মালদা: মুর্শিদাবাদে অশান্তির জেরে বাড়ি ছেড়ে অনেকেই পাশের জেলা মালদায় আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরছাড়াদের একাংশ আশ্রয় নিয়েছেন বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাই স্কুলে। শুক্রবার দুপুরে সেই আশ্রয়শিবিরে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যেরা।
শুক্রবার সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় পারলালপুর হাই স্কুল। কাউকেই ভিতরে ঢুকতে বা বেরোতে দেওয়া হয়নি। আটকে দেওয়া হয় ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করতে আসা আত্মীয়স্বজনদেরও।আশ্রয়শিবির ঘুরে দেখেন কমিশনের সদস্যেরা। কথা বলেন ঘরছাড়াদের কয়েক জনের সঙ্গেও।
এদিন সকাল ১০টা ১০ নাগাদ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস করে মালদা টাউন স্টেশনে পৌঁছয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দুই সদস্যদের প্রতিনিধি দল। এখন সেখানে তাঁরা আপাতত সার্কিট হাউসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেন। তারপর সেখান থেকে রওনা দেন বৈষ্ণবনগরের উদ্দেশে। সেখানে পারলালপুর হাইস্কুলে গিয়ে মুর্শিদাবাদের ঘটনা এবং তার জেরে ঘরছাড়াদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। নানা বিষয় নিয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সেখানে কারা হামলা করেছিল? কেন হামলা করেছিল? কেমন ক্ষতি হয়েছে? সব জানতে চাইছেন।
ঘরছাড়ারা বলছেন, শিবিরে সারারাত ঘুমোতে পারেননি কেউ। তাঁদের নাকি বলা হয়েছে, জোর করে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁরা বলছেন, ‘কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে! ভয়ে সারারাত কেউ ঘুমোচ্ছে না।’ কাঁদতে কাঁদতে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘ভিটেমাটি কিছুই নেই। কোথায় নিয়ে যাবে!’ তাদের আরও অভিযোগ, ঘরছাড়া মানুষজন যাতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে না পারেন, তার জন্য তাদের থাকার জায়গাটা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা, ছিঁড়ে দেন ত্রিপল।
শুধু তাই নয় বৈষ্ণবনগরের যে বাসিন্দারা ওই ঘরছাড়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরকেও আটকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এক মহিলা বলেন, “যাতে তুলে নিয়ে না যায়, তার জন্য সারারাত পাহারা দিচ্ছি আমরা।” আর এক মহিলা বলেন, “আমাদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কথা না বলতে।”
যদিও এ প্রসঙ্গে মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, তবে অনুমতি নিতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি ক্যাম্পে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
জানা গিয়েছে এদিন কথা বলা শেষ হলে প্রতিনিধিদল শিবির পরিদর্শন করবে। তার পর স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরপর গোটা পরিস্থিতির উপর একটি রিপোর্ট তৈরি করে নয়াদিল্লির কাছে পাঠাবেন। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। একদিন আগেই কয়েকজন ঘরছাড়াকে নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তখনই রাজ্যপাল ঠিক করেন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাবেন।