নিউজ ডেস্ক: কোনও আড়ম্বর নয়, একেবারে ঘরোয়া অনুষ্ঠানেই এক হল চারহাত। বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। ষাট পেরিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসার খবর সামনে আসতেই আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। অনেকেই বলছিলেন, খবরটা কী সত্যি! খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিয়ের (Marriage) দিন সকালে সব সন্দেহের অবসান ঘটান দিলীপ ঘোষ। জল্পনার অবসান ঘটাতে মুখ খোলেন পাত্রী রিঙ্কু মজুমদারও। তাই সানাই বাজিয়ে হাজার নিমন্ত্রিতের উপস্থিতি না থাকলেও, ঘরোয়া পরিবেশেই বিশিষ্টদের শুভেচ্ছায় হাজার আলোর রোশনাই জ্বলল নিউটাউনে।
কী বললেন দিলীপ ঘোষ?
বিয়ের দিন সকালেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন দিলীপ ঘোষ। প্রতিদিন মর্নিং ওয়াকের সময় যে স্টাইলে সব প্রশ্নের জবাব দেন, এদিনও সেভাবেই উত্তর দেন সব প্রশ্নের। রসিকতা করে বলেন, “সবই দায়িত্ব পালন হয়ে গেছে। জীবনে বিয়েটাই বাকি ছিল। এটার জন্য যেন পরেরবার পৃথিবীতে আসতে না হয়। বাকি সব হয়ে গেছে। শুধু এটাই বাকি ছিল। ভাবলাম এটাও হয়ে যাক। এতদিন মায়ের দায়িত্ব পালন করা হয়নি। এবার মায়ের দায়িত্ব পালন করব। ৬ বছর বয়স থেকে বাড়িছাড়া। মায়ের সেবা করব। মা আমার কাছে থাকতে এসেছেন। আমি বেরিয়ে গেলে ওনাকে জল দেওয়ার লোকও নেই। এবার সেই দায়িত্বটা পালন করার দরকার ছিল। রাজনীতি যেমন করছি করব। দল যে কাজ দেবে সেটা করব। এখন মা আছে, আমি আর তৃতীয় একজন এলেন। বাকি আমার ভাই ও তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব যেটা পালন করার সেটা করেছি। মাকেও দেখার দরকার ছিল। তাই আমাকে এটা করতে হল।”
কী বললেন দিলীপ-ঘরণী ?
দিলীপ ঘোষকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত রিঙ্কু মজুমদারও। তিনি বলেন, ” খুব এক্সাইটেড। ভীষণ ভালো লাগছে। এটা আমার কাছে সোনার সুযোগ। একুশের ভোটের আগে ইকো পার্কে তখন কথাবার্তা হতো। এমপি ইলেকশনে ওনার সঙ্গে একটু কথাবার্তা হয়েছে। যখন উনি হেরে গেলেন তখন আমি একটু ঘনঘন যেতাম পার্কে। ভাবলাম এখন ওনার কাছে ভিড় কমে যাবে। তবে বিয়ের প্রস্তাবে উনি বলেছেন, ফুচকা খাওয়াতে বা শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারব না। ”
কে এই রিঙ্কু মজুমদার?
রিঙ্কু মজুমদার দীর্ঘ দিনের বিজেপিকর্মী। মহিলা মোর্চার দায়িত্বও সামলেছেন। ওবিসি মোর্চা এবং হ্যান্ডলুম সেলের দায়িত্বেও ছিলেন। প্রাতঃভ্রমণে ৫১ বছর বয়সী রিঙ্কুর সঙ্গে আলাপ হয় ৬১ বছরের দিলীপের। সেই আলাপই শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিণতি পেতে চলেছে। রিঙ্কু মজুমদার বিবাহবিচ্ছিন্না। তাঁর একটি ছেলেও রয়েছে, যাঁর বয়স ২৫ বছর, সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত।
বিয়ের প্রস্তাব কে দিয়েছিল?
দিলীপের ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, গত লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর রিঙ্কুই প্রথম একসঙ্গে সংসার বাঁধার প্রস্তাব দেন। রাজনীতির কারণেই প্রথমে বিয়েতে রাজি হননি দিলীপ। তিন মাস সময় নিয়েছেন তিনি।পরবর্তীতে মায়ের কথায় বিয়েতে রাজি হন দিলীপ। কানাঘুষো, গত ৩ এপ্রিল ইডেনে আইপিএলে কেকেআরের ম্যাচ দেখতে দেখতে নাকি পাকা কথা হয়।
বিয়ের আসরে কী হল?
আড়ম্বর পছন্দ নয় দিলীপের, তাই ঘরোয়া অনুষ্ঠানেই এক হল চারহাত। আমন্ত্রিতের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। কাছের মানুষদের উপস্থিতিতেই সিঁদুর পরিয়ে, মালা বদল করে বিয়ে উদযাপন। চলল বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ। পরে রেজিস্ট্রি। সকাল থেকে দিলীপ ঘোষের নিউটাউনের বাড়িতে হাজির ছিলেন বিজেপি নেতারা। হাজির হন কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল। ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়। সকলেই শুভেচ্ছা জানান নবদম্পতীকে।
বৈদিক মতে কীভাবে হয় বিবাহ?
বৈদিক বিয়ে হল হিন্দুধর্মের একটি প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ পদ্ধতি। এটি বেদের মন্ত্র ও আচারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং এটি পবিত্র এবং আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করার একটি ঐতিহ্যপূর্ণ উপায়। বৈদিক বিয়ে শুধুমাত্র একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান যা দম্পতির মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি করে । এর ঐতিহ্যের শিকড় ঋগ্বেদ শাকাল সংহিতার স্ত্রোতে পাওয়া যায়।
বৈদিক বিয়ের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
মন্ত্র পাঠ: বিয়ের সময় বেদ থেকে মন্ত্র পাঠ করা হয়। এই মন্ত্রগুলি সম্পর্ক, জীবন এবং ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধার কথা স্মরণ করে।
সপ্তপদী: বর ও কনে একে অপরের সাতটি পদক্ষেপের মাধ্যমে সাতটি প্রতিজ্ঞা বিনিময় করে, যা তাদের ভবিষ্যতের জীবনের প্রতিজ্ঞার প্রতীক.
আচার-অনুষ্ঠান: বৈদিক বিয়েতে বিভিন্ন ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়, যেমন – মঙ্গলার্চন, হাত মেলানো, সিঁদুর দান ইত্যাদি.
পবিত্রতা: বৈদিক বিয়েতে নারী ও পুরুষের মধ্যে পবিত্র সম্পর্ক তৈরি হওয়ার বিশ্বাস করা হয়, যা শুধুমাত্র শারীরিক নয়, আধ্যাত্মিক ও মানসিকও.
ঐতিহ্য: এটি হিন্দু সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে.
বিয়ে নিয়ে বিরোধী কটাক্ষ…
দিলীপের বিয়েতে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাঠিয়েছেন ফুলের তোড়া। তবে তৃণমূলের অনেক নেতাই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে। মদন মিত্র থেকে কুণাল ঘোষ, সবাই সেই পথের পথিক। তবে এর জবাব দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর সাফ কথা, রাজনীতিতে মানুষের জন্য কাজ করতে করতে, অনেকেরই নিজের জীবনের দিকে খেয়াল থাকে না। অনেকেই দেরীতে বিয়ে করেন। যেমন করেছিলেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। যেমন করেছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী।
এদের কথা বাদ দিলে ইদানিংকালে যাদের নাম উঠে এসেছিল, তাঁরা হলেন লক্ষ্ণণ শেঠ, কাঞ্চন মিত্র। সকলেই রাজনীতির ময়দানের। আবার শোভন-বৈশাখী জুটি নিয়েও কম আলোচনা হয়নি সমাজমাধ্যমে।
আলোচনা চলবে। আবার সময়ে তা থেমেও যাবে। তবে বিয়ের বিষয়টি একদমই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই এটা নিয়ে ট্রোল করার কোনও অর্থ নেই। রাজনীতিবিদরা যেহেতু সবসময় লাইমলাইটে থাকেন, তাই তাঁদের এসব সহ্য করতে হয়। তবে পোড় খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এসবে কান দেন না। কারণ, নানা কথা শুনে শুনে তাঁরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।যেমন দিলীপ ঘোষ। তিনি এসব নানা কথা গায়ে মাখছেন না। বরং যে কায়দায় লাঠি ঘোরান, তরোয়াল চালান, সেই কায়দাতেই নস্যাৎ করে দিচ্ছেন যাবতীয় কথা। তাঁর মন শুধু বলছে, একটা কাজ বাকি থেকে গেছে। তা করে যেতে হবে। সেটাই তিনি করে দেখালেন।