নিউজ ডেস্ক: হিংসার ফল কী হতে পারে, অতীতে তা দেখেছে বাংলা। অতীতে দেখেছে ভারত। কিন্তু এখনও সেই হিংসা মাঝে মাঝেই ফিরে আসছে। সম্প্রতি যার উদাহরণ মুর্শিদাবাদ। রাতারাতি বেঘর হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। এর দায় কার? ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে বিরোধীদের দুষছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যাঁরা এই হিংসার শিকার, তাঁরা দুষছেন শাসককেই। ফলে ছবি পরিষ্কার। কিন্তু কেন জেগে ঘুমোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী! অতীত থেকে কি তাঁর শিক্ষা নেওয়া উচিত নয়? একদিন এভাবেই তো হিংসার আগুন ছারখার হয়ে গিয়েছিল বাংলা। সব কিছু চলে গিয়েছল হাতের বাইরে। শাসকের ইন্ধনেই সেদিন হয়েছিল সবকিছু। আজও বাংলায় তা হয়ে চলেছে।
চলুন, স্বাধীনতার এতগুলো দশক পেরিয়ে এসে আমরা একবার ফিরে যাই পরাধীন ভারতে। কীভাবে ভাগ হয়েছিল বাংলা, কীভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল গোটা দেশ, সেদিকে একবার নজর দিই। পরিস্থিতির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, সবকিছু তছনছ করে দিতে কীভাবে মদত দেয় হিংসা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীনই ব্রিটিশ বুঝতে পেরেছিল, বেশিদিন আর ভারতকে পরাধীন রাখা যাবে না। সেসময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। তৈরি হল ক্রিপস মিশন। ভারতের হাতে স্বাধীনতা তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে পাঠানো হল প্রতিনিধি দলকে। কিন্তু ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবকে না মানল কংগ্রেস, না মানল মুসলিম লিগ। ব্যর্থই হল এই মিশন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীনই লাহোর অধিবেশনে এরমধ্যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান তৈরির ডাক দিয়েছেন মহম্মদ আলি জিন্না। তলে তলে তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন কীভাবে তাঁর কাজ হাসিল করবেন। কেন না দেশভাগের কথায় সায় নেই অনেকেরই। এই পরিস্থিতিতে ৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে কংগ্রেস। ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর এমনিতেই ভারতীয়দের ওপর চটে ছিল ব্রিটেন। তাই ৪২-এর আন্দোলন ব্যর্থ করতে কংগ্রেসের সব নেতাদের জেল বন্দি করা হল। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছিল, তা কিছুটা থিতিয়ে গেল। এরমধ্যে গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে নেতৃত্ব দিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। ভারতের পূর্ব প্রান্ত থেকে অভিযান শুরু করে ব্রিটিশ ভিত নড়িয়ে দিলেন তিনি। নাগাল্যান্ড, কোহিমায় তখন চলছে স্বাধীনতার উদযাপন। উড়ছে ভারতের পতাকা। জাপানি সেনার সাহায্য নিয়ে দেশের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে এগোবার পরিকল্পনায় মশগুল আজাদ হিন্দ বাহিনী। এসময়ই বিধ্বস্ত জাপান। তার ধাক্কা লাগল আজাদ হিন্দ বাহিনীর ওপরও। ধাক্কা লাগল যুদ্ধ করে ব্রিটিশকে হঠানোর। তবে কেঁপে গেল ব্রিটেন। চার্চিলের পর প্রধানমন্ত্রী হলেন ক্লেমেন্ট অ্যাটলি। তিনি ১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ তিন জন মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠন করলেন ক্যাবিনেট মিশন। ভারতের হাতে কীভাবে স্বাধীনতা তুলে দেওয়া যায়,তার পর্যালোচনা করবে তারা। মার্চের শেষেই ভারতে এল ক্যাবিনেট কমিশন। তখনই তারা বুঝিয়ে দিল, ১৯৪৮ সালের মধ্যে ভারত স্বাধীন হবে। তার জন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হল। কিন্তু এরমধ্যেই ৭ এপ্রিল দিল্লিতে মুসলিম লিগের কনভেনশন ডেকে পাকিস্তানের জন্য আলাদা দেশের দাবি করলেন জিন্না। এর জন্য ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দিলেন তিনি। আওয়াজ উঠল, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান। মানে, হিংসার মধ্যে দিয়েই যে পাকিস্তান আদায় করা হবে, তার একটা পটভূমি তৈরি হয়ে গেল । ভারতে তখন মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দশ কোটি। এর মধ্যে বাংলা ও পাঞ্জাবে সংখ্যাধিক্য।
এরমধ্যেই ভারতের হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য তৈরি হল ইনটারিম গভর্নমেন্ট। ২৪ আগস্ট ঘোষণা হল ইনটারিম গভর্নমেন্টের কথা। এই সরকারে কংগ্রেসের থাকবেন ৬ জন সদস্য, মুসলিম লিগের ৫ জন, বাকি সংখ্যালঘুদের থেকে ৩ জন। ইনটারিম গভর্মেন্টের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তৎকালীন ভাইসরয় ওয়াভেল। ডি ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী হলেন জহরলাল নেহরু। এখানেই কোথাও সহ্য হল না জিন্নার। তিনি চাইলেন মুসলিম লিগের সদস্য সংখ্যাও কংগ্রেসের সমান করতে হবে। এছাড়া আরও কিছু প্রাদেশিক দাবি দাওয়া নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। তবে তার মধ্যে ইনটারিম গভর্মেন্টে ২ জনের নাম বাদ দিয়ে বাকি মুসলিম সদস্যদের নাম দেওয়া হল।
এরমধ্যে ১৬ আগস্ট থেকে টানা হিংসার ঘটনা ঘটছে কলকাতায়। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। দোকান লুঠ হচ্ছে। মানুষ ভয়ে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এককথায়, মুখ্যমন্ত্রী সুরাবর্দীর নেতৃত্বে বাংলা জুড়েই এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলেন, এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে দেশ ভাগের দাবি সহজ হয়। খোদ মৌলানা আবুল কালাম আজাদ অ্যাসোসিসেয়েটড প্রেসকে এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, কলকাতার হিংসা পরিস্থিতির জন্য দায়ী বাংলা মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ খোদ আজাদ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ৪৬ এর দাঙ্গার পিছনে হাত ছিল সুরাবর্দি মন্ত্রিসভার। আজাদ ১৯ আগস্ট দেখা করেন ভাইসরয় ওয়াভেলের সঙ্গে।
অশান্তি চলছে। মানুষ মরছে। আর এরমধ্যেই ভারতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর্ব চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি হল ১৯৪৬ সালের ২রা সেপ্টেম্বর। ভাইস প্রেসিডেন্ট হন জহরলাল নেহরু, মানে ডি ফ্যাক্টো প্রাইম মিনিস্টার। বাণিজ্য, অর্থ, আইন, রেল বিমান জাহাজ সহ যোগাযোগ মন্ত্রক ছিল মুসলিম লিগের হাতে। বলা চলে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকই হাতে পায় মুসলিম লিগ। কিন্তু কোথাও যেন নেতৃত্বের সংঘাত মাথা চাড়া দেয়। নেহরু না জিন্না, স্বাধীন দেশের মাথায় থাকবেন কে, তা নিয়ে শুরু হয় ইগোর লড়াই।
এরমধ্যেই ভাগের দাঙ্গা দশ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়েছে। হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে নোয়াখালি থেকে বিহারে। নির্বিচারে মানুষ মারা যাচ্ছে। নোয়াখালির ঘটনা দেখে শিউড়ে উঠছেন রাজনৈতিক নেতারা।
দাঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেমন পথে নামেন মহাত্মা গান্ধী, তেমনি নিন্দায় সরব হন মুসলিম লিগ নেতাদের । হরিজনে তিনি বলেন, সংবাদপত্রের খবরে যদি বিশ্বাস করা যায়, তাহলে নগ্নভাবে হিংসা ছড়াতে দেখা যাচ্ছে লিগারদের। এরমধ্যেই ভাইসরয় যখন কলকাতায় পার্ক সার্কাসের কাছে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে আশ্রিতদের দেখতে যান, তখন স্লোগান ওঠে, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, পাকিস্তান জিন্দাবাদ
৩০ আগস্ট অভ্যন্তরীণ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শরৎচন্দ্র বসু বলছেন, দাঙ্গায় পুলিশকে অকেজো করে রাখার জন্য দায়ী সুরাবর্দীর মন্ত্রিসভা। পুলিশকে বলা হয়েছিল, কিছুই হবে না. সবকিছু শান্ত থাকবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টো।
সুরাবর্দী সরকারের নিন্দায় সোচ্চার হয় কংগ্রেস মন্ত্রিসভাও। তারা জানায়,শান্তিপূর্ণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সরকার, প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৬ আগস্ট পাবলিক হলিডে ঘোষণা করেছিল সরকার , সরকার এটাই বোঝাতে চেয়েছিল যে ১৬ আগস্ট পালন যেন সরকারেরই নির্দেশ। যারা তা পালন করবে না, তারা কোনও নিরাপত্তাও পাবে না ।
একদিকে হিংসা ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে ভারত ভাগ রোধ করে একটাই সরকার গঠনের জন্য প্রতিদিন আলোচনা চলছে। একবার জট আসছে। পরের দিন মনে হচ্ছে, জট খুলছে। এই অবস্থায় ২৯ সেপ্টেম্বর সরকার নির্দেশ জারি করল, সংবাদমাধ্যমে হিংসার খবর প্রকাশ করা যাবে না। সোজা কথায়, সরকারের অপকর্ম যাতে ফাঁস না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিল বাংলা সরকার। প্রতিবাদে ১লা অক্টোবর থেকে বাংলার সমস্ত কাগজের অফিস সংবাদপত্র না ছাপার সিদ্ধান্ত নিল। তখন এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল কাগজ প্রকাশনা।
এভাবেই এসে গেল অক্টোবর। মাসের শুরুতেই ম্যাজিক। ফের নেহরু জিন্না কথা শুরু হল। নতুন করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। নেহরু জিন্না কথা বললেন প্রায় দেড় ঘণ্টা। বৈঠক শেষে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন নেহরু। শুনলেন দু পক্ষের কথা। সেসব শুনে গান্ধীজিও কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠলেন।
কিন্তু এই আশার রেশ কাটতে বেশিদিন লাগল না। ১০ অক্টোবর নতুন করে আবার জট দেখা গেল। শেষে ভোপালের নবাব আলোচনায় বসলেন জিন্নার সঙ্গে। কথা বললেন মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গেও। পরপর দুদিন চলল সেই আলোচনা। কিন্তু নেতাদের চেষ্টা বিফলে গেল। শেষে ১২ অক্টোবর ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেলের সঙ্গে ৮৫ মিনিট বৈঠক করলেন জিন্না। এরপর বৈঠকে বসলেন লিগের বাকি নেতাদের সঙ্গেও। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হল না। শুধু ইঙ্গিত মিলল, বাইরে থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়া যেতে পারে।
অক্টোবরের মাঝামাঝি গভীর খেলা শুরু করে দিল লিগ। ভাইসরয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য জিন্নাকে দায়িত্ব দিল মুসলিম লিগ ওয়ার্কিং কমিটি। ১৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করল লিগ। তবে তাতে থাকলেন না জিন্না। নতুন করে মন্ত্রীদের পোর্ট ফোলিও বানানো হল। সবকিছু দেখে ইস্তফা দিলেন শরৎচন্দ্র বোস। মুসলিম লিগ তার তালিকায় বাংলা থেকে রাখল একজন অমুসলিমের নাম। তাঁর নাম জে এন মণ্ডল। জিন্না যেদিন ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দিয়েছিলেন, ধর্মতলার লিগের মঞ্চে ছিলেন এই জে এন মণ্ডল। তবে একজন হরিজনকে কীভাবে তালিকায় রাখল মুসলিম লিগ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গান্ধী। লিগের মতলব নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই নিজের ওজন যাচাই করতে ৫ দিনের পেশোয়ার ওয়াজিরিস্তান সফরে গেলেন জহরলাল নেহরু। কিন্তু সেখানে ধাক্কা খেলেন তিনি। সীমান্তে নেহরু বিরোধী প্রদর্শনী চলল পুরোমাত্রায়।
অক্টোবরের শেষে নেহরুর যখন পেশোয়ার মিশন ধাক্কা খেল, তখন বাংলায় জ্বলছে নোয়াখালি। হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নির্বিচারে খুন হচ্ছেন হিন্দুরা। তার পাল্টা প্রভাব পড়ছে বিহারে। বাংলা জুড়ে গভীর সঙ্কটের মধ্যেই মুসলিম লিগ ও বাংলার সুরাবর্দী সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করল কংগ্রেস। নেহরু ও ভাইসরয়ের মধ্যে ৬টি চিঠি চালাচালি হল। কংগ্রেস দাবি করল, অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেওয়া নিয়ে লিগকে পাকা কথা দিতে হবে। এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই ২২ নভেম্বর মুসলিম লিগ জানিয়ে দিল, অন্তর্বর্তী সরকার তারা বয়কট করছে। এরপর ৯ ডিসেম্বর পাকাপাকি ভাবে সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল তারা। আর সেখানেই ধাক্কা খেল অখন্ড ভারতের স্বপ্ন। বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দী জানালেন, ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের সঙ্গে একতরফা বোঝাপড়া করলে তিনি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ অবজ্ঞা করবেন এবং বাংলাকে স্বাধীন ঘোষণা করবেন। মুসলিম লিগ যখন দেশ ভাগের কথা তুলল, তখন বাংলা ভাগের সওয়াল করলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
এই পরিস্থিতিতেই ১৯৪৭ সালের ২২ মার্চ ভারতে নতুন ভাইসরয় হয়ে আসেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। এর আগের বছর যখন ক্যাবিনেট মিশন তৈরি হয়, তখন ভারতকে আলাদা করার কথা হয়নি। বরং কথা হচ্ছিল, বিভিন্ন অঞ্চলকে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। মুসলিম লিগ চাইছিল যেসব প্রদেশে মুসলিম সংখ্যা বেশি, সেখানে তাদের শাসন কায়েম করতে। মানে, বাংলা আর পাঞ্জাবে তারাই যে শাসন করবে, এটা তারা ঠিক করে ফেলেছিল। কিন্তু এই নিয়েও ভোটাভুটি হয়। হিন্দুদের জন্য আলাদা হোমল্যান্ডের দাবি জোরালো হয়। বিধানসভায় ভোটাভুটিতে তা পাসও হয়ে যায়। মৌলানা আজাদ তাঁর ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম বইতে লিখেছেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন নতুন ভাইসরয় ও গভর্নর হওয়ার পর ইংরেজদের মাথায় ভিন্ন চিন্তা আসে এবং তখন থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে থাকে। ২২ মে ভাইসরয় হয়েই লন্ডনে ফিরে যান মাউন্টব্যাটেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তারপর ভারতে ফেরেন ৩০ মে। এর ঠিক ২ দিন পর, অর্থাৎ ২রা মে মাউন্টব্যাটেন বৈঠকে বসেন কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ নেতাদের সঙ্গে। এরপর দ্রুত পটবদল হতে থাকে। একমাস পর অর্থাৎ ৩রা জুন মাউন্টব্যাটেন ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনায় শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। কী সেই শ্বেতপত্র বা হোয়াইট পেপার? সেই শ্বেতপত্রেই ছিল ভারত ভাগের রুপরেখা। ব্রিটিশদের দণ্ডিত ভারত, আমাদের খণ্ডিত ভারত। ব্রিটিশ সরকারের সেই ঘোষণার মাধ্যমেই ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান নামে ভারতবর্ষের বিভক্তি চূড়ান্ত রুপ পায়। পাকিস্তান স্বাধীন হয় ১৪ আগস্ট। ভারত ১৫ আগস্ট।
ফলে বলাই যায়, মুসলিমদের জন্য আলাদা পাকিস্তান তৈরির জন্য মুসলিম লিগের দরকার হয়েছিল হিংসার পরিস্থিতি। যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, আমাদের এই কলকাতার বুকে। সেদিনই দেশভাগের বীজ বপন হয়েছিল এই শহরে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা লাগিয়েই কাজ হাসিল করেছিল মুসলিম লিগ। সেকারণেই মুর্শিদাবাদের ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। সেই ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের। বিরোধীদের কথা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে না দিয়ে কি একটু সতর্ক হবেন মুখ্যমন্ত্রী? রাজ্যবাসী বলছে, ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন।