নিউজ ডেস্ক: ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক খুনের ঘটনা হামেশাই নজরে আসে। অমরনাথ, বৈষ্ণোদেবী বা অন্যান্য ধর্মস্থানে আগত পুণ্যার্থীরাও বার বার হামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু প্রায় দু’দশকের ব্যবধানে কাশ্মীর উপত্যকার এত বড় হামলার শিকার হলেন পর্যটকেরা। পুলওয়ামার পর জম্মু ও কাশ্মীরের মাটিতে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার। বিকেলে পহেলগাঁওয়ে এক রিসর্টে পর্যটকদের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-তে সন্ত্রাসী হামলায় এখনও পর্যন্ত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারেই বলে মনে করা হচ্ছে।
রীতিমতো ধর্মীয় পরিচয় দেখে দেখে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জঙ্গিরা এসেছিল সেনার পোশাক পরে। সব মিলিয়ে ৪০ রাউন্ড গুলি চলেছে। মূলত আক্রমণ করা হয় অমুসলিমদের। ইতিমধ্যেই হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্করের টিআরএফ বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। জানা যাচ্ছে, এই হামলার যুক্ত থাকা জঙ্গিদের বেশিরভাগই বিদেশি।
প্রকাশ্যে মৃতের তালিকা
ইতিমধ্যেই এই ভয়ংকর জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে এসছে মৃতের তালিকা। মঙ্গলবার রাতে সরকারিভাবে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে এই জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। মৃতের তালিকায় রয়েছেন, ২৬ বছর বয়সি নৌসেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে হয়েছিল তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাণ হারিয়েছেন এক আইবি আধিকারিক। এছাড়া, নেপাল ও আরব আমিরশাহীর বাসিন্দা দুই বিদেশিকেও হত্যা করেছে জঙ্গিরা।
এছাড়াও নিহতদের মধ্যে ওড়িশার বালাসোর জেলার রেমুনা এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত সৎপথী নামে এক পর্যটকও রয়েছেন। জানা গিয়েছে, প্রশান্ত তার স্ত্রী ও ছেলের সাথে পহেলগামে ঘুরতে গিয়েছিলেন, তবে গতকাল জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় তার। যদিও তার স্ত্রী ও ছেলে নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে।
এর পাশাপাশি তালিকায় দেখা যাচ্ছে, মৃতের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ুর বাসিন্দারা। যদিও বেসরকারি মতে এই জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় বাংলার কে কে মারা গেলেন?
১। মণীশরঞ্জন মিশ্র
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃতদের মধ্যে পুরুলিয়ার এক ব্যক্তি রয়েছেন। মৃতের নাম মণীশরঞ্জন মিশ্র। তাঁর বাড়ি ঝালদা পৌরসভা এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরোনো বাঘমুন্ডি রোডে। তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো(IB) অফিসার ছিলেন। বর্তমানে কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে হায়দরাবাদে থাকতেন। জানা গিয়েছে, গতকালই পরিবার নিয়ে পহেলগাঁওতে বেড়াতে গিয়েছিলেন মণীশ। সেখানেই স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
২। বিতান অধিকারী
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় কলকাতার এক যুবকেরও মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম বিতান অধিকারী। বেহালার বৈশালী পার্কের বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কাশ্মীরের বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই গতকাল জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
৩। সমীর গুহ
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ।
আতঙ্কিত পর্যটকরা
স্বাভাবিকভাবেই চোখের সামনে এরকম ভয়াবহ ঘটনা দেখে শিউরে উঠেছেন পর্যটকরা। যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভরা পর্যটনের মরশুমে উপত্যকায় থাকা হাজার-হাজার পর্যটক প্রবল আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেই তড়িঘড়ি কাশ্মীর ছেড়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাকেশ শর্মা নামে তেমনই একজন বলেন, ‘এটা স্রেফ কল্পনার বাইরে। আমি জানি না যে কে এখানে থাকবেন বা থাকবেন না। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি স্রেফ বাড়িতে ফিরতে চাই।’
অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া একাধিক ছবি এবং ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে চারিদিকে প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে। কাঁদছেন মহিলারা। পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মহিলা ফোনে বলেন যে ‘আমার বরের ঠিক মাথায় গুলি করল। আরও সাতজন আহত হয়েছেন।’
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, পর্যটকরা যখন নিজের মতো করে উপভোগ করছিলেন, সেইসময় জঙ্গিরা গুলি চালাতে থাকে। এক মহিলা পর্যটক জানান, গুলির শব্দ শুনেই সকলে আতঙ্কিত হয়ে ছুটতে থাকেন। কোনও আচ্ছাদনের পিছনে লুকিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিস্তীর্ণ ধূ-ধূ প্রান্তরে লুকিয়ে পড়ার কোনও জায়গাই ছিল না।