নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ সংশোধনী আইন ঘিরে রাজ্যের একাংশে অশান্তি চলছেই। বস্তুত সংখ্যালঘুদের সিংহভাগই মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে অখুশি। এই আবহে এই আইনের ইতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরতে রাজ্যজুড়ে পথে নামতে চলেছে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা।
মুসলিম কল্যাণেই ওয়াকফ আইন
জানা গিয়েছে, এই প্রচার অভিযান চলবে আজ, ২০ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত। এই প্রচার অভিযানের মাধ্যমে বিজেপি লক্ষ্য রেখেছে, যে সমস্ত ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানো হচ্ছে ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে সেগুলির মোকাবিলা করা। বিজেপি তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, কংগ্রেস এবং তার জোট সঙ্গীরা মুসলিম সমাজকে ভুল বোঝাচ্ছে ওয়াকফ সংশোধনী (Waqf Reforms Awareness) আইন নিয়ে। তাই এবার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেই সংখ্যালঘুদের ওয়াকফ বোঝাতে আসরে নামছে বিজেপি।
বিজেপির দাবি, তুষ্টিকরণের লক্ষ্যে মুসলিমদের ভুল বোঝাচ্ছেন বিরোধীরা। ওই আইন পসমন্দা মুসলিমদের উন্নয়ন ও বিশেষ করে মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। ওই আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও মানতে নারাজ বিজেপি। পুরো বিষয়টি সাধারণ সংখ্যালঘুদের গোচরে আনতে চায় বিজেপি। সেই লক্ষ্যে ওয়াকফ নিয়ে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু প্রধান এলাকা ধরে ধরে ইনডোরে সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
ওয়াকফের সুফল বোঝাতে কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপি ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গড়েছে। জেপি নাড্ডার নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি বঙ্গে আসবে। সেই কমিটিই বঙ্গের সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রণকৌশল ঠিক করবে। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন এবং মুসলিম সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে করবে কমিটি। উর্দু ও হিন্দিতে তৈরি একটি প্রশ্নোত্তরও বিলি করা হবে সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায়।
তোষণের কারণেই মুসলিম সমাজকে ভুল বোঝাচ্ছে কংগ্রেস, তোপ নাড্ডার
এ প্রসঙ্গে জেপি নাড্ডা (BJP) তোপ দাগেন কংগ্রেস এবং তার জোট সঙ্গীদের ওপর। তিনি বলেন,‘‘তোষণের রাজনীতির কারণেই মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করছে এই রাজনৈতিক দলগুলি।’’ তিনি বিজেপির কর্মীদেরকে বলেন, তাঁরা যেন মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে যান এবং তাদেরকে বোঝান এই আইন মুসলিমদের পক্ষে ইতিবাচক।
মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ অশান্তির আঁচ এবার বালুরঘাটে
মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ অশান্তির মতো ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বালুরঘাট শহরে মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। মহকুমা শাসকের দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি ছিল তাঁদের। তবে শনিবার দুপুরে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনেই বিজেপির মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে মিছিলে শামিল হয়েছিলেন জেলার বহু বিজেপি কর্মী, সমর্থক। তাঁরা জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে পৌঁছতেই পুলিশ ‘হাই সিকিওরিটি জোন’ বলে বাধা দেয়। ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। পুলিশ আটকালে সেখানেই কার্যত হাতাহাতি শুরু হয়। পরিস্থিতি মুহূর্তের মধ্যে একেবারে চরম উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে। লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এনিয়ে উত্তপ্ত হয়ে রইল বালুরঘাটের জেলাশাসক দপ্তর।
তবে এত কিছুর পরেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য একটাই, ‘সংখ্যালঘুদের এ বিষয় অবহিত করা এবং ওয়াকফের পক্ষে বাতাবরণ তৈরি করা সংখ্যালঘু মোর্চার দায়িত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সিএএ নিয়ে ভোট বৈতরণী পার করার চেষ্টা করেছিলেন, সেভাবেই ওয়াকফ আইনকেও ভোটের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছেন। কিন্তু আমরা মানুষকে বোঝাব এই ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে প্রান্তিক, গরিব মুসলমান বা মুসলিম মহিলাদের কোনও উপকার হয়নি। মুষ্টিমেয় কিছু নেতা সুবিধা পাচ্ছেন। সেটা বদলাতেই এই আইন।’