছিল এলাকাতে। তবে তা অমান্য করেই চলে বিক্ষোভ। নিমেষের মধ্যেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। অবস্থা সামাল দিতে লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে পুলিশ। অবস্থা সামাল দিতে এলাকায় পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। বিক্ষোকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তারপরেই জনতার সঙ্গে কার্যত খণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি শুরু হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ একাধিক কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। এরপর ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগানো হয় একটি বেসরকারি গাড়িতেও। পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ পিছু হটলেও পরে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থা সামাল দেয়।
পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে জঙ্গিপুর মহকুমায় মিটিং-মিছিল, জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৫ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না বলে স্পষ্টত জানিয়েছে প্রশাসন। এর পাশাপাশি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে কোনও ভুল খবর বা গুজব না ছড়ান, সেই আর্জি জানিয়েছে পুলিশ।
তবে মুর্শিদাবাদের এমন রণক্ষেত্র চেহারা নতুন নয়, এর আগেও বারংবার বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ।
সিএএ পরবর্তী হিংসার ঘটনা
প্রসঙ্গত, এর আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-র প্রতিবাদে ডাকা স্থানীয় বন্ধকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি। সেসময় তৃণমূল এবং বন্ধ সমর্থনকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন। অভিযোগ, শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে বন্ধ সমর্থনকারীদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায় কিছু দুষ্কৃতী। দু’জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আরও কয়েক জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বলে দাবি করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও তৃণমূল, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করলেও, গোটা ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
মুর্শিদাবাদে ডিআই অফিসে বিক্ষোভ
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যে সদ্য চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। গত বুধবার সেইসব চাকরিহারারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন জেলায় জেলায়৷ যার জেরে ফের একবার ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে মুর্শিদাবাদে৷ এদিন বহরমপুরে ডিআই অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চাকরিহারারা৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি হয়৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ময়দানে নামে পুলিশের বিরাট বাহিনী৷ চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের দাবি, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ভুলছেন না। স্বেচ্ছাশ্রম নয়, সিভিক শিক্ষক নয়। তাঁরা যোগ্য হিসেবে পূর্ণ মর্যাদায় চাকরিতে বহাল হতে চান। এদিন সুপ্রিম কোর্টে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
আরও পড়ুন: ওয়াকফ জমি হারানো ভয়ে রেললাইন ‘দখল’, মুর্শিদাবাদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যহত ট্রেন পরিষেবা
ফলে যে কোনও ইস্যুতেই সবসময় উত্তপ্ত থাকে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, “যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতায় জেহাদিরা গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে অগণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে তাতে রাজ্যের পুলিশই আজ সুরক্ষিত নয়। রাজ্যের পুলিশ যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না তখন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকার আবেদন করুন। পুরোটাই সরকারের মদতে ঘটে চলেছে।”
এদিকে বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে মমতা সরকারকে নিশানা করে লিখেছেন, “ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যেভাবে মুর্শিদাবাদের রাস্তায় নেমে এক শ্রেণির মানুষ প্রকাশ্যে সংবিধান অমান্য করার আহ্বান জানিয়েছে তাতে পরিষ্কার বাংলায় আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, নয়তো পদত্যাগ করতে হবে।”