নিউজ ডেস্ক: বাংলার জলকন্যা সায়নী দাসের মুকুটে নয়া পালক। এবার স্পেনে জিব্রাল্টার প্রণালী জয় করলেন কালনার মেয়ে। এই নিয়ে নর্থ চ্যানেল, ইংলিশ চ্যানেল, ক্যাটালিনা চ্যানেল, মলোকাই ও কুক প্রণালীর পর এবার জিব্রাল্টার প্রণালী–৬টি চ্যানেল জয়ের নজির গড়লেন সায়নী দাস।
সায়নী এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা সাঁতারু যিনি স্পেনে গিয়ে ৩ ঘন্টা৫১ মিনিটে জিব্রালটার প্রণালীতে ১৫.২ কিলোমিটার সাঁতারে ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়লেন। ভারতীর সময় অনুযায়ী শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টায় সায়নী ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের অভিযানে নামেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষে পৌঁছে যান। বাকি রইলো আর একটি মাত্র চ্যানেল। জাপানের সুগারু চ্যানেল জয় করতে পারলেই ওশেন সেভেন অর্থাৎ সপ্তসিন্ধু জয়ের মুকুট উঠবে সায়নী দাসের মাথায়।
এর আগে ৩০ অগাস্ট দেশের মধ্যে প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মাঝে ৩৫ কিমি দূরত্বের নর্থ চ্যানেল সাঁতরে পার করেন তিনি। একইসঙ্গে এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে পঞ্চসিন্ধু জয়ের রেকর্ডও গড়েন। গত বছরের এপ্রিলেই সায়নী জয় করেন নিউ জিল্যান্ডের কুক প্রণালী। ইতিপূর্বে ২০১৯ সালে আমেরিকার ২০ মাইল দীর্ঘ ক্যাটলিনা চ্যানেলটি পার করেন ১২ ঘন্টা ৪৬ মিনিটে। বুলা চৌধুরীর পর দ্বিতীয় বাঙালি মহিলা হিসাবে ক্যাটালীনা জয় করেন তিনি। শুধু তাই নয় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইংলিশ চ্যানেল এবং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট চ্যানেলও জয় করেন। উল্লেখ্য ২১ মাইল দূরত্বের ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার কাটতে সায়নী দাসের সময় লেগেছিল ১৪ ঘণ্টা ৩ মিনিট। এবার বাকি রইল সুগারু।
এই জয়ের পিছনে রয়েছে কয়েক মাসের কঠোর অনুশীলন
কালনা শহরের বারুইপাড়ার সায়নী অভিজ্ঞতা থেকে জানায়, ‘জল অত্যন্ত ঠাণ্ডা। সেইসঙ্গে ভয়ঙ্কর স্রোত। এছাড়া হাঙরের হামলার আশঙ্কা প্রবল। দিনে তিনশোর মতো জাহাজ চলাচল করে। তাই একটু চাপও ছিল এই চ্যানেল পার করা।’ সহজে এই জয় আসেনি। পিছনে রয়েছে কয়েক মাসের কঠোর অনুশীলন। আবহাওয়ার সঙ্গে সড়গড় হতে তারিফা নামক একটি জায়গায় বাবা তথা প্রশিক্ষক রাধেশ্যাম দাসের তত্ত্বাবধানে সমুদ্রে রোজ দু’ বেলা চুটিয়ে অনুশীলন করে সায়নী। জিব্রাল্টার প্রণালী জয়ের প্রস্তুতি হিসেবে কালনার ভাগীরথীতে কয়েক মাস ধরে সাঁতার কাটা চলে। সাঁতারে বরাবরই তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বাবা রাধেশ্যাম দাস।
সায়নী দাসের বাবা রাধেশ্যাম দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা রূপালীদেবী গৃহবধূ। বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সায়নীর সাঁতারে হাতেখড়ি হয়। তারপর থেকে কঠিন অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সায়নী নিজেকে কার্যত ‘জলকন্যা’ বানিয়ে ফেলেন। হাওয়ার গতিবেগ ,জলের স্রোত এবং দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে এগিয়ে চলার যোগ্য হিসাবে নিজেকে তিনি তৈরি করেন সায়নী। আর তার একের পর এক এই জয়ের কৃতিত্বে বাংলার মেয়ে সায়নী আজ ‘বিশ্ববন্দিতা’। তাই তাঁর এই সাফল্যে খুশি গোটা বাংলা। একই ভাবে উল্লশিত সায়নীর বাবা- মা এবং শুভানুধ্যায়ীরা।
সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাসের কথায়, মেয়ে ওশেন সেভেন জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষে সায়নীকে গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন দ্রোণাচার্য পুরস্কার প্রাপ্ত প্রশিক্ষক তপন কুমার পানিগ্রাহী। ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের অভিযানে তিনি ছাড়াও সায়নীর সঙ্গী হয়েছিলেন তপন পানিগ্রাহী। রাধেশ্যাম বাবু এদিন বলেন, “সায়নীর ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষে পৌছাতে খুবই কাজে লেগেছে জাতীয় কোচ তপন কুমার পানিগ্রাহীর গুরুত্বপূর্ণ টিপস।” সায়নী বলেন, “ষষ্ঠ সিন্ধু জয় সম্পূর্ণ করতে পেরে আমি খুশি। আমার দেশ ভারতের তেরঙা জাতীর পতাকা বিশ্বের মঞ্চে তুলে ধরতে পেরে আমি গর্বিত বোধ করছি।”
সায়নী বাড়ি ফিরলে তাকে নিয়ে জয় সেলিব্রেট করার প্রস্তুতি শনিবার থেকেই শুরু করে দিয়েছেন কালনার ক্রীড়াপ্রেমীরা। তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ‘খেলশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করেছে সায়নীকে। এছাড়াও “মাদার টেরিজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড“ সায়নী পেয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নিজে তেনজিং নোরগে ন্যাশানাল অ্যাভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড তুলে দিয়েছেন সায়নীর হাতে। কালনার মেয়ে সায়নী আজ শুধু বাংলার গর্ব নয়, গোটা দেশের গর্ব। সায়নী আজ বিশ্ববন্দিতা। তাই সায়নী কালনার বাড়িতে ফিরলেই তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের সেলিব্রেশনে মাতার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কালনাবাসী।