নিউজ ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর নিয়োগপ্রক্রিয়ায় একাধিক বদল আনতে পারে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। আগামী ৩১ মে-র মধ্যে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলেছে শীর্ষ আদালত। আর তার আগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক বদলের ভাবনা রয়েছে। সেগুলি প্রস্তাব আকারে স্কুল শিক্ষা দফতরে পাঠাতে চলেছে এসএসসি। সরকারের অনুমতি মিললে নিয়োগবিধি বদলে ফেলা হবে।
কী কী বদল আসতে চলেছে?
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই এবার নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ বিধি প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু করেছে এসএসসি। এবার থেকে ওএমআর শিটের কার্বন কপি দেওয়া হবে পরীক্ষার্থীদের হাতে। লিখিত পরীক্ষা শেষে ওএমআর শিট-এর কার্বন কপি নিয়ে যেতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলপ্রকাশের আগে নির্দিষ্ট সিরিজের উত্তরপত্র আপলোড করে দেওয়া হবে। এর ফলে প্রার্থীরা নিজেদের উত্তরপত্র দেখে নম্বর হিসাব করে নিতে পারবেন। এছাড়া কাউন্সিলিং পর্ব নিয়েও একাধিক পরিকল্পনা নিচ্ছে এসএসসি। জানা গিয়েছে ইন্টার্ভিউ ফিরিয়ে নিয়ে আসা হতে পারে। এপ্রিল মাসের মধ্যেই নিয়োগবিধি প্রস্তুত করে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে পাঠাতে চায় এসএসসি বলে স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
জানা গিয়েছে, ২০২২ সাল থেকে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল কমিশন। একাধিক পরিবর্তন করে নতুন নিয়োগবিধির একটি খসড়া ওই সময়েই প্রস্তুত করা হয়েছিল। তা শিক্ষা দফতরে পাঠানোও হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তার পর আর কথা এগোয়নি। তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর পুরনো খসড়া নিয়ে আবার তৎপর হয়ে উঠেছে এসএসসি। পুরনো খসড়াটিতে আরও কিছু পরিবর্তন করে শিক্ষা দফতরে আবার পাঠানো হবে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন এসএসসির চেয়ারম্যান। হয়েছে একাধিক বৈঠকও।
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমার প্রায় নজিরবিহীন এক রায়ে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশ, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক এবং গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মী নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছেন। স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির এবং কারচুপির অভিযোগ উঠলেও এইভাবে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
একসঙ্গে এতজন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষায় এক অভূতপূর্ব সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনিতেই ২০১৬ সালের পর থেকে আর কোনো শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিতে পারেনি। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অপ্রতুলতা প্রায় সব স্কুলেই। তার উপর হঠাৎ এতজন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী উধাও হয়ে যাওয়ায় স্কুলগুলোর পরিকাঠামো যে একবারে ভেঙে পড়েছে তা বলাই বাহুল্য।
প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে রাজ্যের হাজার হাজার স্কুলে। একদিকে প্রশাসনিক অস্থিরতা, অন্যদিকে শিক্ষক ঘাটতির আশঙ্কায় কাঁপছে স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা। স্কুল শিক্ষা দফতরের সাম্প্রতিক সমীক্ষা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। একাদশ-দ্বাদশ স্তরে ধাক্কা ৩১২৫টি স্কুলে। প্রায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলেই অন্তত একজন কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। অনেক স্কুলে দুজন বা তারও বেশি সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। এর ফলে পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজ—সব কিছুর উপরই ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক সংগঠন ও অভিভাবকেরা।
তবে এই পরিস্থিতির কথা ভেবেই চিহ্নিত অযোগ্য বাদে বাকিরা যাতে আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে পারেন সেই কারণে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল পর্ষদ। সম্প্রতি সেই মামলায় যারা অযোগ্য চিহ্নিত নয়,তাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। তবে গ্রুপ সি, গ্রুপ- ডি কর্মীদের জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, গ্রুপ-সি-গ্রুপ ডি-তে প্রচুর অবৈধ নিয়োগ রয়েছে। সেই কারণে তাঁদের কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়নি।