নিউজ ডেস্ক: ভিনগ্রহে কি প্রাণ আছে? বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্ন আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে কল্পবিজ্ঞান। তৈরি হচ্ছে হলিউডি মুভি। এর উত্তর পেতে চোখে দূরবীন লাগিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন বহু বিজ্ঞানী। এখনও চলছে সেই রহস্যের খোঁজ। আর এই খোঁজ করতে গিয়েই মিলেছে এমন এক চিহ্ন, যা দেখে উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানী মহল। তারা বলছেন, এটা তো প্রাণের চিহ্ন (Aliens Found)!
প্রাণের উপস্থিতি কীভাবে?
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। আমাদের পৃথিবীতে যেমন প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তেমনি কোটি কোটি যোজন দূরে এমনই কোনও গ্রহে হয়তো হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে কোনও প্রাণী। ওয়েব টেলিস্কোপে চোখ রাথতে রাখতেই ধরা পড়েছে একটি গ্রহ। তাতে মিলেছে দুটি গ্যাসের উপস্থিতি। এগুলো হলো ডিএমস বা ডাইমিথাইল সালফাইড ও ডিএমডিএস বা ডাইমিথাইল ডিসালফাইড। এধরনের গ্যাস হঠাৎ তৈরি হয় না। শুধুমাত্র জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। শৈবাল জাতীয় অণুজীব থেকে এই গ্যাস উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ এমন গ্যাস থাকা মানে ওই গ্রহে জীবন্ত প্রাণী, বিশেষ করে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বা এককথায় শ্যাওলার মতো অণুজীব থাকার অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
কী বলছেন গবেষকরা?
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোনমি ইনস্টিটিউটের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট এবং ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক অধ্যাপক নিক্কু মধুসুদন বলেছেন, এটি প্রথম কোনো ভিনগ্রহের ইঙ্গিত, যা সম্ভবত বসবাসযোগ্য। তাঁর কথায়, ‘এটি সৌরজগতের বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। প্রমাণ হল, বর্তমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহে জৈব চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব।’ এই বিপুল বিশ্বে আর কোথাও প্রাণ আছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণাকে এই পর্যবেক্ষণ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
যে গ্রহটিকে দেখা যাচ্ছে, তার আয়তন ঠিক কেমন?
K2-18b গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ৮ দশমিক ৬ গুণ বড়। এর ব্যাসার্ধ আমাদের গ্রহের চেয়ে প্রায় ২ দশমিক ৬ গুণ বড়। গ্রহটি একটি লাল বামন তারার চারপাশে এমন কক্ষপথে ঘুরছে , যাকে ‘বাসযোগ্য অঞ্চল’ বলা হয়। সেখানে জলের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে, যা জীবনের জন্য অপরিহার্য। ওই তারাটি আমাদের সূর্যের চেয়ে আকারে ছোট এবং কম উজ্জ্বল। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। লাল বামন তারার চারদিকে আরেকটি গ্রহের অস্তিত্বও শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
কী জানাচ্ছে টেলিস্কোপ?
১৯৯০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫ হাজার ৮০০টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০২১ সালে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের যাত্রা শুরু হয়। এটি ২০২২ সালে কাজ শুরু করে। এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করেই K2-18 b গ্রহের বায়ুমণ্ডলে মিথেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড শনাক্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত পুরোনো ও নতুন সব তথ্য বিশ্লেষণ করে যে ব্যাখ্যাটি যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে, তা হলো K2-18 b গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে। ’
সংশয় এখনও আছে…
বিজ্ঞানীরা অবশ্য জোরালোভাবে বলেছেন, তাঁরা প্রকৃত জীবন্ত প্রাণীর অস্তিত্ব আবিষ্কারের ঘোষণা করছেন না। বরং তাঁরা সম্ভাব্য জৈব চিহ্নের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা বলছেন, যা একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার সংকেত। তাঁরা মনে করেন, এই কারণে এই আবিষ্কারকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত এবং আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।