নিউজ ডেস্ক: ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ কী সেই নিয়ে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবার পালা প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের। কোন পথে তাদের ভবিষ্যৎ? এবার সেই নিয়ে মামলা শুনবে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানির দিন ঘোষণা করল কলকাতা হাই কোর্ট। এর আগে ৭ এপ্রিল মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মামলা থেকে সরে গিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন। বিচারপতি সেন তাঁর সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত বিষয় উল্লেখ করেছেন। তবে এই ঘটনার পেছনে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতারও ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তিনি বলেছেন, “আমি সবাইকে শ্রদ্ধা করি। আমার এই অভ্যাস নেই।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি বিতর্কে জড়াতে চান না। এর আগে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, আদালতের মর্যাদা রক্ষার জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফলে মামলাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে চলে যায়। এ বার ওই মামলার শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হল। স্থির হল নতুন বেঞ্চও। মামলাটির শুনানি হবে আগামী সোমবার, ২৮ এপ্রিল। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চ এই মামলা শুনবে।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি
এই মামলার শুরু হয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে। তিনি তাঁর রায়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রায় ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট পরীক্ষা এবং ২০১৬ সালে ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্টের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, এই প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছিলেন যে, যাঁদের কাছে টাকা ছিল, তাঁদের কাছে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। এমনকি তিনি এই ঘটনাকে “পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি” বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর নির্দেশে ৩৬,০০০ অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়, যদিও পরে সংখ্যাটি ৩২,০০০ হিসেবে সংশোধিত হয়।
তবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল রাজ্য। সেই শুনানি হবে ২৮ এপ্রিল। এ ছাড়া, এই সংক্রান্ত আরও একটি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিংহ ৪২ হাজার নিয়োগের প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ পেয়েছে।
কিছু দিন আগে এসএসসি-র ২৬ হাজার চাকরি (২৫,৭৩৫) বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এসএসসি মামলার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনিই প্রথম এই মামলা শোনেন এবং ৮১৬১টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। ডিভিশন বেঞ্চেও সেই নির্দেশ বহাল ছিল। পরে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যায়। সেখান থেকে এসএসসি মামলা আবার ফেরানো হয় হাই কোর্টে। বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে বিচারপ্রক্রিয়া শেষের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সাড়ে তিন মাসেই সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে। এর ফলে বাতিল হয়ে গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের চাকরি। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। সেখানেও পুরো প্যানেল বাতিলের রায়ই বহাল রাখা হয়। তার মাঝেই এ বার প্রাথমিকের চাকরি বাতিলের মামলার শুনানির দিন ঘোষণা করল হাই কোর্ট।
এই মামলার প্রভাব শুধু চাকরিহারা শিক্ষকদের উপরই পড়েনি, বরং রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ার ফলে অনেক স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, চাকরিহারা শিক্ষকরা তাঁদের জীবিকা হারিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। অনেকে দাবি করেছেন, যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করে বিচার করা উচিত ছিল। কিন্তু তথ্যপ্রমাণের অভাবে এই বাছাই সম্ভব হয়নি বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে।