নিউজ ডেস্ক: রাতভর দফায় দফায় উত্তাল হয়েছে করুণাময়ী চত্বর। স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে রাতভর বসে রইলেন চাকরিহারারা। যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশের দাবিতে অনড় তাঁরা। মঙ্গলবার ভোরের আলো ফুটলেও থামল না স্লোগান। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘হোক কলরব’-এর মতো স্লোগান শোনা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীদের মুখ থেকে। সকালেও তাঁরা জানালেন, রাস্তা থেকে সরবেন না তাঁরা। এরপর এসএসসি আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে ময়দানেও যান চাকরিহারারা। চলে স্লোগানিং। ইতিমধ্যেই তেরো জনের প্রতিনিধি দল আচার্য সদনে পৌঁছে গিয়েছেন আলোচনার জন্য।
উল্লেখ্য, সোমবার চাকরিহারাদের সঙ্গে এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক ছিল। তবে সেই বৈঠক নিষ্ফলা হয়। এরপর আজ জানা যাচ্ছে ফের একটি বৈঠক হবে এসএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে চাকরিহারাদের। সূত্রের খবর, সেই বৈঠক হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা তালিকা শিক্ষা-দফতরে পাঠাবে এসএসসি। সংশ্লিষ্ট বৈঠকে কারা যাবেন, তা নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভের জেরে গতকাল, সোমবার সারারাত প্রচুর এসএসসির মহিলা স্টাফ ভিতরে আটকে রয়েছেন। কোনও মহিলা স্টাফই বাইরে বেরোতে পারেন নি। এমনকী, এসএসসির স্টাফদের জন্য গতকাল, সোমবার রাতে খাবার আনতে চাইলেও সেই খাবার ভিতরে ঢুকতে দেননি বিক্ষোভকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। যার জেরে সোমবার রাত থেকে অনেকেই না খেয়ে রয়েছেন এসএসসি-র স্টাফরা। খাবার নিয়ে এসএসসি অফিসের ভিতরে ঢুকতে চাইলেও সেই খাবার ঢুকতে দিতে চাইছেন না চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। একাধিক মহিলা স্টাফ স্কুল সার্ভিস কমিশনের আপাতত ভিতরে আটকে রয়েছেন।
কথা ছিল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) তরফে যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। রাত ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ এসএসসি বিবৃতি দিয়ে জানায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের নড়চড় হবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাফিক যাঁরা বেতন পাচ্ছেন, কেবল তাঁরাই বেতন পাবেন এবং চাকরি করবেন। একই কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয় এসএসসি চত্বরে। চাকরিহারাদের বক্তব্য, আদালতে হলফনামা দিয়ে এসএসসি বলেছিল, ৬ হাজার ২০০-র বেশি কিছু চাকরি সুপারিশের ভিত্তিতে হয়েছিল। অর্থাৎ সেগুলি বাদে বাকিগুলি বৈধ। তাহলে সেদিন কি এসএসসি ভুল তথ্য দিয়েছিল? নাকি অযোগ্যদের আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে চতুর্থ কাউন্সেলিং থেকে বাকি তালিকা অযোগ্য বলে বলছে?
গোটা ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং এসএসসি (SSC) চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারী চাকরিহারারা। একই সঙ্গে চাকরিহারাদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দু’ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণারও দাবি তুলেছেন তাঁরা। যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করা পর্যন্ত এসএসসি ভবন ঘেরাও করে রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের সাফ কথা, “দুর্নীতি করেছে রাজ্য, ফলে সব দায় রাজ্যকে নিতে হবে। এর দায় যোগ্য শিক্ষকরা কেন নেবেন?” এই মুহূর্তে এসএসসি ভবনের সামনে ক্রমশ বাড়ছে উত্তেজনা। ভেতরে ও বাইরে চাকরিহারাদের ভিড়। পরিস্থিতি সামলাতে কার্যত নাকানিচোবানি খাচ্ছে পুলিশ। সন্ধেয় দু’পক্ষের মধ্যে একবার ধস্তাধস্তিও হয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, রাতভর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে অবস্থান বিক্ষোভের পর সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এক চাকরিহারা। তাঁকে দেখতে এলেন চিকিৎসক তমোনাশ ঘোষ। তাঁর পালস রেট মাপেন চিকিৎসক। সঙ্গে সঙ্গেই ওআরএস খাওয়ানো হয় তাঁকে। পাশে, মাথার কাছে বসে তাঁর সহযোদ্ধারা। চিকিৎসক যখন ওই চাকরিহারা মহিলার পালস রেট দেখছিলেন সহযোদ্ধারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘চিকিৎসা করতে হবে না, আমরা এখানেই মরব।’ প্রতিটি কথায় শ্লেষ ঝরে পড়ছে। কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই চাকরিহারা। চিকিৎসককে সামনে পেয়েও নিজের কষ্টের কথা বলতে থাকেন চাকরিহারারা।
তবে শত কষ্টেও যতক্ষণ না ফয়সলা না হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা এখানেই বসে থাকবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা। এক চাকরিহারা বলেন, “আমাদের বাড়ির লোক তো আমাদের মুখে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। আমরা কী করব? আমাদের জন্য সরকার না ভাবে, আমরা এটাই চালিয়ে যাব। আমরা মরে গিয়েছি। আমাদের শুধু শরীরটা রয়েছে, আত্মা শেষ হয়ে গিয়েছে।”