নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার হয়েই চলেছে। সেই নৃশংসতারই প্রমাণ মিলল আবারও। এবার বাড়ি থেকে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে পিটিয়ে মারা হল বাংলাদেশে। জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নেতা ভবেশচন্দ্র রায়কে। মারধরের জেরে ভবেশের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশে। এর আগেও সংখ্য়ালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে বাংলাদেশ থেকে। সেই নিয়ে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কড়া বার্তাও দিয়েছে ভারত। তারপরও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনে বিরতি নেই।
কে এই ভবেশ চন্দ্র রায়?
হিন্দু নেতা, ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৮) বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বিরাল ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন। দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর যতবার হামলা হয়েছে ততবারই গর্জে উঠেছিলেন ভবেশবাবু।
তাঁর পরিবারের দাবি, শুক্রবার স্থানীয় দুই যুবক-সহ চারজন দুটি মোটরসাইকেলে ভবেশের বাড়িতে যান এবং তাঁকে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ি বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইকেই তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাতে তাঁর অসুস্থতার খবর পান পরিবারের সদস্যরা। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা আততায়ীদের ভবেশকে নারাবাড়ি গ্রামে নিয়ে যেতে দেখেছেন, যেখানে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। সেদিনই পরে, আক্রমণকারীরা ভবেশের অচেতন দেহটি একটি ভ্যানে করে তার বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। এরপর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে ভবেশের ছেলে স্বপন চন্দ্র জানান, তাঁদের বলা হয়েছিল, পান, বিড়ি খেয়ে তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক ভবেশকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসকরা। ভবেশের স্ত্রী সান্ত্বনা রানি স্বামীর মৃত্যুতে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘পান, বিড়ি খেয়ে কী ভাবে মৃত্যু হতে পারে?’
বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আব্দুস সাবুর জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করে, গ্রেফতার করার কাজ শুরু হয়েছে। ভবেশের স্ত্রী সান্ত্বনা জানিয়েছেন, তিনি দুই সন্দেহভাজনকে চেনেন। তবে ঠিক কী কারণে খুন হতে হল ভবেশকে, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
বাংলাদেশে হিন্দু হামলা
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ সহিংসতা ও বিক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছে। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হিন্দুদের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের গণধর্ষণ, হত্যা এবং মন্দির অপবিত্র করার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন রয়েছে। গত মাসে, ঢাকা-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (AsK) এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের মোট ১৪৭টি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনাগুলিতে প্রায় ৪০৮টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও রয়েছে। এছাড়াও, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ১১৩টি ঘটনা, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মন্দির ও মসজিদে হামলার ৩২টি ঘটনা এবং ৯২টি মন্দিরে মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে।
হিন্দুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ ভারতের
বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারত বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলতি মাসের শুরুতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ইউনূসের সাথে তার বৈঠকে হিন্দু সহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও আবারও পড়শি দেশে হিন্দু নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটল।