নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে অশান্ত মুর্শিদাবাদ৷ সেখানকার ঘরছাড়ারা আশ্রয় নিয়েছেন মালদায়৷ এমত অবস্থায় এবার মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভ মুর্শিদাবাদে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তারই জেরে বহু বাড়ি-ঘর, দোকান-বাজার জ্বলে পুড়ে খাক হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটেছে। প্রাণের ভয়ে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে মালদায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বহু পরিবার।
রাজ্যে এল জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW in Bengal)
মুর্শিদাবাদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অভিযোগ উঠেছে যে, ওয়াকফ অশান্তির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মহিলাদের উপর৷ তাঁরা অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছেন। আতঙ্কে এফআইআর দায়ের করারও সাহস পাচ্ছেন না৷ এই অভিযোগ পেয়েই রাজ্যে এসেছে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকরের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি৷ হিংসা কবলিত এলাকায় গিয়ে নিপীড়িত মহিলাদের সঙ্গে দেখা করবেন কমিটির সদস্যরা। ওই মহিলারা কী কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তা জানার চেষ্টা করা হবে৷ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব চিত্রটি বুঝে, দ্রুত এবিষয়ে দিল্লিতে রিপোর্ট পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন বিজয়া রাহাতকর৷
ইতিমধ্যেই গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার সকালে বহরমপুর সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছোন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া কিশোর রাহাতকর, কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার-সহ ৫ জনের একটি দল। শুক্রবারই এই দলটি বহরমপুর সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ থাকার পরেই মালদার উদ্দেশে রওনা দেয়। মালদার বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইস্কুলের আশ্রয় শিবিরে রয়েছে মুর্শিদাবাদ থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে যাওয়া বহু পরিবার। ঘরছাড়া পরিবারগুলির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন, “পুলিশের ইন্টালিজেন্স কাজ করলে এই ঘটনা ঘটত না। এটা নিন্দনীয় বললেও কম বলা হবে। হিন্দু-মুসলামনের মধ্যে দাঙ্গা-বিভেদ সৃষ্টি করে অশান্তির সুযোগ নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের মদতে হোক বা তৃতীয় পক্ষের মদতে….আমরা এটা খুঁজে বের করব। শান্তি ফিরিয়ে এনে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়াটাই আমাদের কাজ।”
ঘরছাড়া পরিবারগুলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রাজ্যপালের
অন্যদিকে, শুক্রবার বিকেলেই মালদহের বৈষ্ণবনগরে গিয়ে মুর্শিদাবাদে হিংসায় ঘরছাড়া পরিবারগুলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। রাজভবন সূত্রের খবর, দুপুরে ট্রেনে মালদহ পৌঁছবেন তিনি। এর পরে সড়কপথে যাবেন বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর স্কুলের ত্রাণশিবিরে।
স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন
প্রসঙ্গত, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে অশান্তির জেরে সাময়িক ভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হলেও গত ৪৮ ঘণ্টায় মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত বদলাচ্ছে পরিস্থিতি। স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন। ঠিক এই আবহে বেতবোনা, দাসপাড়া, ঘোষপাড়া, জাফরাবাদ-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা।
অন্য দিকে, অশান্তি কবলিত এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক করার পাশাপাশি ঘরছাড়া পরিবারগুলিকে ঘরে ফেরাতে বিশেষও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও দোকানের তালিকা প্রস্তুত করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরির কাজ।
তবে ধুলিয়ানের হিংসা কবলিত এলাকায় শুক্রবার সকালে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি বাহিনী। ঘনঘন টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি। ‘বিশেষ দায়িত্বে’ থাকা রাজ্য পুলিশের আধিকারিকরা সকাল থেকে বার কয়েক পরিদর্শন করেছেন ধুলিয়ান ও সুতির বেশ কিছু জায়গা। এ বিষয়ে জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক (এসডিও) একাম জে সিংহ বলেন, ‘‘শমশেরগঞ্জের বেতবোনা, দাসপাড়া, ঘোষপাড়া, জাফরাবাদ-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পাশে প্রশাসন সর্বতো ভাবে থাকার চেষ্টা করছে। বন্ধ দোকানগুলি খোলার ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে। যাঁদের দোকানে ভাঙচুর হয়েছে, তাঁদের পাশেও দাঁড়ানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির তালিকা তৈরি করা হবে।’’