নিউজ ডেস্ক: মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) মানেই হাজারদুয়ারি, ইমামবাড়া, মতিঝিল পার্ক, জগত শেঠের বাড়ি, কাঠগোলাপের বাগান, কাটরা মসজিদ সহ আরও কত কি। সারা বছরই কমবেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে মুর্শিদাবাদের এই পর্যটন স্থানগুলিতে।
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সপ্তাহান্তে দু-একদিনের জন্য বা ছোট ছুটি কাটানোর তালিকায় প্রথম সারিতেই উঠে আসে মুর্শিদাবাদের নাম। কিন্তু বাংলা নববর্ষের দিন-সহ চার দিনের ছুটিতে সেই নবাব নগরী মুর্শিদাবাদ এবার প্রায় পর্যটকশূন্য থাকল। এর ফলে মাথায় হাত পড়েছে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মুর্শিদাবাদের একাধিক মানুষের। টানা ছুটি থাকা সত্ত্বেও সেভাবে দেখা মিলল না পর্যটকদের। কারণ একটাই, গত কয়েকদিনে মুর্শিদাবাদের কিছু কিছু জায়গায় পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছিল তার জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করা সত্ত্বেও বহু পর্যটক পা রাখলেন না নবাব নগরীতে।
ওয়াকফ ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল নবাব নগরী
আসলে সম্প্রতি ওয়াকফ ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল (Waqf protest) হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। প্রাণ গেছে ৩ জনের। আতঙ্কে ভিটেমাটি ছেড়ে কাউকে আশ্রয় নিতে হয়েছে ভিন জেলা মালদায়, কারও ঠাঁই হয়েছে ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ডে। চোখের সামনে খুন হয়ে গেছেন প্রিয়জন। অশান্তির আগুনে কারও ঘর জ্বলেছে, কেউ হারিয়েছেন রুজি-রুটি। প্রাণভয়ে গ্রামকে গ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে। এক কথায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছিল। বন্ধ ছিল ইন্টারনেট ব্যবস্থা, নামাতে হয়েছিল সিআরপিএফ (CRPF)। ফলে বিগত কয়েকদিন ধরে সুতি, জঙ্গিপুর, সামশেরগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকায় যে অশান্তির ছবি ধরা পড়েছে, তারই আঁচ পড়েছে বহরমপুর ও লালবাগ-সহ আশেপাশের বিভিন্ন পর্যটনস্থলে। যদিও যে সমস্ত অঞ্চলে অশান্তির আবহ চলছে তার থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছে পর্যটনস্থলগুলি। তবে ভিন রাজ্য বা জেলায় বসে পর্যটকরা বিভিন্ন মিডিয়া এবং সমাজমাধ্যমে যে ছবি দেখেছেন তাতে ভীত হয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা করা সত্ত্বেও অনেকে তা বাতিল করছেন।
ধাক্কা মুর্শিদাবাদের পর্যটন শিল্পে
আর এর ফলেই হোটেল, রেস্তোঁরা থেকে শুরু করে গাড়ি, অটো, টোটো চালকরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পাশাপাশি পর্যটক গাইড বা ফটোগ্রাফার সকলের কপালেই ভাঁজ পড়েছে, সঙ্গে টান পড়েছে পকেটেও। এ প্রসঙ্গে সুমিত সাহা নামে হাজারদুয়ারি প্যালেসের নিকটবর্তী এক দোকান ব্যবসায়ী জানান, ”আমরা অনেক আশা রেখেছিলাম গত চার দিনের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি এবং তার আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। কিন্তু এবারে আমরা খুবই হতাশ। সম্ভবত মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পর্যটকরা এখানে আসতে ভয় পাচ্ছেন।”
অন্যদিকে এক ফটোগ্রাফার বলেন, ”চার দিনের লম্বা ছুটিতে হাতে গোনা কয়েকজন পর্যটক এসেছেন হাজারদুয়ারিতে। টিভি এবং সমাজমাধ্যমে যে সমস্ত গন্ডগোলের ছবি দেখা যাচ্ছে তাতেই সম্ভবত পর্যটকরা আতঙ্কিত হচ্ছেন। কিন্তু সবাইকে বলব এখানে ঝামেলা বা অশান্তি নেই। এই অঞ্চল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আপনারা নির্ভয়ে মুর্শিদাবাদ ভ্রমণে আসতে পারেন।”
নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই গত কয়েক দিনের অশান্তির ছবি পাল্টাতে শুরু করছে মুর্শিদাবাদে। চেনা ছন্দে ফিরছে জেলা। দোকানপাট খুলছে। বাজার বসছে। মানুষজনও রাস্তায় চলাচল শুরু করেছেন। শুধু তা-ই নয়, আতঙ্কিত এলাকাবাসীদের মনের জোর বৃদ্ধি করতে আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অশান্তির কারণে ঘরছাড়ারাও পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে ঘরে ফিরছেন। একইসঙ্গে জেলা পুলিশ প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকায় আবার নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নবাব নগরীর মানুষজন। এপ্রিল মাসে এই সপ্তাহান্তেই রয়েছে সরকারি ছুটি। তাই ভয়, কুণ্ঠা কাটিয়ে আবারও আগের মতই পর্যটকের ঢল নামবে মুর্শিদাবাদের মাটিতে। এটাই আশা সকলের।
এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা জানান, ”প্রশাসনিক পদক্ষেপে দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি। পর্যটকরা নির্ভয়ে এই জেলায় আসতে পারেন। ”