নিউজ ডেস্ক: অবশেষে এসএসসি-র (SSC Scam) চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের জন্য সাময়িক সমাধান সূত্র মিলল সুপ্রিম কোর্টে। আপাতত ‘টেন্টেড’ (অযোগ্য) তালিকায় নাম না-থাকা ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে পড়াতে পারবেন বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। পড়ুয়াদের কথা ভেবেই সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত। ফলে আজ, শুক্রবার থেকেই আবার স্কুলে ফিরছেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকেরা।
গত ৩ এপ্রিল এই শিক্ষকদেরই ‘চিহ্নিত অযোগ্যদের’ মাপকাঠিতে রেখে গোটা প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তারপর থেকেই পথে নেমেছেন চাকরিহারারা। তুলেছিলেন স্লোগান, চালিয়েছিলেন স্কুল পরিদর্শকের অফিসে অভিযান। আর এই সবকে কেন্দ্র করে চড়েছিল রাজনৈতিক পারদও। পরিস্থিতি সামাল দিতে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও পরে শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তারপরও তারা যে আশ্বস্ত হতে পারেনি, সেটাও ভাল করে বুঝিয়ে দেয় চাকরিহারা। অন্য দিকে আবার শিক্ষকদের চলে যাওয়ায় চাপে রাজ্যের একাধিক স্কুল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্য়মিকের পড়ুয়াদের পঠনপাঠন, স্কুলের সামেটিভ পরীক্ষা, সামলাবেটা কে? মাথায় হাত পরে শিক্ষা দফতরের।
কী জানালেন শিক্ষামন্ত্রী?
তবে আজ থেকে কারা স্কুলে যাবেন সেই নিয়ে কোনও তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাওয়া হলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘আদালতের রায়ে আজ থেকে কারা স্কুলে যাবেন সেই নিয়ে শিক্ষকদের কোনও তালিকা প্রকাশের কথা মহামান্য আদালত বলেননি। তাই এরকম কোনও তালিকা প্রকাশের প্রশ্ন নেই।’ তবে এ প্রসঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করেন পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, এসএসসি ২১ এপ্রিল পুরো প্যানেল খতিয়ে দেখে যোগ্য ও অযোগ্যদের একটি তালিকা প্রকাশ করবে।
চাকরি কি থেকে গেল?
সুপ্রিম কোর্টে গতকালের শুনানির পরে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ স্বস্তি পেলেও সেটা নেহাতই সাময়িক বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট যে অনুমতি দিয়েছে, সেটার ফলে এটা যদি কেউ ভেবে নেন যে চাকরি থেকে গেল, সেটা ভুল ভাবা হবে। যা নির্দেশ ছিল, সেটাই বহাল থাকল। শুধুমাত্র পড়ুয়াদের কথা ভেবে প্রশ্নাতীতভাবে দাগি বা ‘টেন্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত নন, এমন শিক্ষকদের আপাতত স্কুলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
তবে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে শিক্ষাকর্মীরা (গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি) চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁরাও সাময়িক স্বস্তি পাননি। তাঁদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি শীর্ষ আদালত।
চাকরিতে ফিরলেও আন্দোলন জিইয়ে রাখতে চাইছেন অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা
তবে স্কুলের চাকরিতে ফিরলেও আন্দোলনকেও জিইয়ে রাখতে চাইছেন ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কারন নতুন করে আর পরীক্ষায় বসতে চাইছেন না অবস্থানরত শিক্ষকেরা। সে ক্ষেত্রে স্কুলে শিক্ষকতার কাজে পুনরায় ফিরে গেলে তাঁরা অবস্থানমঞ্চে কী ভাবে সময় দেবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা কি পর্যায়ক্রমে অবস্থানমঞ্চে আসবেন, না কি সময়সুযোগ মতো অবস্থানে বসবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও শিক্ষাকর্মীরা অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
এ প্রসঙ্গে চাকরিহারা (SSC Scam) শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চ’-র তরফে সাংবাদিক বৈঠকে বৃহস্পতিবার বৃন্দাবন ঘোষ এবং মেহবুব মণ্ডল বলেন, “আমরা সরকারের অবস্থানে খুশি নই। অযোগ্যদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আমরা আদালতের নির্দেশে কাজে যোগ দিলেও আন্দোলন থেকে সরছি না। আইনি লড়াইও চলবে পাশাপাশি। সরকার যদি পরীক্ষার নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তবে বিকাশ ভবন, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে অবস্থান বিক্ষোভ হবে চাকরিহারাদের পক্ষ থেকে।”
উল্লেখ্য, নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে আগামী ১৮-১৯ এপ্রিল জেলাভিত্তিক মিছিল এবং গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি রয়েছে ‘যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চ’-এর। এর পরে ২১ তারিখ এসএসসির সামনে অবস্থান এবং ২২ তারিখ শিয়ালদহ থেকে রাজভবন অভিযানেরও ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।