নিউজ ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট (USA President) ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) কি রুশ প্রেসিডেন্ট (Russian President) পুতিনের (Vladimir Putin) গুপ্তচর ছিলেন? ৮০-র দশকে আমেরিকা আর সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে রেষারেষি যখন তুঙ্গে উঠেছিল, তখন কি কেজিবি (KGB) রিক্রুট করেছিল ট্রাম্পকে? সেই সময় কেজিবির সঙ্গে যু্ক্ত ছিলেন, এমন এক প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্তার দাবি, ১৯৮৭ সালে কেজিবি নিয়োগ করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
কিন্তু কেন এই নিয়োগ করতে চেয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া (Soviet Russia) ? তার কারণ রাশিয়া চাইছিল, মার্কিন রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে, এমন এক ব্যবসায়ীকে। তারা খোঁজ করছিল কোনও রাজনীতিক বা শিল্পপতির। তাকে দিয়েই মার্কিন রাজনীতির অলি গলিতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। আর তাই ১৯৮৭ সালে তারা রিক্রুট করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।
সেসময় রিয়েল এস্টেটে ব্যবসা করতেন ট্রাম্প। হোটেল সহ বানাতেন নানা ইমারত। এই কাজেই গিয়েছিলেন রাশিয়ায়। তাঁকে রাজার হালে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছিল কেজিবি নিয়ন্ত্রিত রুশ পর্যটন দফতর। সেই সফরের সময় হাজির ছিলেন উচ্চপদে কর্মরত রাশিয়ার আধিকারিকরা। পরে ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁর সঙ্গে রুশ অ্যাম্বাসডর ইউরি ডুবিনিনের বৈঠক হয়েছিল। ডুবিনিন ট্রাম্প টাওয়ারের প্রশংসাও করেছিলেন। কিন্তু ডুবিলিনের কন্যা আবার অন্য কথা শুনিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকার কোনও একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে তখন হন্যে হয়ে খুঁজছিল রাশিয়া। তাদের মনে হয়েছিল, ট্রাম্পের মধ্যে সেই ব্যক্তিত্ব আছে। তিনি মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।
ট্রাম্পের সেই সফর ছিল বিলাসিতায় ভরা। তাঁকে রাখা হয়েছিল মস্কোর ন্যাশনাল হোটেলে। দেওয়া হয়েছল লেলিন সুট। ওই হোটেলের পুরোটাই ছিল কেজিবির তত্ত্বাবধানে। আধিকারিকরা ট্রাম্পকে ঘুরিয়ে বেশ কিছু জায়গা দেখিয়েছিলেন, যেখানে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব ব্যান্ডের হোটেল বানাতে পারেন। কেজিবির প্র্যাকটিস অনুযায়ী, তখন থেকেই হয়তো ট্রাম্পের গতিবিধিতে নজর রাখা শুরু হয়েছিল।
ট্রাম্পকে নিয়ে এধরনের নানা খবর সামনে এসেছে। একসময় সোভিয়েত গুপ্তচর সংস্থায় ছিলেন, বর্তমানে কাজাখস্তানের গোয়েন্দা প্রধান আইনুর মুসায়েভের মতে, ট্রাম্পের বেশ কিছু নথি রয়ে গেছে রাশিয়ার হাতে। তিনি জানিয়েছেন, পুতিনের কাছে ট্রাম্পের একটি ফাইল এখনও আছে। ট্রাম্প মস্কো হোটেলে থাকার সময় কী কী ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তার নানা তথ্য নাকি রয়েছে ওই ফাইলে।
শুধু মুসায়েভই নয়, কেজিবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অনেকেই দাবি করেছেন, আশির দশকে ট্রাম্পকে রিক্রুট করেছিল রাশিয়া। প্রাক্তন কেজিবি মেজর ইউরি শ্বেটসও এব্যাপারে নানা আলোকপাত করেছেন। তাঁর কথার উপর ভিত্তি করে একটা বইও লেখা হয়েছে। বইটির নাম – আমেরিকান কমপ্রোম্যাট: হাউ দ্য কেজিবি কাল্টিভেটেড ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যান্ড রিলেটেড টেলস অফ সেক্স, গ্রিড, পাওয়ার অ্যান্ড ট্রেচারি। শ্বেটসের কথার উপর নির্ভর করেই বইটি লিখেছেন ক্রেগ উঙ্গেরস।
আরেক রাশিয়ান গুপ্তচর, সের্গেই ঝিরনভ, যিনি বর্তমানে ফ্রান্সে থাকেন, তিনি ইউক্রেনীয় সাংবাদিকককে এক সাক্ষাৎকারে মুসায়েভের বক্তব্য নিশ্চিত করেছেন। মস্কোতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানকালে কেজিবি তার ড্রাইভিং স্টাফ, হোটেল সাপোর্ট স্টাফ এবং সম্ভাব্য মহিলাদের সাথে তার দেখা কর্মীদের মোতায়েন করে তার উপর ক্রমাগত নজরদারি চালায়। রিপোর্ট অনুসারে, জাইরনভ তার সাক্ষাৎকারে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ট্রাম্প তার মস্কো হোটেল প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত আর্থিক স্বার্থের মাধ্যমে অথবা তার সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের সময় “হানি ট্র্যাপ” মহিলাদের সাথে মুখোমুখি হওয়ার মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে পারেন। দাবি সত্ত্বেও, তিনি তার বক্তব্যের সমর্থনে কোনও দৃঢ় প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প কেজিবি সম্পর্ক নিয়ে যেসব তথ্য সামনে এসেছে তার সত্যতা কতটা। এব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে ট্রাম্পের আগে পরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যে ঝলক দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে অনেকেই নানা সন্দেহ পোষণ করেছেন। ট্রাম্প যেভাবে রাশিয়ার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, তা নিয়ে এধরনের সন্দেহ দানা বেঁধেছে। অনেকে মনে করেন, চার দশক ধরে ট্রাম্পকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে আস্তিনের তলায় গুঁজে রেখেছে রাশিয়া। এটা অনেক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। আমেরিকার বিদেশনীতি কব্জায় আনতে পারলে বাকি কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তবে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক কিছুই রটে। তার কিছু ঠিক। আবার অনেক কিছু জল্পনা। এখন ট্রাম্প কেজিবি সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ ছিল,বা আজও তা কতটা অন্তরঙ্গ অবস্থায় আছে, তা এত বছর ধরে যেমন রহস্যে মোড়া, আগামী দিনেও রহস্যাবৃত থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।