নিউজ ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রাতারাতি চাকরি হারিয়েছেন ২৬ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী। সুপ্রিম রায়ের পরেই জেলায় জেলায় ডিআই অফিস অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারারা। রাজ্যে সৃষ্টি হয় এক উত্তাল পরিস্থিতি। দাবি উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগেরও। আজ, শনিবার থেকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থানে বসেছেন চাকরিহারারা। অন্যদিকে, বিধাননগরের এসএসসি ভবনের সামনে এখনও অনশনে তিন চাকরিহারা। তাঁরা হলেন সুমন বিশ্বাস, পঙ্কজ রায় এবং প্রতাপ রানা। চাকরি ফেরৎ (SSC Scam) না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলেই দাবি তাঁদের। আর সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হল এই গোটা ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজ্যের সরকারি স্কুল গুলিতে। শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হবার জোগাড়।
তবে এতকিছুর পরেও চুপ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)। কারন শিক্ষা ব্যবস্থায় এত বড় দুর্নীতিতে জড়িয়ে শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীরা। তাই নিজের দলের দোষ ঢাকতেই এত বড় দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করছেন তিনি। বরং এই গোটা দুর্নীতির পিছনে বিরোধী দলগুলিকেই দায়ী করছেন তিনি। অন্যদিকে এসএসসি দুর্নীতি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে নানা পথ অনুসরণ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত স্বাভাভাবেই বুঝিয়ে দিচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর থেকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি, তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তার এই পদক্ষেপ।
মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় বাম-বিজেপি
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme court) রায়ের পরই তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়, দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকে প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলা হোক। এরপর তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে নিয়োগ হবে। কারণ, এসএসসি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না রাজ্য সরকার। এই সমাধানের আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একযোগে নিশানা করলেন বাম-বিজেপিকে। নাম করে তোপ দাগলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, সুকান্ত মজুমদারের উদ্দেশে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”বিকাশবাবু কেস করেছিলেন। তাঁর জন্যই আজ এতগুলো চাকরি গেল। উনি তো বিশ্বের বৃহত্তম আইনজীবী। কেন যে নোবেল প্রাইজ পাচ্ছেন না এখনও… আমি ভাবছি, একটা রেকমেন্ড করব।” এর আগেও একাধিকবার চাকরিতে নিয়োগ জটিলতার জন্য বিকাশরঞ্জনবাবুকে দুষেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। বিকাশরঞ্জনের পাশাপাশি মমতা তোপ দেগেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতিকেও। বললেন,”এই চাকরি বাতিলের পর সুকান্তবাবু (Sukanta Majhumder) বলছেন, অযোগ্য সরকার অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছে। আমাকে টার্গেট করে বলছেন! কেন? আমরা কোন অযোগ্য কাজ করেছি? কে যোগ্য? উনি যোগ্য?” অর্থাৎ গোটা ঘটনাতেই বিরোধীদের দিকেই নিশানা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এখানেই শেষ নয়, বিরোধী দলগুলিকে দায়ী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও বক্তব্য, “শুধু ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হল বললে ভুল হবে। কারণ, এঁদের সঙ্গে কয়েক লক্ষ পরিবার জড়িত। মনে রাখবেন, তাঁরা অচল হয়ে গেলে বিজেপি-সিপিএমও সচল থাকবে না। কোনও ঘটনা ঘটলে, দায়িত্ব আপনাদের হবে। আর এসবের জবাব আপনারা পাবেন।”
বিপাকে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলি
তবে রাজনীতির এই টানাপড়েনের মাঝে বিপাকে পড়েছে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলি। গত দশকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি উভয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার একটি প্রবণতা দেখা গেছে। এই হ্রাস বিভিন্ন কারণের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, যেমন – জন্মহার হ্রাস, বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উচ্চশিক্ষায় যাওয়া এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ। আর এর মধ্যেই এবার চাকরি বাতিলের জেরে বিপাকে পড়েছে রাজ্যের সরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা। বিশেষত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কারন, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে এমন অনেক নতুন বিষয় পড়ানো হয়, যেগুলি মাধ্যমিকে পড়ানো হয় না। সেই সব বিষয়ের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে এক জন করে শিক্ষকই সাধারণত নিযুক্ত থাকেন। অনেক স্কুলেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নির্দিষ্ট বিষয়ের এক জন মাত্র শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। সে সব স্কুলে পড়ুয়াদের ওই বিষয়গুলি কী ভাবে পড়ানো হবে, এখন সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।