নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। বিক্ষোভের জেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পাঁচশোর ও বেশি হিন্দু। আতঙ্কে ভিটেমাটি ছেড়ে কাউকে আশ্রয় নিতে হয়েছে ভিন জেলা মালদায়, কারও ঠাঁই হয়েছে ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ডে। চোখের সামনে খুন হয়ে গেছেন প্রিয়জন। অশান্তির আগুনে কারও ঘর জ্বলেছে, কেউ হারিয়েছেন রুজি-রুটি। তবে শুধু মুর্শিদাবাদই নয়, মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিন ২৪ পরগনাতেও ঘটেছে হামলার ঘটনা। বস্তুত, গোটা দেশজুড়ে নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ চলছে। এরকমই আরও ৬০টি উদাহরন আছে যেখানে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের শিকার হয়েছে সাধারন মানুষ। নীচে সেসব ঘটনারই বিবরণ দেওয়া হল-
গোটা দেশজুড়ে নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ চলছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদের ঘটনা কার্যত হিংসাত্মক রূপ নিয়েছে। জানা যাচ্ছে, যে সময় ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ চলছিল সেই সময় পুলিশ ব্যারিকেড করে তা আটকানোর চেষ্টা করে। সেই সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। অভিযোগ, সেই সময়ই মিছিলের বড় অংশ আচমকাই মারমুখী হয়ে ওঠে। পরপর পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এরপর পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, উর্দিকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইঁট-পাটকেল। বলা চলে, কার্যত রাস্তায় তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীদের একাংশ। শুধু পুলিশের গাড়ি নয়, সাধারণ একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে খবর। জানা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী এই ঘটনায় আহত হয়েছেন।
তথ্য গৃহীত- https://hindi.opindia.com/national/waqf-act-protest-violence-west-bengal-hindu-bjp-mamata-banerjee-bangladesh/
অন্যদিকে, ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে বীরভূমের পাইকর, নলহাটি ও মাড়গ্রামে বিক্ষোভ-মিছিল হয়। বিক্ষোভকারীদের একাংশ ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে নলহাটি বাস স্ট্যান্ডে চলে এলে, জাতীয় সড়ক কিছু ক্ষণের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সাংসদ শতাব্দী রায় কেন লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে ভোটদানে বিরত ছিলেন, প্রশ্ন তোলা হয় নলহাটির মিছিল থেকে।
ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে মিছিল ও সভা করে বাঁকুড়া জেলা ইমাম-মোয়াজ্জিম উলামা সংগঠন। বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে শালদহ মোড়ে জড়ো হয়। সেখানেই সভা হয়। উদ্যোক্তারা সংশোধিত ওয়াকফ আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর হুঁশিয়ারি দেন।
https://x.com/TV9Bharatvarsh/status/1911406296626045270?t=lmSGediZAv2Wfs6vq4QoLg&s=19
ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা এবং ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে এ দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে কংগ্রেস ভবন থেকে শুরু করে থানা মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন দলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দল। কোচবিহারের মাথাভাঙাতেও ওই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে পথসভা করে কংগ্রেস। এছাড়াও নদিয়া, আরামবাগ, পার্কস্ট্রিট, শিয়ালদহ, ডায়মন্ড হারবার সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় ওয়াকফ বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি একই ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্যের বাইরেও। জম্মু-কাশ্মীরের কুলগ্রাম হোক বা পাঞ্জাবের লুধিয়ানা-সর্বত্রই একই দৃশ্য। মনিপুর, রাঁচি, তেলেঙ্গানা, অন্ধপ্রদেশ সব জায়গাতেই ওয়াকফ ইস্যু কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে।
তথ্য গৃহীত- https://x.com/TheKashmiriyat/status/1912415379445449154
উল্লেখ্য, ভারতে সব চেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে। সম্প্রতি ওই রাজ্যের মুজফফরনগরে জুম্মার নামাজের সময় হাতে কালো আর্মব্যান্ড পরে নতুন আইনে র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, এমন তিনশোরও বেশি ব্যক্তিকে নোটিশ পাঠিয়ে মাথাপিছু ২ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশের আলিগড় জেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তথ্য গৃহীত- वक्फ संशोधन विधेयक का विरोध, अलीगढ़ में सड़क पर उतर कर मुस्लिमों ने किया प्रदर्शन
এছাড়া মুম্বই, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, বিহার, জয়পুরেও ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পথে নামে বিক্ষোভকারীরা। ঝাড়খন্ডের জামতাড়ায় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মুসলিম সংগঠনের লোকেরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অবিলম্বে ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এ প্রসঙ্গে ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী মিথিলেশ কুমার ঠাকুর সতর্ক করে দিয়েছেন যে যদি কেন্দ্রীয় সরকার সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহার না করে, তাহলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। এটি একটি দেশব্যাপী আন্দোলনেও পরিণত হতে পারে।
অন্যদিকে মুসলিম বিরোধী ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে গুজরাতের সুরাটেও। সেখানকার মুসলিম মহিলারা পথে নেমে এই আইনের বিরোধিতা করেছেন। পাশাপাশি আসামের কাছাড় জেলায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে, সতর্ক পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ইতিমধ্যেই কাছাড় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশের মতে, বিক্ষোভে জড়িত কিছু লোক পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। জবাবে, পুলিশও বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে।
এখানেই শেষ নয়, এছাড়াও সংশোধনী ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে হায়দ্রাবাদ, কেরল, ত্রিপুরা, রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক জেলায়।
তথ্য গৃহীত- https://x.com/TheObserverPost/status/1912185325037723755
https://x.com/naseerCorpGhmc/status/1912097973913133497
ইতিমধ্যেই এই আইনটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু পিটিশন শীর্ষ আদালতে জমা পড়েছে, সেই আবেদনকারীদের মধ্যে এআইএমআইএম নেতা ও হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং সম্ভালের সমাজবাদী পার্টি এমপি জিয়া-উর রহমান বার্কও আছেন। এখন এই পিটিশনগুলো একত্র করে শুনবেন দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য কোনও আইনকে সরাসরি বাতিল করতে পারে না – তবে তারা যদি কোনও আইনকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় তাহলে সরকার কার্যত সেটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ফলে ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের রায়ের দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন বিক্ষোভকারীরা।