নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হলেও তার গতিপ্রকৃতি যা রূপ নিয়েছে, তা যেন সাধারণ মানুষের রাত্রির ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি মুর্শিদাবাদে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হিংসা ছড়িয়েছে রঘুনাথগঞ্জ, জলঙ্গি, ভগবানগোলা-সহ একাধিক এলাকায়। হাই কোর্টের নির্দেশে পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হয়েছে অভিজ্ঞ পুলিশ আধিকারিক ও বাহিনী। তবুও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি অবস্থা। কেউ ভয়ে বাড়ি ছাড়ছেন, তো কেউ দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। আগুনে পুড়েছে গাড়ি, দোকান, এমনকি মানুষের ঘরবাড়িও। পুলিশের গাড়ি জ্বালানো, রাস্তা অবরোধ, এমনকি হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর এই ঘটনাকে অনেকেই বলছেন, এটা প্রতিবাদ নয়, বরং পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা।
উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের (Murshidabad Waqf protests) জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে। এই হিংসার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কিশোর আছে। সে গত ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আফস্পা জারির দাবিতে শাহকে চিঠি বঙ্গ বিজেপি সাংসদের
আর এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলিকে ‘অশান্ত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুললেন বিজেপি লোকসভার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। এই মর্মে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) একটি চিঠি লিখেছেন। সঙ্গে তিনি অনুরোধ করেছেন যে, হিন্দুদের উপর বারবার সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগের কারণে নির্দিষ্ট কিছু সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে আফস্পা (AFSPA)-এর আওতায় আনা হোক। বাংলার হিন্দুদের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণনির্বাসনের তুলনাও টেনেছেন বিজেপি সাংসদ।
তাঁর অভিযোগ, শুধু মুর্শিদাবাদেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ৮৬টি বাড়ি-দোকানে লুটপাট হয়েছে, খুন হয়েছেন ২ জন, এমনকি তাঁদের চাষের জমিতেও হামলা হয়েছে। মালদহ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও একই ছবি। বিজেপি সাংসদের মতে, এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং রাজ্যে ‘তোষণের রাজনীতি’র জেরে সংখ্যালঘু তাণ্ডবের শিকার হচ্ছেন হিন্দুরা। আর এই পরিস্থিতি নাকি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯০ সালের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণপলায়নের ইতিহাস।
কোন কোন জেলায় জারি হতে পারে আফস্পা?
জ্যোতির্ময় মাহাতোর চিঠিতে স্পষ্ট দাবি—এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে আফস্পা (AFSPA) জারি করা হোক। তাঁর মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজ্যের পুলিশের নিয়ন্ত্রণে নেই। হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছে ঠিকই, তবে তা যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে চাই সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান। কারণ, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এখন চরম সঙ্কটের মুখে। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী রাজ্যের ‘তোষণের রাজনীতি’।
কী এই আফস্পা (AFSPA)?
এই আইন মূলত সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে, যাতে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও অনুমতি বা জবাবদিহি ছাড়াই ব্যবস্থা নিতে পারে। এই আইন ১৯৫৮ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগা পাহাড় এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর, মণিপুর সহ উত্তরপূর্বের একাধিক রাজ্যে জারি আছে এই আইন।
আফস্পা (AFSPA) জারি হলে কী হবে?
আফস্পা গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তাই বাংলার মাটিতে এই আইন চালুর দাবি যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে চলেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও রাজ্য রাজনীতির গতি যে পাল্টাতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।