নিউজ ডেস্ক: ৩ জুলাই থেকে শুরু অমরনাথ যাত্রা। তার আগে ভরা পর্যটনের মরশুম। আর সেসময়েই জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা। পহেলগাঁও-তে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কাশ্মীরের স্থানীয়রাও। এমত অবস্থায় এক স্থানীয় বাসিন্দার নেতৃত্বে কাশ্মীরের অধিবাসীদের এক বড় অংশকে মোমবাতি মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছে। তবে সেই মিছিলের একটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে কয়েকটি হাসিমুখ। আর সেই ভিডিয়ো ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে নেটপাড়ায়।
পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে খুন করা হয়েছে। মহিলা ও শিশুদের আলাদা করে রেখে শুধু পুরুষদের খুন করেছে পাক মদতপুষ্ট লস্কর ই তৈবার সংগঠন টিআরএফের জঙ্গিরা। এরপর থেকেই ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে গোটা বিশ্ব। প্রতিশোধের অপেক্ষায় ফুঁসছে গোটা দেশ।
নিরপরাধ ও নিরস্ত্র মানুষের উপরে নৃশংস হত্যালীলা চালানোর মতো গর্হিত অপরাধ আর হয় না। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিরা নির্বিচারে যে গণহত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তার জন্য তাদের যথোচিত শাস্তি হবে। কিন্তু তার আগে ইন্টারনেটে এমন একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, যা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেট নাগরিকরা।
হাসিমুখ নিয়ে উঠল প্রশ্ন
জানা গিয়েছে পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত ২৬ জনের প্রতি সমবেদনা এবং নাশকতাবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু পদযাত্রায় শামিল কয়েকজনকে হাতে মোমবাতি নিয়ে হাসতে হাসতে হাঁটতে দেখা গিয়েছে ওই ভাইরাল ভিডিয়োতে। কাশ্মীরে বসবাস করে সন্ত্রাসবাদীদের বিরোধিতায় মোমবাতি মিছিল বের করা নিঃসন্দেহে সাহসিকতার পরিচয়। কিন্তু সেই মিছিলে কয়েকজনকে হাসিমুখে হাঁটতে দেখে স্বভাবতই ক্ষোভে ফুঁসছেন নেট নাগরিকরা। আর তার জেরেই গোটা মিছিলের বিরুদ্ধেই তাঁরা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া এই পোস্টে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখের বেশি ভিউজ এবং ৪,০০০ এর বেশি লাইকস পেয়েছে। সেইসঙ্গে ভিডিয়ো দেখার পরে ২০০ জনের বেশি মন্তব্যও করেছেন। একজন নেট নাগরিক লিখেছেন, ‘এইসব স্থানীয় বাসিন্দা কী করে হাসছেন।’ আর একজন বলেছেন, ‘এত নির্লজ্জ! কীভাবে এরা হাসতে পারছে।’ এছাড়াও কমেন্ট সেকশনে অসংখ্য মানুষ এই ঘটনায় তাঁদের ক্ষোভ স্পষ্ট করতে কঠোর শব্দচয়নও করেছেন। যেমন একজন লিখেছেন, ‘এইভাবে হেসে হেসে মোমবাতি মিছিল বের করার অর্থ, আপনারা মানুষ হতেই পারেন না। আপনাদের মনে এই দুর্ঘটনা নিয়ে এতটুকু সমবেদনা নেই।’ এইভাবে মোমবাতি মিছিলে হেঁটে যাওয়া হাস্যরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ঘৃণা উগরে দিতে কার্পণ্য করেননি নেট নাগরিকরা।
কাশ্মীর থেকেই উঠে এলএক মানবিকতার ছবি
তবে একদিকে যখন কাশ্মীরের কিছু মানুষের এই আচরণে ক্ষোভে ফুঁসছে নেটপাড়া ঠিক তখনই এই ঘটনার পাশাপাশি কাশ্মীর থেকেই উঠে এসেছে এক মানবিকতার ছবি তথা বিপদের সময় ধর্ম ভুলে পাশে দাঁড়ানোর ছবি। পহেলগাঁও-তে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ কাশ্মীরের স্থানীয়রাও। স্রেফ তাই নয়, আনাচা কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাকি পর্যটকদের উদ্ধারেও ঝাঁপিয়ে পড়লেন কাশ্মীরিরা। সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তারা। জঙ্গি হামলা থেকে পর্যটকদের বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্যুবরণ করতে হল কাশ্মীরি মুসলিম যুবক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহকেও।সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয় এক্স হ্যান্ডেলে। তাতেই দেখা যায়, ঘুরতে গিয়ে জঙ্গি হামলায় আহত একটি ছেলেকে কাঁধে চাপিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন এক কাশ্মীরি যুবক। সেই ভিডিও শেয়ার করেই এক ব্যক্তি লেখেন, “সন্ত্রাসবাদের সময় মানবতাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। জখম বালককে উদ্ধারে নিজের জীবন বাজি এক কাশ্মীরির। এটাই প্রকৃত কাশ্মীর। হিংসা নয়, কাশ্মীরের আসল রূপ হল সহমর্মিতা, সাহস ও ভালবাসা। সারা বিশ্ব দেখুক আসল চিত্র।”
অন্যদিকে, মঙ্গলবারের জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন স্থানীয় কাশ্মীরি মুসলিম যুবক বছর চব্বিশের সৈয়দ আদিল হুসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সবুজে ঘেরা বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ঘোড়ায় চাপিয়ে গাইড করছিলেন হুসেন। আচমকাই জঙ্গি হামলায় সবাই যখন এদিক ওদিক পালাতে থাকে, তখন এই হুসেনই পর্যটকদের বাঁচাতে নিজের জায়গা থেকে নড়েননি। বরং জঙ্গিদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। যদিএ শেষমেশ তাঁকে কাফের (বিশ্বাসঘাতক) বলে গুলি করে মেরে দেয় জঙ্গিরা। বুধবারই ফিরেছে হুসেনের দেহ। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার-সহ গোটা গ্রাম।