নিউজ ডেস্ক: কোনওভাবেই ছাড় পাবে না পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীরা। বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে খুঁজে বের করবে ভারত। জোরালো এবং স্পষ্টভাষায় হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi)। প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, মুখ বুঝে সন্ত্রাস সহ্য করার দেশ ভারত নয়। জঙ্গিদের শনাক্ত করে, খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে সরকার।
৪৮ ঘণ্টা আগে দেশে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়ে গিয়েছে। হামলার পর ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলি চার সন্দেহভাজন জঙ্গির স্কেচ, নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে। হামলায় যুক্ত চার জঙ্গি হল- আদিল, আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা। মূলচক্রী সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি এই জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম মাথা। ভারতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত সইফুল্লা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই চার জঙ্গিই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর সদস্য। তবে জঙ্গিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করলেও তাদের টিকি এখনও ছুঁতে পারেনি নিরাপত্তা বাহিনী। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে এসে হামলা চালিয়ে তারা আবার সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার চাদরে মোড়া জম্মু-কাশ্মীরে তারা কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকল, সেনা-পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পহেলগাঁওয়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছে গেল, বৈসরনের মতো নামী পর্যটনকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না কেন, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এতজনকে খুন করে তারা আবার নির্বিঘ্নে কীভাবে পালিয়ে গেল, এমন বহু প্রশ্নের এখনও কোনও উত্তর নেই। তবে ওরা কি এখনও এপারেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে?
সেনার চোখে ধূলো দিতে জঙ্গিরা ব্যবহার করেছিল বিশেষ অ্যাপ
পহেলগাঁওয়ে পাইনের জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তা চিনে রিসর্টে হামলার করার ক্ষেত্রে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। অ্যালপাইন কোয়েস্ট এনক্রিপ্টেড অ্যাপের সাহায্যে অপারেশন চালানো হতে পারে। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন সেনা ও গোয়েন্দা আধিকারিকরা। বৈসরন ভ্যালি অত্যন্ত দুর্গম। ঘন পাইনের জঙ্গলের ভিতরে কাজ করে না কোনও নেটওয়ার্ক। তবে সেখানে বিশেষভাবে সক্রিয় এই অ্যাপ। ইন্টারনেট ছাড়াও অবিরাম সংযোগ বজার রাখা যাবে। মনে করা হচ্ছে, অপারেশনের সময়েও জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে কথা চালিয়ে গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে এই অ্যাপ ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা।
কীভাবে কাজ করেছিল সেই অ্যাপ?
সময়ে ঘটনা ঘটেছে, বৈসরন ভ্যালিতে ঢোকার মুখের রাস্তায় পর্যটকদের পাশাপাশি, সাধারণ স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ছিলেন। ২০ মিনিট ধরে অপারেশন চালিয়েছিল জঙ্গিরা। কিন্তু পুলিশ বা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কোনও প্রত্যাঘাত আসার কোনও ভয় ছিল না তাদের। কারণ তাদের আরেকটা টিম সমানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মুভেমেন্টের ওপর নজর রাখছিল। সেই খবর তাদের কাছে দেওয়া হচ্ছিল। তাতেই নিশ্চিন্তে অপারেশ চালিয়ে গিয়েছে তারা। আর সেই সমস্ত কথোপকথন তারা চালিয়ে গিয়েছে এই সুনির্দিষ্ট অ্যাপের সাহায্যেই। সাধারণ মানুষ যে ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে থাকেন, তা করে থাকলে তথ্য তদন্তকারীদের হাতে চলে আসত। আর সেটা এড়াতেই বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করেছে জঙ্গিরা। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
এই ভয়াবহ জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের আত্মায় আঘাত করার দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে, তারা ছাড় পাবে না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই লুকিয়ে থাক, তাদের খুঁজে বের করে মারবে ভারত। শুধু তাই নয়, যারা এই সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দেয়, যারা আড়াল থেকে সাহায্য করে, তাদের যেটুকু অস্তিত্ব অবশিষ্ট আছে, সেটাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এই হামলা শুধু ওই পর্যটকদের উপর হামলা নয়। ভারতের আত্মায় আঘাত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে জঙ্গিরা। এমন শাস্তি দেব যে ওরা কল্পনাও করতে পারবে না।”
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে লস্কর কমান্ডার আবু মুসা ও আইএসআই কর্তাদের উপস্থিতিতে হামলার পরিকল্পনা হয়। জঙ্গিরা ট্রেকিং করে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের ধারণা, ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত কাশ্মীর সফরে হামলার ছক ছিল। কিন্তু সেই সফর বাতিল হওয়ায় এই পর্যটনকেন্দ্রকে নিশানা করে জঙ্গিরা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে।