নিউজ ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনার (Jammu Kashmir Pahalgam Terror Attack) দায় ইতিমধ্যে স্বীকার করেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্টেন্ট ফ্রন্ট। ঘাতক চার জঙ্গির ছবিও প্রকাশ্য এসেছে। গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, হামলার মূল পরিকল্পনা করেছিল লস্কর-ই-তইবার ডেপুটি চিফ সইফুল্লা খালিদ (Saifullah Khalid) ওরফে সইফুল্লা কসৌরি। কিন্তু সেই ব্যক্তিই এখন পাল্টা ভারতের ওপর দায় চাপাচ্ছে! সইফুল্লার দাবি, ভারতই পহেলগাম হামলার পিছনে রয়েছে।
কে এই সইফুল্লা?
নাম সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি। গোয়েন্দা সূত্রে অনুমান, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার মূল চক্রী ছিলেন তিনিই। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও অনেকে। ইতিমধ্যেই হামলার ঘটনার দায় নিয়েছে ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতির আবহে জন্ম হয়েছিল এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। সে সময় পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। আর সইফুল্লা লশকরের অন্যতম প্রধান। তাই টিআরএফ হামলা চালালেও পুরো পরিকল্পনাই করেছিলেন সইফুল্লা, এমনই মনে করা হচ্ছিল গোয়েন্দা সূত্রে। কিন্তু সে সব জল্পনা উড়িয়ে দিলেন সইফুল্লা নিজেই। জানালেন, পহেলগাঁওয়ে হামলায় কোনও ভূমিকাই ছিল না তাঁর। বললেন, ‘‘সব ভারতের নাটক!’’
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে সিসিএস বৈঠকে ভারত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সিন্ধু জল চুক্তি বন্ধ করা সহ অনেক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এর পর, লস্কর-ই-তৈয়বার ডেপুটি কমান্ডার সইফুল্লা কাসুরি একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তিনি বলেন, পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন যে এটি ভারতের ষড়যন্ত্র।
ভাইরাল ভিডিও
সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিয়ো। তাতে সইফুল্লাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘ভারত নাটক করছে। ওরা নিজেরাই এই হামলা করিয়েছে। পহেলগাঁওয়ে হামলার সঙ্গে পাকিস্তান বা তার কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগ নেই।’’
এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দু’মাস আগে একটি সভার আয়োজন করেছিল এই সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কসৌরি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাক সেনার সদস্যরা। ভারতবিরোধী বক্তৃতা দেওয়া হয় সেদিন। আর এই কর্মকাণ্ডের জন্য পাক সেনা ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে দায়ী করা হচ্ছে। সইফুল্লার ভারতবিদ্বেষী মনোভাব স্বাভাবিকভাবেই নতুন কিছু নয়। হাফিজ সইদ ঘনিষ্ঠ এই জঙ্গি নেতা এর আগে বহুবার ভারত বিরোধী মন্তব্য করে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতেও সইফুল্লার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলেই খবর। তাই সইফুল্লার এই বার্তা প্রকাশ্যে আসার পরই ভারতীয়রা ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছে। কেউ কেউ সরাসরি বলছে, ‘ভারতীয় সেনা অপেক্ষা করছে একে গুলি করে খতম করতে।’
সইফুল্লার অতীত, পাক সেনার সঙ্গে যোগ?
সইফুল্লার নাম বহুবার উঠে এসেছে ভারতবিরোধী ষড়যন্ত্রে। তিনি ভারতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দুই মাস আগে পাকিস্তানের পঞ্জাবের কাঙ্গলপুরে পাক সেনার একটি ব্যাটেলিয়নে বক্তৃতা করেন তিনি। ওই বক্তৃতায় ভারতীয় সেনার উপর হামলার ইন্ধন দেন বলে জানা গিয়েছে। এরপর খাইবার পাখতুনখোয়াতেও এক সভায় ভারতবিরোধী হুঙ্কার দেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে— যদি সরাসরি হামলার দায় না-ও নেন, তাহলে কী তাঁর কথাতেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল টিআরএফ?
তবে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করছে, ভিডিওটি ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তিমূলক প্রচার। হামলার তদন্তে এখন মূল ফোকাস সইফুল্লার যোগ ও টিআরএফ-এর নেতৃত্বের ওপর। সীমান্তপারে জঙ্গি কার্যকলাপ ও পাকিস্তানি সেনার মদত নতুন করে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত।