নিউজ ডেস্ক: NIA-এর লিস্টে সে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তাকে হাতে পেয়েছে ভারত। কথা হচ্ছে, ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে নিয়ে। সংবাদ শিরোনামে থাকার দরুন সবাই তাঁকে মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী হিসেবে চিনলেও তার আসল পরিচয় অনেকের কাছে অজানা।
জানলে অবাক হবেন এই জঙ্গি পেশায় একজন ডাক্তার। তাহাউর রানা একজন প্রাক্তন পাকিস্তানি সেনা চিকিৎসক। পাকিস্তানের পঞ্জাবের চিচাওয়ান্তিতে ১৯৬১ সালের ১২ জানুয়ারি জন্ম তাহাউরের। ক্যাডেট কলেজ হাসান আবদালে পড়াকালে ডেভিড হ্যাডলির সঙ্গে তার পরিচয়। পরবর্তীতে হেডলির সঙ্গে মিলে ২৬/১১ মুম্বই হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত হয় সে।
পাকিস্তানের সেনার মেডিক্যাল কর্পসে ‘ক্যাপ্টেন জেনারেল ডিউটি প্র্যাকটিশনার’ হিসাবে কাজ করতেন এই জঙ্গি। তখন অবশ্য তার জঙ্গি কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার কথা শোনা যায়নি। এরপর ১৯৯৭ সালে পাকিস্তান ছেড়ে কানাডায় পাড়ি দেয় রানা। ২০০১ সালে স্ত্রীর সঙ্গে কানাডার নাগরিক হন। তার স্ত্রী ও পেশায় ডাক্তার। তাহাউরের ২ ভাই । এখন মনোরোগ বিশষজ্ঞ আরেকজন সাংবাদিক ছিলেন বলে জানা যায়। তাহাউরের বাবা লাহোরের শিক্ষক ছিলেন। এরপর শিকাগোতে পাড়ি দেন তাহাউর। সেখানে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
জানা যায় পাকিস্তান ছাড়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে জঙ্গি কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তাহাউর রানা। ২০০৫ সালে এক ডেনমার্কের সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনাতেও হেডলি ছিল তার সঙ্গী।
স্কুল জীবনের বন্ধু ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে মিলে ২৬/১১ মুম্বাই হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল। রানা তার সংস্থার একটি শাখা খোলার অজুহাতে হেডলিকে ভারতীয় ভিসা পেতে সাহায্য করে। হেডলি সেই ভিসা ব্যবহার করে মুম্বাই হামলার নজরদারি ও পরিকল্পনা করেছিল। ২০০৮ সালে প্রথম মুম্বই ঘুরে গিয়ে হামলার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিল। মুম্বই হামলার রেইকি করতে ৮ বার ভারতে, ফোনে রানার সঙ্গে ২৩১ বার কথা বলেছিল হেডলি। ২০০৯ সালে হেডলি গ্রেপ্তারের পর রানার এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকা তথ্য সামনে আসে।
২০১১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রানার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারত বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। ২০২০ সালে মার্কিন প্রশাসন তাহাউর রানাকে স্বাস্থ্যজনিত কারণে মুক্তি দেয়। ২০২০ সালে ভারতের প্রত্যর্পণের আবেদনের পর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৪ সালে মার্কিন কোর্ট অফ অ্যাপিল ফর নাইনথ সার্কিট রানার প্রত্যর্পণে সম্মতি দেয়।
এরপর ভারতের কাছে প্রত্যার্পণের বিরুদ্ধে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মূল অভিযুক্ত তাহাউর রানার। তার দাবি ছিল, ভারতে ফিরলে তাকে নাকি মুসলিম পরিচয়ের কারণে প্রবল অত্যাচারের শিকার হতে হবে, পাশাপাশি তার আরও বক্তব্য ভারতে বিচারপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু হবে না। সেই আর্জি খারিজ করে মার্কিন আদালত। সেই আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে ফের নতুন করে আবেদন করে তাহাউর রানা। মার্কিন প্রধান বিচারপতির কাছে আলাদা করে আবেদন জানায় ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল অভিযুক্ত।
এতকিছু করেও লাভ হয়নি। রানার কোনও যুক্তি টেকেনি। নাটকীয় টানাপোড়েন শেষে রানাকে হাতে পেল ভারতের। আপাতত তার ঠাঁই তিহার জেল। দিল্লিতেই এনআইয়ের বিশেষ আদালতে হবে তার শুনানি।